• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০১:১৮ অপরাহ্ন

অভিযোগ এমপির বিরুদ্ধে : রাজধানীর জুরাইনে যুবলীগ নেতার সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৯, ২০২২, ১০:১৯ অপরাহ্ন / ১৫৪
অভিযোগ এমপির বিরুদ্ধে : রাজধানীর জুরাইনে যুবলীগ নেতার সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা: রাজধানীর শ্যামপুরের জুরাইনে এক যুবলীগ নেতার সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারার অভিযোগ করা হয়েছে ঢাকা-৫ আসনের এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুর বিরুদ্ধে। জুরাইনের মুন্সিবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায় তিন শতাংশ সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চলছে ২০১৬ সাল থেকে। এমপির বিরুদ্ধে যার জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে তার নাম বদরউদ্দিন বদু। ওই সময় তিনি অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন ৯০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। বদুর সম্পত্তিতে তার ওয়ারিশরা কোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি করতে গেলেই বাধা দিচ্ছেন মনু ও তার সহযোগীরা। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। অভিযোগ দেওয়া হয়েছে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনারে (ডিসি) কাছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। কয়েকজন নেতা টেলিফোন করেছেন মনুকে। বদু পরিবারের জমি দখলের পাঁয়তারা থেকে বিরত থাকার নির্দেশও দিয়েছেন। তারপরও কাজ হচ্ছে না। তাই, নিজেদের সম্পত্তি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চেয়েছেন বদু পরিবারের সদস্যরা।

বদু পরিবারের সদস্যরা জানান, ভুয়া ভোটার তালিকা বাতিলের দাবিতে ১৯৯৫ সালের ২৭ আগস্ট নির্বাচন কমিশন অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ছিল আওয়ামী লীগের। ওইদিন রাজধানীর পান্থপথে সভা শেষে শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে একটি বিশাল মিছিল ফার্মগেট এলাকায় পৌঁছে। এ সময় যুবলীগ নেতা বদরউদ্দিন বদু সন্ত্রাসীদের গুলিতে ‘নিহত’ হন। এর ৪ দিন পরে বদুর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করতে যান শেখ হাসিনা। এখন স্থানীয় এমপি যে জমি দখলের পাঁয়তারা করছেন বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তখন ওই জমিতেই ছিল বদুর ঘর। সেই ঘরে বসেই তৎকালীন বিরোদীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সান্ত্বনা জানান বদুর পরিবারের সদস্যদের। ২০১৬ সালে ওই ঘর ভেঙে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর থেকেই সেই জমিতে দৃষ্টি পড়ে মনুর।

বদুর পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিষয়টি নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন বদুর বড় ভাই শেখ মো. নাজিমউদ্দিন। ওবায়দুল কাদের কথা বলেন এমপি মনুর সঙ্গে। সমস্যা সমাধানে মনুকে নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের। এ নির্দেশনা পাওয়ার পর নাজিমউদ্দিনকে মনু তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। পরে নাজিমউদ্দিন এলাকায় গিয়ে এমপি মনুকে ফোন দিলে তিনি গত বছরের ১৫ জুলাই বিকালে বিষয়টি নিয়ে বসার সময় নির্ধারণ করেন। নির্ধারিত সময়ে এমপি মনুকে নাজিমউদ্দিন ফোন দিলে তিনি বলেন, সন্ধ্যার পরে বসব। এরপর নাজিমউদ্দিনসহ বদু পরিবারের সদস্যরা মনুকে বারবার ফোন দিলেও তিনি (এমপি মনু) তাদের ফোন ধরেননি। তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে বিষয়টি আওয়ামী লীগ নেতাদের জানানো হলে এমপি মনু ভুক্তভোগী নাজিমউদ্দিন ও তার ছেলে শেখ নাজমুল হাসান পিংকুকে (বদুর ভাতিজা) গত বছরের ৩ অক্টোবর শ্যামপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদের কক্ষে বসে বিষয়টি সমাধান করার আশ্বাস দেন। নির্ধারিত সময়ে নাজিমউদ্দিন এবং পিংকুসহ তাদের স্বজনরা থানায় গেলেও মনু বা তার কোনো লোকজন থানায় যাননি। এরপর থেকে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না। বদুর বড় ভাই নাজিমউদ্দিন যুগান্তরকে আরও বলেন, আমাদের জায়গা জুরাইন মুন্সিবাড়ী এলাকার জুরাইন মৌজার ৪১৪ দাগে (জুরাইন-দয়াগঞ্জ সংযোগ সড়কসংলগ্ন)।আমাদের জমির পেছনে ৪১৩ দাগে এমপি মনুর জায়গা রয়েছে।

কিন্তু তিনি ২০১৬ সাল থেকে আমাদের জমিতে কোনো নির্মাণ কাজ করতে দিচ্ছেন না। কার্যত তিনি আমাদের জমি দখল করে রেখেছেন। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন, স্থানীয় কাউন্সিলর ও থানা পুলিশের কাছে বারবার অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাইনি। ওই সময় কাজী মনিরুল ইসলাম মনু ছিলেন যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০২০ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েন। নিরুপায় হয়ে মানববন্ধন করি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট দেই, লাইভ করি।

গত বছরের ১১ আগস্ট আমার ছেলে পিংকু বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে লাইভ করার পর তাকে নানা ধরনের ভয়-ভীতি দেখানো হয়। দেওয়া হয় হত্যার হুমকি। এ বিষয়ে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। এমপি মনু ও তার লোকদের অব্যাহত হুমকিতে আমরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি।

এ বিষয়ে ঢাকা-৫ আসনের এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু মোবাইল ফোনে বলেন-এসব অভিযোগ মিথ্যা, এরপরও যদি আপনারা নিউজ করেন তবে আইসিটি অ্যাক্টে মামলা করে দেব।