• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা : অভয়াশ্রমেই ইলিশ শিকার


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৬, ২০২২, ১২:১২ অপরাহ্ন / ৬৯
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা : অভয়াশ্রমেই ইলিশ শিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক,বরিশাল : ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মানছেন না বরিশালের জেলেরা। বরিশালের হিজলা, মুলাদি, মেহেন্দীগঞ্জ; চাঁদপুরের হাইমচর থেকে শুরু করে ভোলার তেঁতুলিয়া নদী পর্যন্ত শাখা নদী গুলো ও নদ-নদী অববাহিকায় ছোট ছোট নৌকা নিয়ে ইলিশ শিকার চলছে। অথচ এই এলাকা ইলিশের অভয়াশ্রম। এখান থেকে ধরা মা ইলিশ স্থানীয় কয়েকটি বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রিও হচ্ছে। এ ছাড়া এসব মাছ যাচ্ছে চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলায়।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, প্রতিবছরই নিষেধাজ্ঞার সময় চাঁদপুর-সংলগ্ন মেঘনার হাইমচর, বরিশালের হিজলা, মুলাদি মেহেন্দীগঞ্জ-সংলগ্ন মেঘনা, এর শাখা নদী ভোলার তেঁতুলিয়া, মেঘনাসহ বেশ কিছু এলাকায় জেলেরা ছোট অসংখ্য নৌকা নিয়ে ইলিশ ধরেন। এবারও আরও বেশি নৌকায় মাছ শিকার চলছে এসব এলাকায়। হিজলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের আবুপুর, হিজলা-গৌরবদি ইউনিয়নের খালিসপুর, জানপুর এলাকায় রাতে ইলিশের হাট বসছে। ২০১৯ সালে সরকার দেশের ষষ্ঠ অভয়াশ্রম হিসেবে এলাকাটি গেজেট ভুক্ত করে। বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ-সংলগ্ন মেঘনার শাখানদীগুলো এর আওতায় রয়েছে।

চাঁদপুর মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক মানিক মিয়া দেওয়ান বলেন, হিজলার গৌরবদি ইউনিয়নের পূর্ব পাড়ে মেঘনা নদীতে জানপুর নামের একটি শাখা খাল রয়েছে। এটি পূর্ব দিকে চাঁদপুরের হাইমচরের নীলকমল ইউনিয়নে এলেকমেন খাল নামে পরিচিত। এই খালে রাতে ইলিশ শিকারের জন্য নোঙর করে থাকে অন্তত ৫০০ নৌকা। এ ছাড়া বড় ট্রলারও রয়েছে অসংখ্য। হিজলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক চেয়ারম্যান এবং হাইমচর ইউপির এক সদস্য এসব অবৈধ মাছ শিকারের পৃষ্ঠপোষক। মানিক মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত বছরের চেয়েও এবার আরও বেপরোয়াভাবে মা ইলিশ ধরছেন জেলেরা।শাওড়া সৈয়দখালী পুলিশ ফাঁড়ির নিকটবর্তী এলাকায় পাহারায় ক্যাডার বাহিনী।প্রতি কেজি মাঝারি ইলিশের দাম ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা।

গত শুক্রবার সকালে হিজলা উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের মেঘনা নদীতে দেখা যায়, শাওড়া সৈয়দখালী পুলিশ ফাঁড়ির নিকটবর্তী এলাকায় দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ক্যাডার বাহিনী পাহারা বসিয়েছে। ক্যাডার বাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় মেঘনা নদীতে নির্ভয়ে জেলেরা মা ইলিশ শিকার করছেন। স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, জেলেদের কাছ থেকে প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিরা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে এসব পাহারার ব্যবস্থা করেছেন।এখান থেকে বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরার পর স্থানীয় আবুপুর ও আশুলিয়া আবুপুর হাটে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া লাছকাঠি, আবদা, জানপুর, চরকিল্লা, শাওড়া সৈয়দখালী, অন্তরবাম, ধূলখোলা লঞ্চঘাট, মেঘনা বাজার, কালিকাপুর, মৌলভিরহাট লঞ্চঘাট, পুরাতন হিজলা, বাবুগঞ্জ লঞ্চঘাটসহ আরও কয়েকটি স্থানে প্রকাশ্যে ইলিশ বিক্রির হাট দেখা যায়।

আবুপুর ও আশুলিয়া আবুপুর এলাকায় ইলিশের হাটে আসা অন্তত ১১ জন মাছ ক্রেতা জানান, নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে এখন। তবে দাম কমেনি। প্রতি কেজি মাঝারি ইলিশের দাম ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। ইলিশের পাশাপাশি অনেক পাঙাশ মাছও দেখা যায় এই বাজারে। শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে মাছের বড় চালানগুলো কিনে নিচ্ছেন।

আশুলিয়া আবুপুরের মৎস্য ব্যবসায়ী জয়নাল মিয়া জানান, সেখানে প্রতিদিন জোয়ারের ঠিক মাঝামাঝি সময়ে বাজার বসে। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার বিক্রি হচ্ছে এই বাজারে। প্রশাসনের কোনো নজরদারি না থাকায় নির্বিঘ্নেই এসব মাছ বিক্রি হচ্ছে।

আবুপুরের আরেক ব্যবসায়ী ছত্তার মাঝি জানান, এখানে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জের অন্তত ৩০টি স্থানে এভাবে প্রকাশ্যে ইলিশের বাজার বসে। এসব মাছ মাদারীপুর, শরীয়তপুর, চাঁদপুরের ব্যবসায়ীরা এসে পাইকারি কিনে নেন। পরে ইঞ্জিনবিশিষ্ট ট্রলার ও স্পিডবোটে করে নিয়ে যান।

অভিযান সফল হচ্ছে না: ১৩ অক্টোবর ভোরে মেঘনা নদীর খালিশপুর এলাকায় হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম পারভেজের নেতৃত্বে অভিযানে গেলে তাঁদের ওপর হামলা করেন সংঘবদ্ধ জেলেরা। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে মাহফুজ নামের এক পুলিশ কনস্টেবল হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় হিজলা থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করা হয়েছে। কিন্তু এতেও জেলেরা মা ইলিশ ধরা থেকে বিরত হননি, বরং আরও বেপরোয়া হয়ে পুরো মেঘনা ও অভয়াশ্রমে মা ইলিশ নিধন করছেন।

হিজলা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা এস এম পারভেজ বলেন, খোলাবাজারে ইলিশ বিক্রির বিষয়টি জানতাম না। এ ব্যাপারে অচিরেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার বলেন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সীমিত জনবল দিয়ে অভিযান চালাচ্ছি। কিছু স্থানে সমস্যা আছে। কী ভাবে মোকাবিলা করতে পারি, সে বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।

শাওড়া সৈয়দখালী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবদুর রহিম বলেন, আমরা নদীতে নামলে নদী ফাঁকা হয়ে যায়। পরে আবার জেলেরা নেমে পড়েন। জনবলের সংকট থাকায় অভিযান পরিচালনায় সফল হতে পারছি না। আমি ইলিশ বিক্রির হাটগুলোর ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মৎস্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি।