• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৮:৫৩ অপরাহ্ন

৭ শত কোটি টাকার ঋণ খেলাপী কোম্পানি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরীজ তথ্য জ্বালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারবাজার লুটপাটের পরিকল্পনা!


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ২, ২০২৩, ২:০০ অপরাহ্ন / ২৬৬
৭ শত কোটি টাকার ঋণ খেলাপী কোম্পানি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরীজ তথ্য জ্বালিয়াতির মাধ্যমে শেয়ারবাজার লুটপাটের পরিকল্পনা!

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাঃ শেয়ার বাজারে লুটপাটের ভয়াবহ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক ল্যাবরেটরীজ লিমিটেড। বিগত দিনে শেয়ারবাজারের অস্থিরতার কারণে দেশের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নিয়েছিলেন। অন্যের সম্পত্তিকে নিজের দেখানো সহ একাধিক ভয়াবহ প্রতারণার কৌশলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আবারো তেমনি পরিস্থিতির সম্মুখীন করতে যাচ্ছে এই প্রতারক কোম্পানিটি।

এশিয়াটিক ল্যাবরেটরীজ লিমিটেড একটি পাবলিক লিমিটেড ফার্মাসিটিক্যালস কম্পানি। কোম্পানিটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হতে ৭০০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি তালিকাভুক্ত থাকা সত্ত্বেও সম্প্রতিক পুঁজিবাজারে থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আই পি ও এর মাধ্যমে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ৯৫ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য ঢাকার একটি পাঁচ তরকা হোটেলে গত ২৪ অক্টোবর ২০২১ তারিখে রোড-শো এর আয়োজন করে এতে যোগ্য বিনিয়োগকারী ( এলিজিবল ইনভেস্টর) সংল্লিষ্টদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের সামনে কোম্পানির আর্থিক চিত্র, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়ে তুলে ধরেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনির আহমেদ সহ শীর্ষ কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠানটির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে আছে শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামক বিতর্কিত পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানিটি কে গত ৩১ আগস্ট ২০২২ বিডিংয়ের অনুমতি দেয়।কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ৯৫ কোটি টাকা তুলবে। তবে প্রায় শত কোটি টাকার সংগ্রহ কিংবা লুন্ঠন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয় ভয়াবহ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে। গুরুতর এই অভিযোগ সত্ত্বেও এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লি:এর আইপিও অনুমোদন প্রাপ্তি সহ সব ধরনের সহায়তা করে মার্চেন্ট ব্যাংক, বিএসইসি,অডিট ফার্ম একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অনুসন্ধানে জানা যায়, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে আইপিও ছাড়ার অনুমোদন গ্রহণের ক্ষেত্রে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড সম্পত্তির মূল্য দেখিয়েছে ১৪ থেকে ১৫ গুন অতিরিক্ত অসদুদ্দেশ্য বাস্তবায়নে চাহিদানুযায়ী আর্থিক প্রতিবেদনটি তৈরি করে দেন আশরাফ উদ্দিন অ্যান্ড কোং: নামের একটি অডিট প্রতিষ্ঠান কোম্পানির সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে ট্রেডিং শুরু হওয়ার কথা ছিল গত ১৬ই জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে। কিন্তু গত ১২ জানুয়ারি তারিখে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা একটা সংবাদ কোম্পানির সকল অপকর্ম তুলে ধরেন , না না জল ঘোলা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজএকচেঞ্জ কমিশন ১৫ জানুয়ারি ট্রেডিং অনুমোদন স্থগিত করতে বাধ্য হয়।

আমাদের অনুসন্ধানী টিম উক্ত ইস্যুয়ার প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক অবস্থা আর্থিক প্রতিবেদন ও বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকটি অসঙ্গতি খুঁজে পায়

তেজগাঁও ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ার একটি প্লট তেজগাঁও ভূমি অফিসের রেজিস্ট্রিকৃত ভূমি ২০০৯ সালের ৩৩৫২ দলিল নং ২০১৪ সালে দেখানো হয়েছে যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভূল তথ্য দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সামিল। উক্ত ভূমি সাধারণ দলিলি মূল্যের চাইতে ১৪-১৫ গুন বর্ধিত দেখানো হয়েছে। কোম্পানির বিভিন্ন হিসাব বর্ষে আয়-ব্যয় দেখানো আছে তা প্রকৃত আয়- ব্যয়ের চাইতে ন্যূনতম ২০ গুণ বৃদ্ধি করে দেখানো হয়েছে। কোম্পানিটি তার বিভিন্ন হিসাব বর্ষের আয়কর যথাযথভাবে পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়।

সংবাদ মাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের এবং ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফ আর সি) বেশকিছু কর্মকর্তা এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের এই প্রতারণার সাথে যুক্ত রয়েছেন। খোদ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার কর্মকর্তাদের এমন প্রতারণায় জড়িত থাকার বিষয়টি দেশের শেয়ার বাজারের জন্য অশনি সংকেত হিসবে দেখা দিবে। একাধিক শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এমন প্রতারণার কারণে দেশের পুঁজিবাজার বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, জেনে শুনে বুঝে বিনিয়োগ করা উচিত।

এমন মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হয়রানি ও অর্থ আত্মসাতের মত গর্হিত কাজ করা হলে বিগত দিনের মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তাদের সর্বোচ্চ আস্থা হারাবেন এমনটাই আশঙ্কা করা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে তাদের যথাযথ দৃষ্টি দিয়ে পুঁজিবাজারের আসন্ন প্রতারণা ঠেকানো উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।