• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৫ পূর্বাহ্ন

২১ শে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে বেনাপোল নো-ম্যানস ল্যান্ডে দুই বাংলার মিলনমেলা


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ২১, ২০২৩, ১০:৫৫ অপরাহ্ন / ১৪০
২১ শে ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে বেনাপোল নো-ম্যানস ল্যান্ডে দুই বাংলার মিলনমেলা

খোরশেদ আলম, বেনাপোল, যশোরঃ ২১ শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” এদিনটি বাংলাদেশ সহ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ তথা সমস্ত বাংলা ভাষাভাষী ব্যবহারকারী জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এটি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও পরিগনিত। বাঙালি জনগণের ভাষা আন্দোলনের মর্মন্তুদ ও গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

১৯৫২ সালের এই দিনে বাংলা’কে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে অনেক তরুণ শহীদ হন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো রফিক, জব্বার, শফিউর, সালাম, বরকত সহ অনেকেই। তাই এ দিনটি শহীদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
অপরদিকে, ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারী বিশ্বব্যাপী “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে পালন করা হয়।

সারা বিশ্বের ন্যায় ৯৯ শতাংশ বাংলা ভাষাভাষী মানুষের দেশ, বাংলাদেশে দিবসটি যথাযথ ভাবে পালিত হচ্ছে। তাই এ উপলক্ষে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল সীমান্ত ঘীরে এপার বাংলা-ওপার বাংলা’র বাংলা ভাষাভাষী মানুষ উৎসাহ, আমেজে মেতে উঠেন। বৃহৎ “মিলন মঞ্চ” তৈরী করা হয় নো-ম্যানসল্যান্ডে, বাসন্তি ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে বেনাপোল চেকপোষ্ট এলাকা জুড়ে, শার্শা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনা অনুষ্ঠান, কবিতা আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ দিনব্যাপি নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয় এখানকার মিলন মেলায়।

২১ শে ফেব্রুয়ারী তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে, বেনাপোল চেকপোষ্টে নির্মানাধীন বৃহৎ ঐ মিলন মঞ্চের আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন এপার বাংলার প্রতিনিধি- প্রধান অতিথি-স্বপন ভট্টাচার্য্য, এমপি (প্রতিমন্ত্রী,স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রনালয়)।
বিশেষ অতিথি-৮৫, যশোর-১ শার্শা আসনের সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন, মোঃ তমিজুল ইসলাম খান (যশোর জেলা প্রশাসক), প্রলয় কুমার জোয়ারদার (পুলিশ সুপার, যশোর), আব্দুল হাকিম (কমিশনার,কাষ্টমস হাউজ, বেনাপোল), লেঃ কর্ণেল আহম্মেদ হোসেন জামিল, সিও (৪৯ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) যশোর পক্ষে উপস্থিত হন সেকেন্ড ইন কমান্ড, মেজর সেলিমুদ্দোজা সেলিম, শার্শা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান-বীরমুক্তি যোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু, নারায়ন চন্দ্র পাল, নির্বাহী অফিসার, শার্শা উপজেলা পরিষদ, আব্দুল জলিল,পরিচালক (ট্রাফিক প্রশাসন, বেনাপোল স্থলবন্দর), নিশাত আল নাহিয়ান, সহকারী পুলিশ সুপার, নাভারণ সার্কেল, যশোর ও অধ্যক্ষ ইব্রাহীম খলিল (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, শার্শা উপজেলা আ.লীগ।

এ ছাড়াও আরও অংশ নেন এ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম, সাবেক সাংসদ, ঝিকরগাছা, যশোর। আবু সালেহ আহম্মেদ মিন্টু, সদস্য, যশোর জেলা পরিষদ, বেনাপোল পোর্টথানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ কামাল হোসেন ভূঁইয়া, শার্শা থানা অফিসার ইনচার্জ(ওসি) আকিকুল ইসলাম।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, আ: লীগ দলীয় অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও অঙ্গ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠন এবং সাংবাদিকগণ সহ স্থানীয় সকল শ্রেণী পেশার মানুষ।
বাংলা ভাষাভাষির এই মঞ্চে প্রথমে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরে শার্শা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিথিদেরকে “সন্মাননা উত্তরীয়” দিয়ে বরণ করে নেন ৮৫, যশোর-১শার্শা আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন।

উক্ত মিলনমেলা’র মঞ্চে প্রধান অতিথি স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ। মায়ের ভাষার দাবিতে বাঙালির আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর গৌরবময় এইদিন। বাঙালীর আত্মগৌরবের স্মারক অমর একুশের এদিনে জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে মহান ভাষা শহীদদের, যাদের আত্মত্যাগে আমরা পেয়েছিলাম মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার। যাদের ত্যাগে বাংলা বিশ্ব আসনে পেয়েছে গৌরবের উচ্চাসন। মাথা নত না করার চির প্রেরণার অমর একুশের এ দিনে সারা বিশ্বের কোটি কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে একুশের অমর শোকসংগীত “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি,আমি কি ভুলিতে পারি”।
ওপার বাংলা (ভারত) এর সাংস্কৃতিক মঞ্চে অংশ নেওয়া অতিথিরা হলেন- প্রধান অতিথি- শ্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (মাননীয় মন্ত্রী,পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ভারত)। বিশেষ অতিথি-শ্রীমতি বীনা মন্ডল (বিধায়ক, সভাধিপতি, উত্তর ২৪ পরগুনা জেলা পরিষদ, শ্রী বিশ্বজিৎ দাস(বিধায়ক, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ভারত), শ্রী গোপাল শেঠ(পৌর প্রধান, বনগাঁ পৌরসভা), শ্রীমত্যা মমতা ঠাকুর(প্রাক্তন সংসদ,বনগাঁ লোকসভা),শ্রী শ্যামল রায়(অধ্যক্ষ,উত্তর ২৪ পরগুনা জেলা পরিষদ), শ্রীমতি জ্যোৎস্না আঢ্য(উপ-পৌরমাতা, বনগাঁ পৌরসভা), শ্রী গোবিন্দ দাস(সভাপতি, গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতি), শ্রী মৌমেন দত্ত(দলনেতা ও কর্মাধ্যক্ষ, বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতি), শ্রী প্রসেনজিৎ ঘোষ(প্রধান,ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত),শ্রীমতি দেবারতি মুখোপাধ্যায়(বিশিষ্ঠ সাহিত্যিক), শ্রী স্বপন চক্রবর্তী(বিশিষ্ঠ সাহিত্যিক), শ্রী কান্তিময় ভট্টাচার্য্য (বিশিষ্ঠ সাহিত্যিক), শ্রী কার্ত্তিক নাথ(বিশিষ্ঠ সাহিত্যিক), শ্রী সমরেশ মূখার্জী (বিশিষ্ঠ সাহিত্যিক), শ্রী সীমান্ত মৈত্র (বিশিষ্ঠ সাংবাদিক), শ্রী ব্রতীন দাস (বিশিষ্ঠ সাংবাদিক)।
বিঃদ্রঃ বিশ্বে মহামারির কারণে এবার নিজ নিজ দেশের অভ্যন্তরে বাংলা ভাষাভাষি “মিলন মঞ্চ” নির্মাণ করা হয়। তবে, ওপার বাংলার নেতৃবৃন্দের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ সেখানকার মঞ্চে যান এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করে পুণরায় এপার বাংলায় ফিরে আসেন।

অনুষ্ঠানে যশোর উদিচী শিল্পি গোষ্ঠী এবং ঢাকা থেকে আগত সংগীত শিল্পি লুইপাসহ অন্যন্য শিল্পিরা সংগীত পরিবেশন করেন।