• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:২৭ অপরাহ্ন

র‍্যাব পুলিশ ডিবির পোশাক অপরাধীরা পাচ্ছে কোথায়?


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ৪, ২০২৩, ১০:৫৭ অপরাহ্ন / ১৪১
র‍্যাব পুলিশ ডিবির পোশাক অপরাধীরা পাচ্ছে কোথায়?

এম রাসেল সরকারঃ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু কৌশল রপ্ত করে অপরাধে জড়াচ্ছে কয়েকটি চক্র। বিশেষ করে অপহরণ, ডাকাতি, প্রতারণা, ছিনতাইয়ের জন্য বিভিন্ন বাহিনীর ছদ্মবেশ নিচ্ছে চক্রের সদস্যরা। চক্রের মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাকরিচ্যুত কিছু সদস্যও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় কিংবা তাদের পোশাক, ডিবি পুলিশের জ্যাকেট পরে সরকারের নকল কর্মকর্তা সেজে অপহরণ, ডাকাতি ও নগদ অর্থ ছিনতাইসহ নানান অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এসব অপরাধী। এতে বদনাম হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থারও। সাম্প্রতিক সময়ের এমন কিছু ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে— অপরাধীরা বিশেষ বাহিনীর পোশাক, হ্যান্ডকাফ, জ্যাকেট, ব্যাজ ও সিগন্যাল লাইটসহ নানা সরঞ্জাম পাচ্ছে কোথায়?

ডিবি বলছে, সারা দেশে ২০টি চক্র ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি করছে। একেকটি দলে কাজ করে ৮ থেকে ১০ জন। বিশেষ কারণে চাকরিচ্যুত বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পুলিশের বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করে এসব চক্র গড়ে তোলে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে এসব অপকর্ম চালায় তারা। আগের রেখে দেওয়া পুরাতন ইউনিফর্ম, সরঞ্জাম অপরাধ সংঘটনে ব্যবহার করে তারা। আবার কেউ কেউ দোকান-মার্কেট থেকেও এসব পোশাক-সরঞ্জাম সংগ্রহ করে বলে তথ্য রয়েছে। সম্প্রতি এ চক্রের কয়েকটি গ্রুপকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য পায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি।

গত ১৭ জুন ক্যান্টনমেন্ট থানার জিয়া কলোনির সামনে ডিবি পরিচয়ে ডাকাত দলের সদস্যরা বিকাশের এক এজেন্টকে গাড়িতে তুলে নেয়। এ সময় তাদের পরনে ডিবি লেখা পোশাক ছিল। তারপর হাত, পা ও চোখ বেঁধে মারধরের পাশাপাশি সঙ্গে থাকা ১৩ লাখ টাকা লুট করা হয়। পাশাপাশি মানিব্যাগে থাকা ১৯ হাজার টাকা এবং বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে ৩৭ হাজার টাকা তুলে নেয় তারা। পরে বিকাশের ওই এজেন্টকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়া এলাকায় ফেলে যায় তারা। এ ঘটনায় গত ২৪ জুন রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেন বিকাশের ওই এজেন্ট। প্রযুক্তির সহায়তায় এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। পরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার মৌচাক এলাকায় অভিযান চালিয়ে শহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর ডেমরা থেকে আরও ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়। একই দিন খিলক্ষেত থানার ৩০০ ফুট সড়ক এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে আরও ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

এর আগে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একদল লোক গত ৬ এপ্রিল সন্ধ্যার পর গাজীপুর মহানগরের দেশিপাড়া এলাকার জ্যাক ব্যাটারির গোডাউনে প্রবেশের চেষ্টা করে। কারখানায় হত্যা মামলার আসামি রয়েছে, এমনটা বলে কর্মচারীদের গেট খুলতে বলে। গেট খুলতে দেরি হওয়ায় ডাকাতরা কৌশলে নিচের ছিটকানি খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। তখন আসামি শনাক্তের কথা বলে ডাকাতরা কর্মচারীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। পরে এক এক করে প্রত্যেককে দোতলার ঘরে নিয়ে হাত-পা-মুখ বেঁধে মারধর করেন তারা।পরে গোডাউনে ট্রাক ঢুকিয়ে ১৩৯টি ব্যাটারি, ৩ লাখ টাকা, কর্মচারীদের ১৪টি মোবাইল ফোন, সিসিটিভি ক্যামেরার একটি ডিভিআরসহ ১৮ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় তারা। এ ঘটনার পর ৩৬টি ডাকাতি মামলার আসামি মিজানুরকে টঙ্গীর কলেজ গেট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মিজানুরকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়ে এ চক্রের আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। অভিযানকালে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি ট্রাক, ডিবি পুলিশের একটি জ্যাকেট, একটি খেলনা পিস্তল, মেট্রোপলিটন পুলিশের পোশাক, পিটি সু, টুপি ও বেল্টসহ ছয়টি ককটেল উদ্ধার করা হয়।

তার আগে গত ১৭ এপ্রিল রংপুরের গঙ্গাচড়ায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে হাতকড়া পরিয়ে এক যুবককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় মাসুদ রানা (২৪) নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে গ্রেফতার করা হয়। মাসুদ রানা রংপুর রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স থেকে প্রেষণে পঞ্চগড় পুলিশ লাইনসে কর্মরত ছিলেন। সেনাবাহিনীর পরিচয়ে প্রতারণার অভিযোগে চলতি বছরের ১৯ মে শুভ নামে একজনকে গ্রেফতার করে র‍্যাব-৪। পরে র‍্যাব বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গোপনে র‍্যাব জানতে পারে এক ব্যক্তি নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন চাকরি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে প্রতারণা করছে। এরপর র‍্যাব তাকে মিরপুর মডেল থানা এলাকার এক প্রবাসীর বাড়ি থেকে আটক করে। আটকের পর তার কাছ থেকে সেনাবাহিনীর পোশাক, ব্যাজ ইত্যাদি জব্দ করে। প্রতারক তৌহিদ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত প্রতারণা করে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে স্বীকার করেন। সাম্প্রতিক সময়ে এভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক ব্যবহার করে এমন আরও কিছু ঘটনা লোকজনের সামনে এসেছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) রাজিব আল মাসুদ বলেন, বিভিন্ন সময়ে পুলিশ, র‍্যাব, সিআইডি থেকে চাকরিচ্যুত হওয়া বিভিন্ন কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পুলিশের বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করে এসব চক্র গড়ে তোলে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে এসব অপকর্ম চালায় তারা। তাদের কাছে থাকা পুরাতন ইউনিফর্ম, সরঞ্জামগুলো তখন অপরাধের কাজে ব্যবহার করে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ ও ডিবির পোশাক সুনির্দিষ্ট মার্কেট এবং নির্ধারিত স্থান ও ব্যক্তির কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। রাজধানীর পলওয়েল মার্কেট থেকে পুলিশের পোশাক তৈরি করা হয়। এছাড়া একই ধরনের কাপড় রাজধানীর ইসলামপুরেও পাওয়া যায়। চাইলে এরকম কাপড় সংগ্রহ করা যায়।

এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চাকরিচ্যুতির পরও তাদের ওপর নজরদারি করা হয়। অপরাধ করলে র‍্যাবে কারও স্থান নেই। যে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে পুলিশের সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, এসব ঘটনা অনেক আগেই থেকে চলছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্থাগুলোকে আরও সচেতন হতে হবে। যেখান থেকে এসব পোশাক তৈরি করা হয়, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এসব পোশাক যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া বাইরে না যায়, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সবসময় তদারকি করতে হবে। তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক অন্য কোথাও যাচ্ছে কিনা জানা যাবে।

এসব অপকর্ম যারা করে তারা সুযোগ পেলে করবেই। সব জায়গায় খারাপ লোক-ভালো লোক থাকে। কিছু দুষ্কৃতকারী বসেই থাকে এমন কাজ করার জন্য।