• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৭:১০ অপরাহ্ন

রেলের কোনো প্রকল্পই সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া শেষ হচ্ছে না


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ১৪, ২০২৩, ৯:৫৮ পূর্বাহ্ন / ১৬৬
রেলের কোনো প্রকল্পই সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া শেষ হচ্ছে না

এম রাসেল সরকারঃ রেল খাতের উন্নয়নে সরকার বিপুল টাকা ব্যয় করেছে। মেগাপ্রকল্পের মাধ্যমে রেলকে ঢেলে সাজাতে চেয়েছে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়কারীদের অদক্ষতায় রেলের কোনো প্রকল্পই সময় ও ব্যয় বাড়ানো ছাড়া শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে বর্তমানে ৩৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, কক্সবাজারে নতুন রেলপথ নির্মাণ, যমুনা নদীতে রেলের জন্য স্বতন্ত্র সেতু নির্মাণসহ নতুন রেলপথ ও সেতু নির্মাণ, বিদ্যমান রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন, রোলিং স্টক সংগ্রহ ও রেলওয়ের কারিগরি মানোন্নয়ন করা হচ্ছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন করতে পারেনি রেলওয়ে। ২০টির বেশি প্রকল্পে এক বা একাধিকবার সংশোধন করে ব্যয় ও মেয়াদ বা দুটোই বাড়ানো হয়েছে। আর যেসব প্রকল্প এখনো সংশোধন হয়নি, সেগুলোও রয়েছে সংশোধনের অপেক্ষায়। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলওয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে দুরবস্থার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা, বিশেষ করে প্রকল্প পরিচালকদের অদক্ষতাকে দায়ী। সম্প্রতি রেল ভবনে অনুষ্ঠিত এক সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদনে রেলওয়ের প্রকল্প ব্যবস্থাপনা দক্ষতায় ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয়। সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ের সুনাম ক্ষুণ হচ্ছে বলেও মন্ত্রণালরে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সূত্র জানায়, সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্প গুলোর একটি হচ্ছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণ। প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৬ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। অনুমোদনের সময় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয় ৪২ মাস। সে হিসেবে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হয়ওয়া কথা।

কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটির মেয়াদ ৩০০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৬৮ মাসে উন্নীত করা হয়। আর ৮৭৪ শতাংশ বাড়িয়ে রেলপথটির নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। তাছাড়া ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়াল গেজ লাইন ও টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে নতুন আরেকটি ডুয়াল গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ৩৬ মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও বর্তমানে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ১৯২ মাসে উন্নীত করা হয়েছে। সে হিসেবে মেয়াদ বৃদ্ধির হার ৪৩৩ শতাংশ। আর ৮৪৮ কোটি টাকার প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। ব্যয় বৃদ্ধির হার প্রায় ২৯৪ শতাংশ। একইভাবে প্রায় ১৩ বছর ধরে খুলনা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত নতুন একটি রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ৩৭ মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও প্রকল্পটি শেষ করতে লেগে যাচ্ছে ১৬৭ মাস। সে হিসেবে মেয়াদ বৃদ্ধির হার ৩৫১ শতাংশ।

একইভাবে প্রায় ১৪৮ শতাংশ বেড়ে রেলপথটির নির্মাণ ব্যয় বর্তমানে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। বœ সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া আখাউড়া-লাকসাম ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন রেলপথটির মেয়াদ বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। ৭২ মাসের প্রকল্পটির মেয়াদ ঠেকেছে ১২৬ মাসে। তবে ব্যয়ের দিক দিয়ে ব্যতিক্রম উদাহরণ তৈরি করেছে এ প্রকল্প। মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) তুলনায় ১৫ দশমিক ১৩ শতাংশ অর্থ কম ব্যয় হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, রেলের প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য মোটা দাগে ১০টি কারণ চিহ্নিত করা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও দক্ষ জনবলের ঘাটতি। এর বাইরে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার দুর্বলতা, ডিপিপি অনুমোদন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা, ব্যয় প্রাক্কলনে দুর্বলতা, কেনাকাটা প্রক্রিয়ায় জটিলতা, উন্নয়ন সহযোগীদের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় দীর্ঘসূত্রতা এবং বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ সমন্বয়ে জটিলতা। বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রকল্পগুলো থেকে প্রত্যাশিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নও বিলম্বিত হচ্ছে। মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি চাপ বাড়াচ্ছে দেশের জাতীয় বাজেটে।

এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বারবার মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধি সম্পর্কে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবীর জানান, বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। যেসব কারণে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে, সেগুলো আমরা এরইমধ্যে চিহ্নিত করেছি এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও উদ্যোগ নিয়েছি। একইভাবে প্রকল্পের ব্যয় যেন না বাড়ে সে বিষয় নিয়েও মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমরা চাই নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত ব্যয়ের মধ্যেই সব ধরনের প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে।