• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন

রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত


প্রকাশের সময় : জুলাই ২০, ২০২৩, ৬:০০ পূর্বাহ্ন / ৯২
রাষ্ট্রীয় পাটকলগুলো ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত

এম রাসেল সরকারঃ তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ২৫টি পাটকল।লোকসানের কারণে এগুলো একযোগে বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর থেকে এগুলো বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে ইজারা নিতে আগ্রহী হলেও ফের সেখানে পাটকল স্থাপনে আগ্রহ কম বেসরকারি উদ্যোক্তাদের। ফলে বন্ধ পাটকলগুলোর ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। তবে আগ্রহী উদ্যোক্তা না পাওয়ায় নীতিমালা শিথিল করেছে বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন (বিজেএমসি)।

সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা এখন থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ইজারা নিয়ে পাট, পাটজাত পণ্য বা টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদন করতে পারবেন। পাট ও টেক্সটাইল দু ক্ষেত্রেই তারা ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজে কাজ করতে পারবেন।

একই সঙ্গে ইজারার মেয়াদ ১০ বছর বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়েছে। সম্প্রতি বিজেএমসি’র তত্ত্বাবধানে থাকা নয়টি পাটকল বেসরকারি খাতে পাটকল ইজারা দেয়ার জন্য প্রণীত একটি আন্তর্জাতিক দরপত্রে পূর্বের নীতিমালা সংশোধন-পূর্বক এসব কথা বলা হয়েছে। জানা যায়, এর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে শুধুমাত্র পাট বা পাটজাত পণ্য উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছিল বিজেএমসি। এ ক্ষেত্রে ইজারার মেয়াদ ছিল ২০ বছর। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের তেমন সাড়া না পাওয়ায় নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে।

বিজেএমসি’র একটি সূত্র মতে, বর্তমান পাটকলগুলোতে শুধুমাত্র পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনের জন্য বেসরকারি খাতের কাছ থেকে খুব কম সাড়া পাওয়া গেছে। এখন উদ্যোক্তারা শুধু পাট ও পাটজাত পণ্যে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক নয়। এ কারণে বস্ত্রশিল্প স্থাপনের অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জানা যায়, শুধু পাটকল করার শর্ত থাকার কারণে ২৫টি বন্ধ মিলের মধ্যে গত ছয় বছরে মাত্র ৯টি মিল ইজারা হয়েছে। চার দফা দরপত্র দিয়েও পাটকল করার জন্য আগ্রহী উদ্যোক্তা পাওয়া যায়নি। এসব বিষয়ে সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও সাধারণ সেবা) নাসিমুল ইসলাম বলেন, বারবার পাটকল বেসরকারি খাতে দেওয়ার চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি উদ্যোক্তাদের। সে কারণে এখন টেক্সটাইল করারও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এখন দেখা যাক, এবার বোঝা যাবে। নতুন করে দশটি মিলের ইজারার জন্য দরপত্র দেওয়া হয়েছে।

নাসিমুল ইসলাম বলেন, আগে যারা পাটকল হিসেবে মিল ইজারা নিয়েছে, তারা চাইলেও এখন সেগুলো টেক্সটাইলে রূপান্তর করতে পারবেন। এ বিষয়ক শর্তাবলি ও রেফারেন্সে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বেসরকারি পাটকল লাভের মুখ দেখলেও বিজেএমসির পাটকলগুলো বছরের পর বছর লোকসান গুনছিল। লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে পাটকল বন্ধ করে দেয় সরকার।

এরপর ইজারা প্রক্রিয়া শুরু করার প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রণয়নের শুরুতে দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকলের ইজারা নেওয়ার ইচ্ছে ব্যক্ত করে। এ ছাড়া ভারত ও যুক্তরাজ্যের কিছু উদ্যোক্তা পাটকলগুলোর ইজারা পেতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সরকারের নানা শর্ত ও মধ্যমেয়াদি ইজারার সময়ের কারণে পরে আগ্রহে ভাঁটা পড়ে অনেক প্রতিষ্ঠানের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলগুলোকে ইজারা দিয়ে বেসরকারি খাতে পুনরায় চালুর করার প্রক্রিয়ার শুরুতে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের যথেষ্ট চাহিদা থাকা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং পরবর্তীতে ডলার সংকটের কারণে ইজারা দেয়ার গতি কমেছে। গত ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রণয়নের শুরুতে প্রাণ, বে ও আকিজ গ্রুপসহ দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকলের ইজারা নেয়ার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছিল বলে জানা যায়। এ ছাড়া ভারত ও যুক্তরাজ্যের কিছু উদ্যোক্তা পাটকলগুলোর ইজারা পেতে আগ্রহী ছিল।

জানা যায়, দুই বছর আগে শুরু হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি পাটকল উৎপাদনে যেতে পেরেছে। এতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। ইউনিটেক্স গ্রুপের অধীনে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কেএফডি জুট মিল; বে গ্রুপের অধীনে নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলস এবং রশিদ গ্রুপের অধীনে জাতীয় জুট মিলসের কার্যক্রম চলছে। কেএফডি জুট মিল ও বাংলাদেশ জুট মিলের পণ্য বর্তমানে রপ্তানি করা হচ্ছে। এ ছাড়া রশিদ গ্রুপ কলে তৈরি পণ্য (বিশেষ করে বস্তা) নিজেরাই ব্যবহার করছে।

বিজেএমসি সূত্রে জানা যায়, সামনেই ছয়টি পাটকলের উৎপাদন পুনরায় শুরু করার জন্য একটি যৌথ পরিদর্শন হবে। বিজেএমসি ও নির্বাচিত উদ্যোক্তাদের এ যৌথ পরিদর্শন শেষে সেগুলো হস্তান্তর করা হবে। এছাড়া খুলনা ও চট্টগ্রাম জোনে তিনটি পাটকলের জন্য তিনজন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা বাছাই করা হয়েছে। ‘মিলস ফার্নিশিং লিমিটেড’ নামক চট্টগ্রাম জোনের একটি নন-জুট মিল ইজারা দেয়ার জন্য ‘ফোর এইচ অ্যাপারেল’-কে নির্বাচন করা হয়েছে; দৌলতপুর জুট মিলের জন্য ‘ইউনি ওয়াল্ডর্’ এবং যশোর জুট মিলের জন্য ‘আকিজ জুট মিল’-কে বেছে নেয়া হয়েছে।

কিছুদিন আগেই কোম্পানিগুলোকে বাছাই করেছে কর্পোরেশন। বিজেএমসি-কে ২৪ মাসের ভাড়া পরিশোধ করার পর কলগুলো তাদেরকে হস্তান্তর করা হবে। উল্লেখ্য, লোকসান ও অত্যধিক উৎপাদন খরচের কারণে ২০২০ সালের ১ জুলাই ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল একযোগে বন্ধ করে দেয় সরকার। সেসময় প্রায় ২৫ হাজার কর্মচারী ছাঁটাই করা হয়। পরবর্তীতে বন্ধ পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২৫টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকলের মধ্যে ১৭টি ইজারা দেয়ার জন্য ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রথম আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয়।

দরপত্রে শর্ত ছিল, একজন ইজারাদার শুধুমাত্র পাট, পাটজাত পণ্য ও পাটের-বৈচিত্র সম্বলিত পণ্য উৎপাদন করতে এসব পাটকল ব্যবহার করতে পারবেন। বর্তমানে তৃতীয় দরপত্র চলছে, কিন্তু এখনও নয়টি পাটকল ইজারা দেয়া বাকি। রাষ্ট্রায়াত্ত পাটকলে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অনাগ্রহের কারণ মিলগুলোর দুরবস্থা ও সরকারের নানা শর্তের বেড়াজাল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জুট মিল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আ. বারিক।

তিনি বলেন, পাটগুলো টেক্সটাইলে দিয়ে সম্পূর্ণ পাটখাতকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা হচ্ছে। টেক্সটাইলগুলো বিদেশ থেকে তুলা এনে সুতা বানাবে। দেশের পাটচাষিরা দাম না পেয়ে পাট উৎপাদন বন্ধ করে দেবে। এসব মিল পুনরায় চালু করে পাটের যে উন্নয়নের সম্ভাবনা তা নষ্ট হবে বলে মনে করছেন তিনি।