• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৩ অপরাহ্ন

রাজশাহী তথা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিলুপ্ত প্রায় গরু মহিষের গাড়ি


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১১, ২০২৩, ২:২৩ অপরাহ্ন / ২১২
রাজশাহী তথা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিলুপ্ত প্রায় গরু মহিষের গাড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক,চাঁপাইনবাবগঞ্জঃ বাঙালির ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক গরু মহিষের গাড়ি, কালের বিবর্তন আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন বিলুপ্তর পথে। এক সময় গরু মহিষের গাড়িতে করে ধন পাট হাট বাজারে নিয়ে আসা হত। এখন হাট বাজারে দুরের কথা গরু মহিষের গাড়ি খুঁজে পাওয়াও চোখে পড়া মুসকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গরুর গাড়ি নিয়ে নিয়ে রয়েছে গান-ওকি গাড়িয়াল ভাই হাকাও গাড়ি তুই চিলমাড়ির বন্দরে। অথবা আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে…কিংবা আস্তে চালাও গাড়ি রে গাড়িয়াল ধীরে চালাও গাড়ি আর এক নজর দেখিয়া নেও মোর সোনা বাপের বাড়ি।গরু-মহিষ কিংবা ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে এমন সব পুরনো দিনের গানগুলো এখনও মানুষের মন-প্রাণে নাড়া দিয়ে যায়। এসব হারানো দিনের গানগুলো আজও জনপ্রিয় থাকলেও আধুনিকতার ছোয়া ও কালের গর্ভে বিলুপ্ত প্রায় গরু-মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ি।

রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চল যেমনটা গোটা দেশে বিখ্যাত তেমনী রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের গরুর গাড়িরও এ অঞ্চলের মানুষের জনপ্রিয়। কিন্তু আধুনিকতার ছোয়ায় কালের গর্ভে দিন দিন রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে যেন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ি। গাড়িতো দূরে থাক আধুনিকতার যাতাকলে গরু, মহিষ ও ঘোড়ার সংখ্যাও কমে গেছে।

অঞ্চলের অনেক জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সবকটি উপজেলায় এক সময় গ্রামগঞ্জের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী বাহন ছিল গরু, মহিষের ও ঘোড়ার গাড়ি। প্রযুক্তির কারণে এখন হারিয়ে যাচ্ছে গরু কিংবা ঘোড়ার গাড়ি ও গাড়িয়াল পেশা। দিন আর সময় বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে এখন এসব গাড়ি স্থান পেয়েছে ছড়া কবিতা সংবাদপত্র ও বিভিন্ন বইয়ের পাতায়। তবে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বেশ কিছু চরাঞ্চলের গ্রামসহ কিছু কিছু জায়গায় এখনোও দেখা মেলে গরু-মহিষ আর ঘোড়ার গাড়ি। এসব গাড়ি যারা চালান তাদের বলা হয় গাড়িয়াল। তবে পেশাদার গাড়িয়াল খুঁজে পাওয়া এখন দুষ্কর।

রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক দিলু বলেন, আধুনিক সভ্যতায় ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে। সে কারণে শহরের ছেলে মেয়েদের সঙ্গে সঙ্গে এখন গ্রামের ছেলে মেয়েরাও গরুর গাড়ির শব্দটির সঙ্গে অপরিচিত হয়ে উঠেছে। তিনি আরো বলেন, আসলে আমরা যারা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতি প্রেমী আছি সবাই চাই আমাদের আদী ঐতিহ্যবাহী সব কিছু টিকে থাকুক। তবে বাস্তবতা সম্পুর্ণ ভিন্ন, বিশ্বায়নের যুগে সর্বত্র পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। ফলে এখন আর গরু,মহিষ,ঘোড়ার গাড়ি দেখা যায় না।

এই গাড়ি নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলো তারাও পেশা বদল করেছে উন্নত প্রযুক্তির কারণে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ঐতিহ্যবাহী এসব গাড়ি। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো বইয়ের পাতা এবং ইউটিউবে দেখবে এই গরুর গাড়ি।এক সময় রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রত্যেক গ্রামে দেখা যেত এসব গাড়িতে যাতায়াত, যাত্রী পরিবহন, পণ্য আনা নেওয়া। তখন ছিলো মেঠো পথ। এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না খুব একটা। তবে চর অঞ্চলের অনেক এলাকায় গেলে চোখে পড়ে কিছু গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়ি। ঘোড়ার গাড়ির দেখা মিলবে চরাঞ্চলে। সেখানেও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে হয়তো তারাও বিকল্প চিন্তা করবে। এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য।

আধুনিক বিশ্বের যান্ত্রিক ছোঁয়া আর ডিজিটাল পদ্ধতির কাছে এসব যেন হার মেনেছে। তাই বিলুপ্ত প্রায় এ পেশা আর এসব গাড়ি। প্রত্যন্ত এলাকায় এসব দু‘একটি গাড়ি চোখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। প্যাটেল রিকশা বা ঠেলাগাড়ির মতো গরু, মহিষ ও ঘোড়ার গাড়িগুলো পরিবেশবান্ধব যান। এতে কোনো জ্বালানি খরচ নেই। শব্দ দূষণ নেই। তেল,গ্যাস,বিদ্যুৎ এসব কিছুই এই যানে ব্যবহার হয় না। এই গাড়িগুলো ধীর গতিতে চলে বলে তেমন কোনো দুর্ঘটনাও নেই। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে আমাদের ঐতিহ্যবাহী এইসব গাড়ির প্রচলন রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে।