• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৩:৫৪ অপরাহ্ন

রাজধানী ফুটপাতের দোকান থেকে রসিদ দিয়ে আদায় করা হয় রেকার বিল : দোকান প্রতি ১২০০ টাকা


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ১৩, ২০২৩, ৬:২৩ অপরাহ্ন / ১৪৩
রাজধানী ফুটপাতের দোকান থেকে রসিদ দিয়ে আদায় করা হয় রেকার বিল : দোকান প্রতি ১২০০ টাকা

এম রাসেল সরকারঃ রাজধানীর ফুটপাতে ভাসমান দোকানির কাছ থেকে পুলিশ রেকার বিল আদায় করছে। প্রতিটি দোকান থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার রেকার বিলের রসিদ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ সময় ফুটপাতের পাশে পুলিশের একটি রেকার গাড়ি দাঁড় করানো থাকে।

সংশ্লিষ্ট সার্জেন্ট অথবা টিআই (ট্রাফিক ইন্সপেক্টর) ভাসমান দোকানে যান। তিনি রেকার গাড়ি দেখিয়ে বলেন, রেকার বিল দিবি। তা মোবাইল ব্যাংকিং অথবা সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক পুলিশের ডিসি (উপ-কমিশনার) অফিসে জরিমানার টাকা জমা দিতে হয় না। নগদ টাকায় বিল পরিশোধ করতে হয়। রেকার বিলের রসিদ ধরিয়ে দেওয়া সংশ্লিষ্ট সার্জেন্ট বা টিআইয়ের হাতে ১ হাজার ২০০ টাকা ধরিয়ে দিলেই মুক্তি।

এ ধরনের রেকার বিলের রসিদ ধরিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, পান্থপথ, ফার্মগেট, গ্রিন রোড, এলিফেন্ট রোডসহ বেশ কয়েকটি এলাকার ফুটপাতের ভাসমান দোকানকে ঘিরে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পান্থপথ সড়কের ফুটপাতের (পশ্চিম পাশ) পাশে গত ১৭ জুন রেকার দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন ভাসমান দোকান থেকে ‘বিল’ নিতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০ জুলাই বসুন্ধরা শপিং মলের বিপরীতে ফার্নিচার মার্কেটের সামনের ফুটপাতে ট্রাফিক পুলিশ অভিযান চালায়। ফার্নিচার মার্কেটের সামনের ফুটপাত থেকে পান্থপথের মোড় পর্যন্ত আনুমানিক ২০০ ভাসমান দোকান। ফুটপাতে চায়ের দোকান, পিঠা বিক্রির দোকান, ফলের দোকান, জুতা-স্যান্ডেলের দোকান, ফুসকা-চটপটির দোকান এমনকি ঝালমুড়ির দোকান রয়েছে। এসব দোকান ভাসমান। কেউ ভ্যানগাড়ির ওপর, কেউ-বা কাঠের চৌকি আবার কেউবা ত্রিপল বিছিয়ে দোকানের পসরা সাজিয়েছেন। টিআই হাবিবের নেতৃত্বে ট্রাফিক পুলিশের একটি দল ফুটপাত জুড়ে অভিযান চালায়।

ফুটপাতের ভাসমান দোকানিদের অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা ঘুরে ঘুরে কারো কাছ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, কারো কাছ থেকে ৬০০ আবার কারো কাছ থেকে ৫০০ টাকা রেকার বিলের নামে আদায় করেন। এভাবে টাকা আদায়ের সময় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা তাদেরকে বলেন, ফুটপাতে ব্যবসা করতে হলে দোকানপ্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। না হলে সব দোকান রেকার গাড়ি দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে।

ফুটপাতের ভাসমান দোকানদারের মধ্যে ১২ জনের কাছে রেকার বিলের রসিদ পাওয়া গেছে। একটি রসিদে লেখার তারিখ ২০-৭-২০২৩, রেকার স্লিপ নম্বর ১৩১২৭৩, ব্যবহৃত রেকার নম্বর-৪, রেকারকৃত গাড়ির ধরন-ভ্যান, রেজিস্ট্রেশন নম্বরের ঘরে লেখা রয়েছে দোকান, মালিকের নাম-হাসান। ১ হাজার ২০০ টাকা আদায় করা হলো। আদেশক্রমে উপ-কমিশনার, ট্রাফিক রমনা বিভাগ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এরকম আরেকটি স্লিপের তথ্য উল্লেখ করা হলো। স্লিপে তারিখ রয়েছে ১৭-৬-২০২৩, রেকার স্লিপ নম্বর-১২৭১৮০, ব্যবহূত রেকার নম্বর ২, রেজিস্ট্রেশন-নম্বরবিহীন, মালিকের নাম আব্দুর রাজ্জাক, রেকার বিল-১ হাজার ২০০ টাকা।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার জয়নুল আবেদীন বলেন, সাধারণত সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা করলে, ফুটপাতে যানবাহন পার্কিং করে মানুষ চলাচলে বাধাগ্রস্ত করলে অথবা কোনো যানবাহন সড়কে নষ্ট হয়ে গেলে ট্রাফিক পুলিশ রেকার গাড়ি দিয়ে প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে। এক্ষেত্রে রেকারিং বিল ১ হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়। রেকার বিল সরকারি কোষাগারে জমা হয়। কিন্তু ফুটপাতে ভাসমান দোকানের ক্ষেত্রে রসিদ ধরিয়ে দিয়ে রেকার বিল আদায় করার কোনো অভিযোগ নেই। এরকম কোনো ঘটনা ঘটার প্রশ্নই ওঠে না। তবে কেউ যদি কারো অগোচরে এমন কাজ করে থাকেন, সেটি অবশ্যই তদন্ত হবে।

বাংলাদেশ হকার্স লীগের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, উত্তর ও দক্ষিণ সিটি মিলে রাজধানীতে অন্তত ২ লাখ হকার আছেন। তাদের কাছ থেকে দোকানপ্রতি কম করে হলেও প্রতি মাসে ৫০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। সে হিসাবে ফুটপাত থেকে দৈনিক ১০ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়। চাঁদাবাজির বিষয়টি প্রশাসনের সবাই জানে। অথচ চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কারণ চাঁদার টাকা কমবেশি সবাই পায়।

ফুটপাতে ভাসমান দোকান থেকে রেকার বিল আদায় প্রসঙ্গে হকার্স লীগের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ রেকারের ভয় দেখিয়ে টাকা নিচ্ছে। এটা এক ধরনের নীরব চাঁদাবাজির মতো।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স শাখার উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, ফুটপাতের ভাসমান দোকান থেকে রেকার বিল আদায় করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে সরকারের এই রসিদ ব্যবহার করে, সেটির দায়ভার তার। বিষয়টি তদন্ত করা হবে।