• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫৫ অপরাহ্ন

রাজধানীর ফুটপাত হকারদের হাজারো কোটি টাকা চাঁদার ভাগ পাচ্ছে যারা


প্রকাশের সময় : মে ৮, ২০২২, ৭:০৭ অপরাহ্ন / ২৬৩
রাজধানীর ফুটপাত হকারদের হাজারো কোটি টাকা চাঁদার ভাগ পাচ্ছে যারা

মোঃ রাসেল সরকারঃ রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল, পুরান ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় ফুটপাতের হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলেন দুই শতাধিক লাইনম্যান। গড়ে একজন হকার ২০০ টাকা দিলেও প্রতিদিন চাঁদা উঠে ৪০ কোটি টাকা প্রত্যেক এলাকার লাইনম্যানদের আছেন একজন করে সর্দার।

চাঁদার টাকার ভাগ চলে যায় স্থানীয় রাজনীতিক ও প্রশাসনের পকেটে। এ অবস্থায় ফুটপাত থেকে রাজস্ব আদায়ের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। তথ্য বলছে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় হকার আছে প্রায় দুই লাখ। গড়ে একজন হকার ২০০ টাকা দিলেও প্রতিদিন চাঁদা উঠে ৪০ কোটি টাকা। গুলিস্তান গোলাপ শাহ মাজারের ঠিক পূর্ব পাশে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের এ সড়কটি এখন আর চেনার উপায় নেই। এক সময় যানবাহন চলাচল করত সড়কটি দিয়ে। এখন হকারদের দখলে পাকাপোক্তভাবে। হকাররা অবশ্য নির্দিষ্ট চাঁদার বিনিময়েই বন্দোবস্ত করেছেন। এক টুকরি (ঝাঁকা) ফল নিয়ে বসেছেন যে হকার তাকেও গুনতে হয় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। আর অন্যান্য হকারের চাঁদার হার গড়ে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। তবে এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নন কেউ।

গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে হঠাৎ তৎপর হয়ে উঠল পুলিশ সদস্যরাও। রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হকারদের। তবে পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন চোখে পড়ল না।

রাজধানীর সূত্রাপুর এলাকায় ফুটপাতকেন্দ্রিক ব্যাপক চাঁদাবাজি হয় এমন তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে লক্ষ্মীবাজারে। জানা গেল এখানে লাইনম্যানদের গুরু মোহাম্মদ ফিরোজ নামে এক ব্যক্তি। গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি ফিরোজকে জানিয়ে দিয়ে মুহূর্তেই এলাকা থেকে সটকে পড়েন এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি গণমাধ্যম কর্মীদের কে বলেন,আমি কোনো ফিরোজকে চিনি না। কোন ফিরোজ পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি। কে চাঁদা উঠায়, এ দোকানের মহাজন তিনি। ফুটপাতের এক হকার নিশ্চিত করেন ফিরোজের হয়ে চাঁদা তোলেন টি-শার্ট পরা ওই ব্যক্তিটিই।

আরেকজন জানান, এ পুরান ঢাকার মধ্যে এক নম্বর চাঁদাবাজ মোহাম্মদ ফিরোজ। তার লাইনম্যান হচ্ছে মাসুম, আজিজ, আরিফ ও রবিন এবং আশিক। তারা এক একটা লাইন এক একজনকে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করান।

অনুসন্ধানে শুধু লক্ষ্মীবাজার এলাকাতে পাওয়া গেলে অন্তত ১৫ জন লাইনম্যানের একটি তালিকা। তাদের কায়েকজনকে পাওয়া গেল স্পটেই। তবে ক্যামেরা দেখে এদিন তারা টাকা না তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। দেখা মেলে চারজন লাইনম্যানেরও। ১৫ জন লাইনম্যান হলেন, ফিরোজ, আরিফ, মাসুম, নেতা সোহাগ, আযাদ রহমান, আফজাল, নিতু, জলি, লম্বা হিমু, শরিফ, বিজয়, হারুন উর রশীদ, জয় শাহা ও রবিন। হকাররা বলছেন, প্রতিদিন চার থেকে পাঁচজনকে চাঁদা দিতে হয়।

বাংলাদেশ হকার্স লীগের সভাপতি এম এ কাসেম বলেন, শুধু গুলিস্তানেই ফুটপাত থেকে চাঁদা তোলেন ৫০ জন। তার হিসাবে মতিঝিল, গুলিস্তান, পুরান ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় অন্তত ২০০ লাইনম্যান নিয়মিত চাঁদা তোলেন।

তিনি বলেন, গুলিস্তান এলাকাতে বিশেষ করে পল্টন থানা এলাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউসহ পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করে দুলাল নামে একজন। যিনি যখন যে দল ক্ষমতায় আসে ওই দলের সমর্থন নিয়ে এবং বিশেষ করে স্থানীয় থানা পুলিশের সহযোগিতায়, থানা পুলিশ এবং বক্সের সহযোগিতায় আহাদ বক্সের সহযোগিতায় চাঁদাবাজি করছে। কীভাবে চাঁদাবাজি করছে, গুলিস্তান এলাকাতে ৫০টা লাইনম্যান আছে তার, লাইনম্যান হকারদের কাছ থেকে টাকা তোলে আর দুলাল এই লাইনম্যানদের কাছ টাকা নেয়। একটা অংশ পুলিশকে দেয় সে। আরেকটা অংশ সে ভাগ-বাটোয়ারা করে খায়।

তিনি আরও বলেন, আরেকজন আছে তার নাম বাবুল। গুলিস্তান এলাকাতে যেসব লাইনম্যান আছে তার সর্দার হলো এই বাবুল। বাবুল গুলিস্তান হল বিল্ডিংয়ের সামনের যে ফুটপাত বা রাস্তা আছে এটার চাঁদা তোলে সে। আবার সব লাইনম্যানের কাছ থেকে টাকা তোলার পর সে টাকা দেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সরকারি দল বিরোধী দলকেও। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কতিপয় অসাধু কর্মীদের সহযোগিতায় চাঁদাবাজি করে বিধায় তাদের দেয়। আবার বিএনপির অসাধু কর্মীদের সহযোগিতায় চাঁদা তোলে বিধায় তাদেরও দেয়। ভবিষ্যতে তারা যদি ক্ষমতায় আসে এই ভেবে। লাইনম্যানের মাধ্যমে চাঁদা তোলার তথ্য পুলিশের কাছে থাকলেও বলছেন, চলছে তালিকা তৈরির কাজ।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, কিছু মানুষ আছে যারা বিভিন্ন পেশার নাম বলে অথবা রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে থাকে, তারা কিছু লাইনম্যান নিয়োগ করে থাকে। লাইনম্যানের মাধ্যমে হয়তো চাঁদাবাজি হয়ে থাকতে পারে। এ ধরনের তথ্য সাংবাদিক থেকে শুরু করে আমাদের গোয়েন্দা রিপোর্টেও আমরা দেখি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে না পারলে সরকারের উচিত এখান থেকে রাজস্ব আদায় করা।

ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্নেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহনেওয়াজ বলেন, হকারদের একটা নম্বর দেওয়া যেতে পারে। এটি নিয়ে তারা সেখানে ব্যবসা করবে এবং সিটি করপোরেশনকে কর দেবে। আর সিটি করপোরেশন একটা অংশ পুলিশ প্রশাসনকে দেবে, যারা সেখানে কাজে নিয়োজিত আছে। সবাই একটা নিয়মের মধ্যে আসবে। আর বিষয়টি একটি বৈধতা পাবে।

তথ্য বলছে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় হকার আছে প্রায় দুই লাখ। গড়ে একজন হকার ২০০ টাকা দিলেও প্রতিদিন চাঁদা উঠে ৪০ কোটি টাকা।