• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৩:১৬ পূর্বাহ্ন

যৌনদাসী হিসেবে নারী পাচার করেন মকবুল


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩, ১২:২৪ অপরাহ্ন / ৭৩
যৌনদাসী হিসেবে নারী পাচার করেন মকবুল

এম রাসেল সরকার, ঢাকাঃ জাল সার্টিফিকেট ও ভূয়া কাগজপত্র দিয়ে বিদেশে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে মানব পাচার করছেন মকবুল। বাংলাদেশের শীর্ষ মানব পাচার চক্রের মূল হোতা মকবুল। মোহাম্মদ মকবুল হোসেনের পিতার নাম আব্দুল হাকিম মাতার নাম জহুরা বেগম গ্রামের বাড়ি গনিয়ারচর, থানা হোমনা জেলা কুমিল্লা, বর্তমানে বসবাস করেন পূর্ব গোড়ান ১০ নম্বর রোডের ৩৩৬ নং হোল্ডিংয়ের নিজস্ব কেনা ফ্লাটে। তার অফিস হচ্ছে ফকিরাপুল জিনাত টাওয়ারের ২য় তলায়।

নিজের আপন চাচাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, মামাসহ আত্মীয় স্বজনের দ্বারা গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী মানব পাচারের একটি সিন্ডিকেট। মূলত তারাই পরিচালনা করছেন এই মানব পাচার চক্রের সিন্ডিকেটটি। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা হলেন পারভেজ মাহমুদ, আনোয়ার হোসেন, সাদি হাসান ও মাইনুদ্দীন ইসলাম পান্নাসহ আরো বেশ কয়েকজন।

মকবুলের নামে রিক্রুটিং এজেন্সির সরকারি লাইসেন্সও রয়েছে। তার প্রতিষ্ঠানের নাম এম এইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। এম এইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের লাইসেন্স ব্যাবহার করে নারীদের বিদেশে পাচার করেন তিনি। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে সৌদি আরব, জর্ডান ব্রুনাইতে লোক পাঠানো হয়। তবে বিশেষ করে নারীদের গৃহপরিচারিকা হিসেবে বিদেশ পাঠান মকবুল। বিদেশে গিয়ে এসব নারীরা পড়েন নানা বিপদে। তাদের উপর চলে নানা ধরনের নির্যাতন। অনেককেই যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এজন্য প্রতিটি নারী পাচার বাবদ মকবুল পান মোটা অংকের টাকা।

তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় রয়েছে মানব পাচারের অসংখ্য মামলা। মানব পাচারের অভিযোগে দেশের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে ডজন খানেকের বেশি মামলা। হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানায় তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা নম্বর ১৭ (৫)১৭, ধারা মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ৬(১)/৭/৮১১, পল্টন থানায় দায়েরকৃত মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইনেও একটি মামলা রয়েছে যার নং-১২ (১২)১৬, কুমিল্লার হোমনা থানার মামলা নং ১৪(৫)১৬ ধারা ১৪৩ /৩৪১/ ৩২৫ /৩২৬/ ৩০৭/ ৩৭৯/ ৪২৭/ ৫০৬ পেনাল কোড, কুমিল্লা হোমনা থানার অপর একটি মামলা নম্বর ১০ (৫) ১৬ ধারা ১৪৩ /৩৪১ /৩২৩ /৩২৪ /৩২৫ /৩৬০/ ৩৭৯/ ৪২৭ /৫০৬,পেনাল কোড, এমপির পল্টন থানায় মামলা নং-৪৯(০২)১৬ ধারা মানব পাচার প্রতিরোধও দমন আইন ৭/৮/৯/১০/১৪ এবং পল্টন থানার মামলা নং ৫০ (১২)১৫ধারা মানব পাচার প্রতিরোধও দমন আইন ৭/৮/৯/১০/১৪।

মানব পাচার ভুয়া কাগজপত্র সৃজন সহ নানা অভিযোগে চার শতাধিক পাসপোর্ট ও শতাধিক জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ও অন্যান্য জাল কাগজপত্রসহ সিআইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ইতোপূর্বে।

গ্রামের সহজ-সরল তরুণীদের বিদেশে ভালো চাকরির প্রলোভনে সর্বস্বান্ত করাই তাদের প্রধান কাজ। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, নানা সার্টিফিকেট জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে মানব পাচার করেএই চক্র। মুচলেকা দেয় নারী পাচার ব্যবসা আর করবে না অথচ এখনো সক্রিয় রয়েছে এই চক্রটি।

ফতুল্লা মডেল থানার মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে একটি মামলায় ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর ফকিরাপুল থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ৪৮৪টি পাসপোর্ট, ৮৬টি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স সমাপনী সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন জাল কাগজপত্র জব্দ করা হয়।

রুনা নামে ১৭ বছরের এক তরুণীকে পাচারকারী চক্রের দুই সদস্য পান্না ও তৈয়ব নামে দালাল ফকিরাপুলের এমএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠায়। সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর সেখানকার মালিক রুনাকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছেন বলে জানান। এবং ১৭ বছরের ওই যুবতী কে যৌন কাজে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে তার পরিবারের চেষ্টায় বহু কষ্টে সৌদি আরব থেকে রুনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।বিদেশে পাঠানোর জন্য জাল কাগজপত্র তৈরি করে তার বয়স দেখানো হয় ৩০ বছর।

রুনা নামের এই তরনীর সাথে চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে দালাল পান্না। পরে সৌদি আরবে নিয়ে গিয়ে তাকে নানা ভাবে শারীরিক মানসিক নির্যাতন করা হয়। এভাবেই চক্রটির হাতে দিনের পর দিন পাচার হচ্ছে দেশের অসহায় নারীরা।

বিদেশে নারী পাচার করে মধ্যযুগীয় কায়দায় হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এই মকবুল। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দলের প্রতীকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে তার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র। এই বিষয়ে কথা বলতে মকবুল হোসেনের সাথে ফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।