• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০১:১৫ অপরাহ্ন

মাদক ব্যাবসায় বাধা দেয়ায় এক যুবককে নৃশংসভাবে হত্যা : গ্রেপ্তার ৪


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১০, ২০২৩, ৯:২৬ পূর্বাহ্ন / ৬৮
মাদক ব্যাবসায় বাধা দেয়ায় এক যুবককে নৃশংসভাবে হত্যা : গ্রেপ্তার ৪

এম রাসেল সরকারঃ বগুড়া সদর থানা এলাকায় মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে মো. লিটন নামের এক যুবককে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা মামলার চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. মোমিন, মো. তৈয়ব, মো. তানজিল এবং মো. রাহুল।

গত শনিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর মতিঝিল এবং ওয়ারী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।রবিবার দুপুরে র‌্যাব-৩ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের অধিনায়ক বলেন, র‌্যাব-৩ এর একটি দল রাজধানীর মতিঝিল ও ওয়ারী এলাকা থেকে মো. মোমিন, মো. তৈয়ব, মো. তানজিল এবং মো. রাহুল নামের চারজন হত্যা মামলার আসামিদেরকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের তৈয়ব, তানজিল ও রাহুল তিন আপন ভাই। আর মোমিন তাদের আপন মামা। এছাড়াও নিহত লিটন একই গ্রামে পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করতেন। গ্রেপ্তারকৃতরা বগুড়ার সদর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মাদক কেনা-বেচা করে আসছে।

গ্রেপ্তারকৃত রাহুল ওই এলাকায় মাদক বিক্রির সময় তাদের পাশের বাড়িতে বসবাসরত সালমান মাদক বিক্রি করতে বাধা দেয়। এ নিয়ে সালমান ও রাহুলের মধ্যে একটি বিরোধের সৃষ্টি হয়। ওই বিরোধের জেরে ২০২২ সালের ১৬ জুলাই বেলা ১১ টার দিকে গ্রেপ্তারকৃত রাহুল এবং সালমান পরস্পর বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হলে পাশের বাড়ির বাসিন্দা ভুক্তভোগী লিটন ঘটনাস্থলে এসে হাজির হয়।

ভুক্তভোগী লিটনও আগে থেকে তাদের মাদক চোরাকারবারির বিরোধিতা করে আসছিলেন। যার জন্য ওই মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তারকৃত মোমিনের সঙ্গে তার বিরোধ চলে আসছিল। পরবর্তীতে রাহুল ভুক্তভোগী লিটন ও সালমানকে শায়েস্তা করার জন্য তার দুই ভাই তৈয়ব ও তানজিল, তার মামা মোমিন, নানা সোলাইমান, খালা রিতা বেগম এবং খালাত ভাই রাব্বিসহ অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজনকে ডাক দেয়। তখন তারা বাঁশের লাঠি, কাঠের বাটাম, লোহার রড, ধারালো চাকু, ধারালো হাসুয়াসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে লিটনের বাড়িতে হামলা চালায়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ঘটনার শুরুতেই আসামিরা লিটনের বসতবাড়িতে প্রবেশ করে সেখানে অবস্থানরত লিটনের বোন ডলি বেগমকে এলোপাতাড়িভাবে বাশের লাঠি ও কাঠের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। আর মোমিন তার হাতে থাকা ধারালো দাঁ (হাসুয়া) দিয়ে লিটনের মাথায় কোপ দিলে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়ে লিটন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় তানজিল, রাহুল, তৈয়ব, সোলাইমান ও রাব্বি তাদের হাতে থাকা বাঁশের লাঠি ও কাঠের বাটাম দিয়ে লিটনকে নির্মমভাবে পিটাতে থাকে।

ওই সময় লিটনকে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য লিটনের ভাই রাশেদ এবং বোনজামাই আজিজুল এগিয়ে গেলে তাদেরকেও আসামিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। একপর্যায়ে লিটনের পরিবারের সদস্যদের চিৎকারে আশেপাশের বসতবাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে পৌছালে সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকা লিটনসহ জখমপ্রাপ্ত সকলকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক লিটনের অবস্থা আশংকাজনক দেখে তখনই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে ওই বছরের ১৭ জুলাই ভোর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লিটনের মৃত্যু হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ ঘটনায় ওইদিন বগুড়ার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। বগুড়া সদর থানার মামলা নম্বর-৩৪। ওই মামলায় মোমিনকে প্রধান আসামি এবং তানজিল, রাহুল, তৈয়ব, সোলাইমান, রাব্বি, রিতা বেগমসহ অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হয়।

পরবর্তীতে ঘটনার দিন রাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ওই মামলার ৭ নম্বর আসামি রিতা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর অন্যান্যরা আত্মগোপনে চলে যায়।পরবর্তীতে পলাতক থাকা অবস্থায় পাঁচ নম্বর আসামি সোলাইমান ঘটনার কিছুদিন পর মারা যায়। র‌্যাব-৩ চারজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। আর ছয় নম্বর আসামি রাব্বি বর্তমানে পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা চলমান রয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা ওই ঘটনার পর নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় আত্মগোপন করে। আর স্থানীয় একটি টেইলার্সের দোকানে তাদের নাম ও পরিচয় গোপন করে ছদ্ম পরিচয়ে দর্জির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।

আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তারা নিয়মিত তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন আর বিভিন্ন মাধ্যমে ওই মামলার বাদী নিহত লিটনের বোনকে তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিল।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা সকলেই মাদকাসক্ত। আর মাদক চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও তারা বগুড়া সদর এলাকায় চিহ্নিত এবং প্রতিষ্ঠিত মাদক চোরাকারবারি। তারা মূলত মাদক ব্যবসা করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করত।

গ্রেপ্তারকৃত মোমিন ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে দুইবার মাদকদ্রব্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। ওই সময়ে তিনি ৪৫ দিন এবং ৫১ দিন কারাভোগ করে। গ্রেপ্তারকৃত তানজিলের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত তৈয়বের বিরুদ্ধে বগুড়া জেলার শাহজাহানপুর থানায় ২০০৪ সালের একটি মারামারি মামলা রয়েছে।