• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩১ অপরাহ্ন

মদ ও নারী পিপাসু জহির, এসআই শাহীনের শেল্টারে বেপরোয়া!


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ২৬, ২০২১, ৯:২৯ পূর্বাহ্ন / ২৭৬
মদ ও নারী পিপাসু জহির, এসআই শাহীনের শেল্টারে বেপরোয়া!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জহুরুল ইসলাম জহির। বর্তমান সময়ের আলোচিত একটি নাম। নানা কর্মে-অপকর্মে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। একটি ধর্ষণ মামলায় সম্প্রতি জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়েছেন তিনি। ২১ মে ২০০০ সালে আরিফা খন্দকার মিতাকে বিয়ে করেন জহির। একাধিক নারীবাজির কারণে স্ত্রী মিতার সাথে প্রতিদিন ঝামেলা লেগেই থাকে। প্রতিদিন হোটেল রুমে নারী নিয়ে রাত্রিযাপন করায় বাসায় যান না জহির। এসব নিয়ে প্রতিনিয়ত দুই জনের মাঝে কথা কাটাকাটি হয় প্রায়ই। জহিরকে মদ ও নারীবাজি থেকে ফিরিয়ে আনতে না পেরে বেশ কয়েক বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন স্ত্রী আরিফা খন্দকার মিতা। এ নিয়ে পল্লবী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন নারীবাজ স্বামী জহিরুল ইসলাম জহির।

সূত্র জানায়, বনানী থানার এসআই শাহীন নারীবাজ জহিরের সকল অপরাধ ও অপকর্মের সহযোগী। এসআই শাহীনকে দিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করে ধামাচাপা দেন জহির। বনানী থানায় দীর্ঘ দিন থাকার সুবাদে এসআই শাহীনের গভীর সখ্যতা রয়েছে জহির ছাড়াও ভয়ংকর অপরাধীদের সাথে। নারী সাপ্লায়ার মারুফ আহমেদ রিজভীকে দিয়ে উঠতি মডেল এনে শারীরিক সম্পর্ক করেন জহির। এই নারীদেরকে আবার দুবাই সাপ্লাই দেন তারা। গ্রেফতারকৃত নায়িকা স্বর্ণার সাথেও শারীরিক সম্পর্ক করেছেন জহির ও বনানী থানার এসআই শাহীন। এই স্বর্নাকে জহিরের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন মারুফ আহমেদ রিজভী।

মূলত: জহির চাকরি করেন বনানীতে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানে। তবে অপরিচিত মানুষদের কাছে নিজের পরিচয়-পরিচিতি তুলে ধরেন নানা ভাবে। কখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ছেলে, কখনো সেনাবাহিনী এবং পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তার বন্ধু, আবার কখনো বনানীর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী! প্রথম পরিচয়েই কিভাবে দৃষ্টি কাড়তে হয়, তা অনেক আগেই রপ্ত করেছেন জহির। সরকারী চাকরি যেখানে সোনার হরিন, তা তিনি পাইয়ে দিতে পারেন অনায়সে। সেনাবাহিনী ও পুলিশে নিয়োগ দেয়াও তার কাছে কোন ব্যাপারই নয়। এসব প্রতারণায় তার সাথে যুক্ত রয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন ব্যক্তি। যারা দেখতে খুবই সুদর্শন। এদের কেউ নিজেকে চলচ্চিত্র পরিচালক, কেউ আবার বড় রাজনীতিক হিসেবে নিজেদের জাহির করেন। অর্থাৎ প্রতারণায় যেসব গুনাবলি প্রয়োজন, তা সবই আয়ত্ব করেছেন জহুরুল ইসলাম জহির।

জহুরুল ইসলাম জহির রাজধানীর বনানীস্থ এ ডাব্লিউ আর নামে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। চলেন এই প্রতিষ্ঠানের কাজের সুবাদে সাময়িক বরাদ্ধ দেয়া সাদা রংয়ের একটি প্রাডো গাড়িতে। গাড়ির সাথে পোশাক-আশাকেও আমুল পরিবর্তন করে ফেলেছেন। গাড়ি আর পোশাকে নিজেকে সব মহলেই উপস্থাপন করে ফলেছেন তিনি বনানীর অভিযাত এলাকার একজন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। অর্থাৎ এ ডাব্লিঊ আর থেকে পাওয়া গাড়িটিও তার সব প্রতারণায় সহায়ক হয়েছে বলে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে।

অভিযোগ রয়েছে, বনানীতে অফিস থাকার সুবাদে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেসরকারি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের চাকুরী দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেন এমন অভিযোগের পাশাপাশি আভিজাত হোটেলে টাকার বিনিময়ে একাধিক মেয়ের শরীর ভোগ করেন। রাজধানীর আভিজাত্য এলাকার ফ্ল্যাট ও হোটেল তাঁর নারীবাজীর নিরাপদ স্থান। শুধু তা-ই নয়’ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ চলচ্চিত্রের একাধিক অভিনেত্রীর সাথে দুবাই গিয়ে রাত কাটানোর। আর এসব অভিনেত্রীকে তাঁর জন্য ম্যানেজ করে দিতেন চলচ্চিত্র পরিচালক রিজভী।

সম্প্রতি এক অভিনেত্রীকে নিয়ে নেসারুল হক খোকনসহ দুবাই গিয়ে আনন্দ পূর্তি করেছেন। এখানে-ই তাঁর কুকর্ম শেষ নয়’ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উঠতি বয়সের একাধিক মেয়ের সাথে হোটেল ওয়েস্টার্ন এর রুম নং ২১১০। নারীসঙ্গ, মদ সেবন ও আনন্দ পূর্তি করেন এই আভিজাত্য হোটেল রুমটিতে।

এছাড়াও জহুরুল ইসলাম জহির আলোচিত হয়েছেন নানা ভাবে। বনানী থানায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে বেশ কয়েকটি অভিযোগ। চাকরি দেয়ার নাম করে প্রতারণার অভিযোগে লিজা নামে এক নারী বনানী থানায় সাধারণ ডাইরি করেছিলেন বছর দু’য়েক আগে। জহিরের প্রথম স্ত্রী আরিফা খন্দকার মিতাও পারিবারিক জীবনে সুখি নন। স্বামীর দুটি বিয়ে ছাড়াও ডজন খানেক নারী বান্ধবীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ। তবে মুখ খুলে কাউকে কিছু না বললেও স্বামীর অপকর্মের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে একবার বনানী থানায় জিডি করতে এসেছিলেন। পরে অবশ্য পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যস্থতায় ফিরে যান পল্লবীর বাসায়।

ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করা জহিরের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের করা প্রতারণা ও ধর্ষণ মামলার আসামি তিনি। গত ১৯ জানুয়ারি পল্লবী’র বাসা থেকে জহিরকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে ১৮ জানুয়ারি নারী ও শিশু অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে উত্তরা পশ্চিম থানা ধর্ষণ মামলাটি গ্রহন করে। অভিযোগ রয়েছে, প্রায় দু’সপ্তাহের মত জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আবারো সেই নারীকে হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন জহির।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জহুরুল ইসলাম জহির মূলত: ‘এ ডাব্লিউ আর’ নামে বনানীর ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার পাশাপাশি তিনি নিজেও ‘ফোর জেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’ নামে আর একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন। এই ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটি মূলত: নাম কায়াস্তে। কোন কাজ নেই এই প্রতিষ্ঠানের। তবে প্রায় প্রতি রাতেই বনানীতে এই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে বসে মদের আড্ডা। এতে যোগ দেন তার প্রতারণার কাজে সহযোগিতা করা মুখোশধারীরা। নিজেদের সৎ এবং পেশাদার হিসেবে উপস্থাপন করা দু’য়েকজন সাংবাদিকও এসব আড্ডায় যোগ দেন বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জহির তার এই ‘ফোর জেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’ নামের বনানীর (ফ্ল্যাট- এসবি-৫, বাসা- ৫৪, সড়ক- ১০, ব্লক- ই, বনানী) কার্যালয়টি মূলত: প্রতিষ্ঠা করেছেন সচিবালয়সহ ও সেনাবাহিনী ও পুলিশে লোক নিয়োগ দেয়া, রোডস ও পিডাব্লিউডি’র ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেয়া এবং মানুষের পাওনা টাকা আদায় করে দেয়া’র লক্ষ নিয়ে।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, এসব কাজে আসা অপরিচিত মানুষদের কাছে জহির নিজেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ছেলে, কখনো সেনা-বাহিনী এবং পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তার বন্ধু, আবার কখনো বনানীর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হিসেবে উপস্থাপন করেন। প্রথম পরিচয়েই কিভাবে দৃষ্টি কাড়তে হয়, তা অনেক আগেই তিনি রপ্ত করেছেন। সরকারী চাকরি যেখানে সোনার হরিন, তা তিনি পাইয়ে দিতে পারেন অনায়সে। তার এমন উপস্থাপনা মানুষকে সহজেই বস করে ফেলে। জহিরের এসব কাজের সহযোগিরা কেউ নিজেকে চলচ্চিত্র পরিচালক, কেউ সাবেক সেনা কর্মকর্তা, কেউ নামীদামী সাংবাদিক, কেউবা আবার বড় রাজনীতিক হিসেবে নিজেদের জাহির করেন।

এ বিষয়ে জহুরুল ইসলাম জহিরের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল নম্বর ০১৮১১-**৯৬০০ বেশ কয়েকবার ফোন করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পরে ফোন করবেন বলে-ই কল কেটে দেন। এদিকে তার ‘এ ডাব্লিউ আর’ এর সিইও’র কাছে জানতে চাইলে, তিনি জহিরুল ইসলাম জহিরের বিষয়ে মতামত দিতে রাজি হন নাই।