• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৯:২৪ অপরাহ্ন

ভুয়া এনআইডি ও টিআইএন দিয়ে সাহেদের জালিয়াতি; সিআইডির অভিযোগপত্র


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৯, ২০২৩, ৬:৩১ অপরাহ্ন / ৮৮
ভুয়া এনআইডি ও টিআইএন দিয়ে সাহেদের জালিয়াতি; সিআইডির অভিযোগপত্র

মোঃ রাসেল সরকার,ঢাকাঃ মহামারি করোনা পরীক্ষার ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে সমালোচিত মোহাম্মদ সাহেদের প্রতারণা ও জালিয়াতির ফিরিস্তি উঠে এসেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অনুসন্ধানে। রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেডের বাইরে ১২টি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি। এ সব প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৩টি ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করেন। সহযোগী মাসুদ পারভেজকে দিয়ে পরিচালনা করেন আরও ১৫টি ব্যাংক হিসাব। এই ৫৮টি হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন করেছেন ৯৫ কোটি ৬৯ লাখ ৩৫ হাজার ২২১ টাকা। অর্জিত অর্থ থেকে ১১ কোটি টাকা পাচার করেন।

ব্যবসাকে সাইনবোর্ড বানিয়ে অর্জিত এ সম্পদের প্রধান উৎস ছিল প্রতারণা ও জালিয়াতি। আর এ জন্য অবৈধ ভাবে দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং দুটি টিআইএন ব্যবহার করেন তিনি। পাওনাদাররা টাকা চাইতে গেলে পিস্তলের ভয় দেখান। আদালতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় সিআইডির দেওয়া অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

দুই সহযোগীসহ সাহেদ এবং তার তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটির তদন্ত করছিল সিআইডি। বৃহস্পতিবার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, সাহেদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় আরও ১২টি মামলার তথ্য পেয়েছে সিআইডি।

অভিযোগপত্রে সাহেদের পাশাপাশি রিজেন্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজ ও পরিচালক কাজী রবিউল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়। এক সঙ্গে বহুমুখী প্রতারক সাহেদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেড, রিজেন্ট কেসিএস লিমিটেড ও রিজেন্ট ডিসকভারি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস লিমিটেডকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাহেদ ও পারভেজ এখন কারাগারে। অন্য আসামি রবিউল পলাতক।

অভিযোগপত্রে ১১ কোটি ২ লাখ ২৭ হাজার ৮৯৭ টাকা পাচারের তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে ৩ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার ২২৭ টাকা করোনার জাল সার্টিফিকেট দেওয়ার মাধ্যমে অর্জন করেছেন। একেএসআইডি করপোরেশন লিমিটেডের মাধ্যমে মেট্রোরেল প্রকল্পে নিয়োজিত ৭৬ জন স্টাফের করোনা পরীক্ষার জন্য ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা নেন সাহেদ।

এরপর পরীক্ষা না করেই ভুয়া রিপোর্ট দেন। এছাড়া বিভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণার মাধ্যমে অগ্রীম তারিখের চেক দিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে রড, বালু, পাথরসহ বিভিন্ন মালামাল সংগ্রহ করেন। কিন্তু সেগুলোর বিল পরিশোধ করেননি।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, করোনা রোগীদের কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেল মিলিনা ভাড়া ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়েছিল সাহেদ। কিন্তু মালিক মো. আনোয়ার হোসেনকে কোনো ভাড়া পরিশোধ করেননি। এমনকি মূল মালিককে হোটেলেও ঢুকতে দেননি। উল্টো বাড়িটি দখল করে নেন। মালিককে হুমকি-ধামকি দেন। এ ভাবে হোটেল ভাড়ার এক কোটি ৩৬ লাখ ১৩ হাজার ৫০ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।

এছাড়া সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পূর্বাচলের ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্টের জন্য চুক্তিতে এক্সকেভেটর মেশিনের ভাড়া, ওয়াটার পাম্পের ভাড়া ও বিটুমিন ক্রয় বাবদ ৯৫ লাখ ৮১ হাজার ৫৮৮ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। শুধু এই হোটেল ও ভাড়ার টাকাই নয় সাহেদের প্রতারণার এমন অসংখ্য তথ্য পেয়েছে সিআইডি।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, প্রতারক সাহেদ ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত হাজি মো. এখলাছ খান নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১ কোটি ৭৯ লাখ ৭৬ হাজার ৮৪৩ টাকার বালি ও পাথর ক্রয় করেন। কিন্তু ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী তার কাছে টাকা চাইলে তাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন। চট্টগ্রামের সাইফুদ্দিন মহসিন নামের আরেক ব্যবসায়ীকে ২০০ সিএনজি অটোরিকশার রুট পারমিট করিয়ে দেওয়ার কথা বলে দুই দফায় ৯১ লাখ টাকা নেন। নেত্রকোনার ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী নামের একজনের কাছ থেকে নারায়ণগঞ্জের জলসিঁড়ি প্রকল্পে বালি ভরাটের জন্য ৪২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৫৯ টাকা নেন।

এছাড়াও হাফিজ উদ্দিন বাহার নামে পাবনার এক লোকের কাছ থেকে নেন ৮১ লাখ ৭২ হাজার ১৮৬ টাকা। কুমিল্লার আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা নেন। গাজীপুরের ইমতিয়াজ হাবিব সিনহা নামের একজনের কাছ থেকে ৫৮ লাখ ১ হাজার ৯৪৪ টাকা এবং কিশোরগঞ্জের এস এম শিপন নামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৬১ লাখ টাকার বালি কিনে টাকা পরিশোধ করেননি প্রতারক সাহেদ।

জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, উত্তরা পশ্চিম থানায় মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলাটির তদন্ত করছিল সিআইডি। গত সপ্তাহে আদালতে অভিযোগ পত্র দেওয়া হয়েছে।

২০২০ সালের ৬ জুলাই উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে করোনার ভুয়া সনদ দেওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালায় র‌্যাব। এতে প্রাথমিক ভাবে অভিযোগের সত্যতা পায় সংস্থাটি। কিন্তু অভিযান চলাকালে পালিয়ে যান সাহেদ। দুই সপ্তাহের মাথায় সাতক্ষীরার দেবহাটা এলাকা থেকে তাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব।