• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৪ পূর্বাহ্ন

নোয়াখালীতে সাংবাদিকতার নামে সাংঘাতিক প্রতারণা!


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১, ২০২১, ৫:৫২ অপরাহ্ন / ২০৯
নোয়াখালীতে সাংবাদিকতার নামে সাংঘাতিক প্রতারণা!

নিজস্ব প্রতিবেদক,নোয়াখালীঃ নোয়াখালীতে সাংবাদিকতার নামে প্রতারণা করছে এক শ্রেনীর প্রতারক চক্র। তারা সাংবাদিকতার নামে সাধারণ মানুষকে নানা ভাবে হয়রানি করে আসছে। এসব প্রতারক নিজেদেরকে অখ্যাত পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অবাধ বিচরন করছে। সাধারণ মানুষ অনেকটা নিরুপায় ও অসহায় হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে সাংবাদিকতার নামে প্রতারণার শীর্ষে রয়েছে বেগমগঞ্জ উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মুজাহিদপুর এলাকার বাসিন্দা মোঃ সাহাব উদ্দিন। শাহাবুদ্দিনের চতুর্থ স্ত্রী সেলিনা আক্তার থেকে জানা যায় শাহাবুদ্দিনের পিতা আবদুল মান্নান একজন রিক্সা মেকার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংসারের অভাব অনটনের কারনে সাহাব উদ্দিন পড়া লেখায় বেশি এগুতে পারেনি। মাত্র ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন কিন্তু জানা যায় কুমিল্লা বোর্ড থেকে জালিয়াতি করে এস এস সি সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে। সাহাব উদ্দিন আজ থেকে ১৮ বছর আগে ২০০৩ সালে এলাকায় বেবিটেক্সি চালাতো। সংসারের হাল ধরতে এক পর্যায়ে সে ফেরী করে বিভিন্ন বেকারী মালামাল পাউরুটি,বিস্কুুট বিক্রি শুরু করে। এরি মধ্যে জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অপরাধের সাথে। এ সব অপকর্ম ধামাচাপা দিতে সাহাব উদ্দিন স্থানীয় একটি পত্রিকার কার্ড সংগ্রহ করে সাংবাদিক পরিচয় দিতে থাকে। এক পর্যায়ে থানায় দালালির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নানা ভাবে হয়রানি করে। যা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। থানায় যে কোন নতুন ওসি আসলে সাংবাদিক পরিচয়ে কৌশলে সাহাব উদ্দিন খাতির জমায়। থানার ওসি ও দারোগাদের নাম ভাঙ্গীয়ে সাধারণ মানুষের থেকে নানা ভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়। যেকোনো ব্যক্তির সম্পত্তি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে নোয়াখালী ডিবি পুলিশের ভয় দেখিয়ে ও ডিবি পুলিশের মাধ্যমে মিমাংশা করে দেওয়ার কথা বলে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়। একই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ নাজিরপুর ২নং ওয়ার্ডের আকরাম উদ্দিন হাজী বাড়ি রুহুল আমিনের স্ত্রীর কাছ থেকে ৪৫ হাজার ও রুহুল আমিনের ছোট ভাই আবদুল হালিমের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। এ বিষয়টি রুহুল আমিনের স্ত্রী চৌমুহানি পৌরভার প্যানেল মেয়রের নিকট নালিশ করেন। প্যানেল মেয়র সাক্ষী গনের সহিত মুঠোফোনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সত্যতার প্রমাণ মিলে। এবং উক্ত টাকা শাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে ফেরত চাইতে গেলে শাহাবুদ্দিন রুহুল আমিনের ছেলেদের কে গুলি করে মেরে ফেলা ও ভিটে মাটি ছাড়া করার হুমকিও দেয়। ইতিমধ্যে রুহুল আমিনের স্ত্রী নোয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরনের কাছে অভিযোগ দিলে তিনি থানায় অভিযোগ দিতে পরামর্শ দেন। সাহাব উদ্দিন বিভিন্ন সময় নিজেকে বিভিন্ন পেশার লোক পরিচয় দেয়। তিনি কখনো সাংবাদিক, কখনো আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য, কখনো গোয়েন্দা সংস্থার লোক পরিচয় দেয়। তার প্রমাণও রয়েছে। সাহাব উদ্দিন সব সময় ওয়াকিটকি ব্যবহার করে। যা দেখে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ে। সাহাব উদ্দিন এ পর্যন্ত ৫-৬টি বিয়ে করেছে এবং বর্তমানে ৪ জন স্ত্রী রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে প্রথম সংসারের স্ত্রীপারুল বেগমের এক ছেলে এক মেয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী জেসমিন আক্তার এর ঘরে এক ছেলে এক মেয়ে, তৃতীয় স্ত্রী আলেয়া বেগম এর ঘরে এক ছেলে রয়েছে, এর মধ্যে সেলিনা আক্তার নামের এক স্ত্রীর সাথে সাহাব উদ্দিন প্রতারনা করে। নানা অজুহাতে তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়। এর মধ্যে হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন ও যৌতুক দাবী করায় তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে মামলা করেন স্ত্রী সেলিনা আক্তার। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন আদালত। কৌশলে জামিনে এসে সাহাব উদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে সেলিনা আক্তারকে নানা ভাবে হয়রানি করে ও তার কাবিন শর্ত না দিয়ে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয়। সাহাব উদ্দিনের চতুর্থ স্ত্রী সেলিনা আক্তার অভিযোগ করেন, সাহাব উদ্দিনের বর্তমানে আমি সহ ৪টি স্ত্রী রয়েছে। সে আমাকে রয়েল বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন সময় হত্যার হুমকি দেয়। আদালতে যাওয়া আসার সময় সাহাব উদ্দিন অস্ত্র উচিয়ে আমাকে ধমক দেয়। এখন আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমি মারা গেলে এর জন্য সাহাব উদ্দিন দায়ী থাকবে। আমি এ বিষয়ে থানায় একটা অভিযোগও করেছি।

এদিকে স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন থেকে সাহাব উদ্দিন এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। নিজের অধিপত্য বজায় রাখতে সাহাব উদ্দিন এলাকায় গড়ে তুলেছে রয়েল বাহিনী নামের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে রয়েল বাহিনী । তার সন্ত্রাসী বাহিনীর এই অপকর্ম নিয়ে একাধিকবার দৈনিক যুগান্তরসহ বিভিন্ন পত্রিকায় শিরোনাম হয়। চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সাহাব উদ্দিনের প্রথম স্ত্রী পারুল বেগমের ছেলে বিপ্লব জিরতলী কাজী বাড়িতে জনগনের হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। আরো জানা যায় গত ২ বছর আগে লক্ষ্মীপুর কমলনগরের একজন প্রবাসী আলমগীরের স্ত্রী আলেয়া বেগম ও তার তিন কন্যা সহ ভাগিয়ে নিয়ে যায়। বর্তমানে আলেয়া বেগম নোয়াখালী সদর শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম এর পশ্চিম পাশে খন্দকার পাড়া ন্যাশনাল কলেজের পাশে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতেন। পরবর্তীতে মানুষের কানাঘুষা দেখে বর্তমানেও একই এলাকায় খন্দকার পাড়া আল-রাজী মহিলা মাদ্রাসা ভবন এর দ্বিতীয় তলায় বসবাস করেন
প্রতারক সাহাব উদ্দিন। বর্তমান শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে বা জিডি করলে সে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধমকি দেয়। সাহাব উদ্দিনের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।
স্থানীয়দের প্রশ্ন, সাহাব উদ্দিনের জীবনে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেখানে এখন সাহাব উদ্দিন কি ভাবে মাইক্রো বাস নিয়ে চলে!! মাসে তার আয় কত, এতো টাকা সে কোথায় পায়? বিষয়টি প্রশাসনের খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

অপরদিকে এলাকাবাসীর দাবীর পেক্ষিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ প্রতারক সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ দিলেও আজ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি প্রশাসন।
এ সব বিষয়ে সাহাব উদ্দিনের সাথে কথা বলতে চাইলে তার মোবাইলে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।