• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৪:০০ অপরাহ্ন

নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে ভুয়া কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে প্রতারক চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ১৬, ২০২৩, ৭:৪৩ অপরাহ্ন / ১৭২
নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে ভুয়া কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে প্রতারক চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার

এম রাসেল সরকারঃ ভুয়া কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূল হোতা নজরুল ইসলাম ও তার ০৩ সহযোগীসহ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব; প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ০১টি প্রাইভেটকার, ০২টি মোটরসাইকেলসহ বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র‌্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে এ পর্যন্ত অপহরণকারী, সন্ত্রাসী, এজাহারনামীয় আসামী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ, প্রতারকচক্র, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারীদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে একটি প্রতারক চক্র নিজেদেরকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে কাস্টমস্সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে সাধারণ মানুষকে চাকুরী দেয়া, বিদেশে পাঠানো, ভিসা তৈরি, বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে মালামাল ছাড়িয়ে আনা, জমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত দালালি কার্যক্রম করে প্রতারণামূলকভাবে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল। এছাড়াও চক্রটি কাস্টমসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সীল ও স্টীকার গাড়ীতে ব্যবহার করে ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিত। বর্ণিত বিষয়ে গত ১৫ আগস্ট ২০২৩ তারিখে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী র‌্যাব-১০ এর নিকট আইনি সহায়তা চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করে। র‌্যাব উক্ত প্রতারকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চক্রটির মূলহোতা মোঃ নজরুল ইসলাম (২৯), পিতাঃ মোঃ সফি মিয়া, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ ও তার সহযোগী মোঃ ওয়ায়েশ করোনী @সেলিম (৪৭), পিতাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান, ব্রাহ্মনবাড়ীয়া সদর, ব্রাহ্মনবাড়ীয়া ও মোঃ নাসির উদ্দিন (২৬), পিতাঃ মোঃ হাবিব হোসেন, ফতুল্লা, নারায়নগঞ্জ, সৈয়দ মোঃ এনায়েত (৪৮), পিতাঃ সৈয়দ আফসার, বিমানবন্দর, বরিশালদের’কে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তার ইউনিফর্ম, আইডি কার্ড, ওয়াকিটকি, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সীল, স্টীকার, ভিজিটিং কার্ড, নগদ অর্থ, বিভিন্ন ব্যাংকের এটিম কার্ড ও চেক বহি, মোবাইল, ০১টি প্রাইভেটকার ও ০২টি মোটরসাইকেল সহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন প্রতারণার সাথে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, উচ্চাভিলাশী জীবন-যাপন করার উদ্দেশ্যে এই চক্রটি প্রতারণার কাজ বেছে নেয়। চক্রটি প্রায় ২ বছর যাবৎ এই প্রতারণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। চক্রটির মোট সদস্য সংখ্যা ৭-৮ জন এবং চক্রটির মূলহোতা গ্রেফতারকৃত নজরুল। চক্রের অন্যান্য সদস্যরা বিভিন্ন এলাকার চাকুরী প্রত্যাশীদের অর্থের বিনিময়ে চাকুরী দেয়ার কথা বলে এই চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত নজরুলের নিকট নিয়ে আসত। গ্রেফতারকৃত নজরুল কাস্টমস এর ইউনিফরম পরিহিত অবস্থায় চাকুরী প্রত্যাশীদের বলত যে, কাস্টমসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে তার সু-সম্পর্ক রয়েছে। এভাবেই চাকুরী প্রত্যাশীদের বিশ^াস অর্জন করে এবং চাকুরী দেওয়ার কথা বলে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিত। তারা প্রতারণার মাধ্যমে চাকুরী দেয়াসহ বিদেশে পাঠানোর কথা বলে অসংখ্য ব্যক্তির নিকট হতে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও চক্রটি তাদের গাড়ীতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্টিকার ব্যবহার করে প্রতারণা মূলকভাবে রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ ঢাকার বাহিরে বিভিন্ন রিসোর্ট ও ব্যবসায়ীদের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিত। গ্রেফতারকৃত নজরুল মূলত চক্রের অন্যান্য সহযোগীদের যোগসাজসে মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে প্রতারণা করে আসছিল। চক্রটির স্থায়ীভাবে কোন অফিস ছিল না বিধায় গ্রেফতারকৃত ওয়ায়েশ করোনীর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ভাড়া বাসাকে তারা অস্থায়ী অফিস হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। আত্মগোপনের জন্য তারা প্রায়শই নিজেদের মোবাইল নম্বর বন্ধ রেখে নিকট আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবের বাসায় অবস্থান করত।

গ্রেফতারকৃত নজরুল স্থানীয় একটি কলেজ থেকে বিবিএ পাস করে কাস্টমস এ চাকুরীর জন্য আবেদন করে বিভিন্ন প্রতারককে বিভিন্ন সময়ে অর্থ প্রদান করে প্রতারিত হয়। এ প্রেক্ষিতে সে ২০১২ সালে সর্বপ্রথম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকুরী লাভের আশায় এক প্রতারককে ১১ লক্ষ টাকা প্রদান করলেও চাকুরী না পেয়ে প্রতারিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে নৈশ প্রহরী এবং ২০১৭ সালে উচ্চমান সহকারী হিসেবে চাকুরী পাওয়ার উদ্দেশ্যে পুনরায় আবেদন করে এবং পুনরায় প্রতারিত হয়। বিভিন্ন সময়ে কাস্টমসে চাকুরীর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এবং কাস্টমসের বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারীদের সান্নিধ্যে আসার সুবাধে কাস্টমসের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সে সম্যক ধারণা লাভ করে। সে নিজে প্রতারিত হয়ে পরবর্তীতে উচ্চাভিলাশী জীবন-যাপনের উদ্দেশ্যে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের লোভে একটি প্রতারক চক্র গড়ে তোলে। প্রতারণা করার জন্য সে নিজেকে এলাকায় উর্ধ্বতন কাস্টমস অফিসার হিসেবে পরিচয় দিতো। সে কাস্টমসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে সুসর্ম্পক রয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য প্রদান করত। পরবর্তীতে কাস্টমসের বিভিন্ন পদে (পিওন, ঝাড়–দার ও অন্যান্য পদে) চাকুরী প্রদান করে বিভিন্ন চাকুরী প্রত্যাশীদের কাছে বিশ^স্ততা অর্জন করে। মূলত সে কাস্টমসের এ্যাসিস্টেন্ট কমিশনার ও রেভিনিউ অফিসার সুপারিনটেনডেন্ট কর্মকর্তা পরিচয়ে এই প্রতারণার কার্যক্রম পরিচালনা করত। এছাড়াও সে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে দেশের বাহিরে থেকে আসা স্বর্ণ ও মালামাল অর্থের বিনিময়ে ছাড়িয়ে দেয়ার কথা বলে প্রতারণামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করত। সে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় বাজারে একটি রাইস এজেন্সি পরিচালনা করত এবং সে আদম ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত অর্থ দিয়ে সে ফ্ল্যাট বুকিং, জমি ক্রয়, বাড়ি ও বিভিন্নভাবে তার নামে অর্থ সম্পদ গড়ে তোলে।

গ্রেফতারকৃত ওয়ায়েশ করোনী সেলিম দীর্ঘদিন প্রবাসে অবস্থান করে দেশে এসে একটি এজেন্সিতে চাকুরী শুরু করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত নজরুলের সাথে তার প্রায় ১০-১১ বছরের পরিচয়ের সুবাদে এই প্রতারণা চক্রের সাথে সম্পৃক্ত হয়। সে মূলত গ্রেফতারকৃত নজরুলের প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করত। আদম ব্যবসার মাধ্যমে প্রতারণা করে বিদেশে লোক পাঠানো এবং ভিসা তৈরির জন্য মূলত সে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। সে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর কাজ করত বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত সৈয়দ মোঃ এনায়েত ঢাকায় পাঠাও চালক হিসেবে গাড়ী চালাতো। বিগত প্রায় ১ বছর পূর্বে গ্রেফতারকৃত নজরুলের সাথে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে সে গ্রেফতারকৃত নজরুলের পরামর্শে মাসে ২০ হাজার টাকা চুক্তিতে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে এই চক্রের সাথে যুক্ত হয়। সে মূলত চাকুরী প্রত্যাশীদেরকে গ্রেফতারকৃত নজরুলের কাছে নিয়ে আসতো এবং চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত নজরুলের ড্রাইভার পরিচয় দিত।

গ্রেফতারকৃত নাসির উদ্দিন আবির চক্রের মূলহোতা নজরুল এর চালের দোকানের কর্মচারী ছিল এবং মোটরসাইকেল চালাতো। সে মূলত চাকুরী প্রত্যাশীদেরকে গ্রেফতারকৃত নজরুলের কাছে নিয়ে আসতো এবং চক্রের মূলহোতা গ্রেফতারকৃত নজরুলের পিএস পরিচয় দিত।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।