• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১১:৪১ অপরাহ্ন

দুই জেলার সীমানা দ্বন্দ্বে চলছে খুন-খারাবি


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২৪, ৮:০৭ অপরাহ্ন / ৪৫
দুই জেলার সীমানা দ্বন্দ্বে চলছে খুন-খারাবি

সোহেল মোল্লা,পটুয়াখালীঃ সরকারের দেয়া বন্দোবস্ত জমিতে আবাদ করতে গিয়ে লাঠিয়াল বাহিনীর হাতে জুলুম-নির্যাতন ও খুন-খারাবির শিকার হচ্ছে গলাচিপা উপজেলার উত্তর চরবিশ্বাসের শত-শত কৃষক পরিবার।

এরই ধারাবহিকতায় ২০২০ সালের ২১ অক্টোবরে চরফ্যাশন উপজেলা দুলারহাট মুজিবনগরের লাঠিয়াল বাহিনীর হামলায় খুন হয় কৃষক কাশেম মৃধা; আহত হয় অন্তত শতাধিক। পটুয়াখালী-ভোলা জেলার আন্তঃ সীমানা দ্বন্দ্বের ঘটনায় তিন থেকে চার দশক ধরে চলছে নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। সীমানা জটিলতার এ দ্বন্দ্ব মেটাতে ভুমি মন্ত্রনালয়, জেলা-উপজেলা প্রশাসন,পুলিশ বিভাগ এবং ভুমি অফিসে চিঠি চালাচালিসহ থানা পুলিশ এবং স্থানীয় শালিস-বৈঠকে বসাবসি হলে প্রতিকারের বদলে আর্থিক খেসারতসহ নানাভাবে হয়রানী হচ্ছে পরিবার গুলো।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের অভিযোগ পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন থেকে কৃষি জমি বন্দোবস্ত দেয়া হলেও চরফ্যাশন উপজেলা দুলারহাট মুজিবনগরের লাঠিয়াল বাহিনী ওই জমি গায়ের জোরে দখলে নিয়ে আবাদ করেন। এসব দখলবাজীর নেতৃত্বে দেন মুজিব নগরের সাবেক ইউপি সদস্য নাবীন বাতানসহ তার লোকজন। দখলে নেয়া জমির অনুকুলে দখলবাজদের কাছে কোন প্রকার কাগজপত্র না থাকা সত্বেও র্দীঘদিন ধরে জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছেন তারা।

সবশেষ উত্তর চরবিশ্বাসের কৃষক পরিবারের উপর চরফ্যাশনের লোকজন জুলুম নির্যাতন না করার শর্তে নিহত কাশেম মৃধা খুনের মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা ভঙ্গ করে তাদের জুলুম নির্যাতন অব্যাহত রেখেছেন।  এসব অভিযোগ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের কাছে গেলে আইনের নানা ফাকফোকর দেখিয়ে তাদের সেবা থেকে বঞ্চিত করেন।

সরেজমিনে গেলে গলাচিপা উপজেলার উত্তর চর বিশ্বাসের একাধিক কৃষক বলেন, কয়েকটি ধাপে উত্তর চর বিশ্বাসের একাধিক পরিবারকে জমি বন্দোবস্ত দিয়েছেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন। বন্দোবস্ত দেয়া জমি ভোলার দাবী করে দুলারহাট মুজিবনগরের একটি বাহিনী প্রতিবছর তরমুজ মৌসুমে অস্ত্র ও দেশীয় লাঠিশোঠা নিয়ে হামলা-নির্যাতন ও জুলুমবাজী করে জমি দখলে নিয়ে তারা আবাদ করেন। এসব ঘটনায় জেলা-উপজেলা প্রশাসন,পুলিশ বিভাগ ও আদালতে মামলা করেও তাদের দাবানো যাচ্ছেনা।

ক্ষতিগ্রস্ত আনোয়ার হোসেন,মান্নান খান,আনিস খান, আসিয়া বেগম,ফাতেমা বেগম,রাহিমা বেগম,করিম দেওয়ান, আদম আলী দেওয়ান, ফজিলাতুনেচ্ছা, জয়নাল দেওয়ান, ফারুক দেওয়ান, কাশেম ফকির, আনোয়ার সরদার, জলিল ফকিরসহ অসংখ্য ভুক্তভোগী বলেন, নির্বাহী আদালতে মামলা করা হলে আদালতে নির্দেশে বিরোধীয় জমির উৎপাদিত ফসল রক্ষনা-বেক্ষনে উপজেলা কৃষি অফিসারকে রিসিভার নিয়োগ হয়। অথচ আদালতের আইন ভঙ্গ করে তারা গায়ের জোরে সকল ফসল নিয়ে যান তারা।

যা উপজেলা কৃষি অফিসার আরজু আক্তার লিখিত প্রতিবেদনে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে অবগত করেছেন। তবুও কোন প্রকার পদক্ষেপ নেননি সংশ্লিষ্টরা।

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ-বর্তমান গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল চরফ্যাশন উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা হওয়াতে তিনি নিজ এলাকার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমশি করছেন।

এ সব প্রসঙ্গে গলাচিপা থানা পুলিশ এবং চরকাজল পুলিশ ফাড়ীর ইনচার্জ এসআই মোক্তার আলীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, বিষয়টি যেহেতু উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অধিনে। তাই পুলিশের ভুমিকা উপজেলা প্রশাসনের উপর নির্ভর করে।

এ সব প্রসঙ্গে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, উল্লেখিত জমি নিয়ে আদালতে মামলা আছে। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে নবীন বাতেন গং ৮৬ একর জমি দখলে নিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাছাড়া এ ঘটনায় থানা পুলিশকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

অভিযুক্ত নবীত বাতান বলেন, ভোলার জমি পটুয়াখালী থেকে বন্দোবস্ত হওয়ায় আমরা সেই জমির দাবি করছি। জরিপে তা প্রমানিত অথচ উত্তর চর বিশ্বাসের লোকজন তা না মেনে জমির দাবি করছেন। আমার কোন বাহিনী নেই এবং আমি কাউকে মারধোর করিনা।