• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:২৯ অপরাহ্ন

ঢাকার কেরানীগঞ্জের পোশাক পল্লী ঝিমোচ্ছে ক্রেতার অভাবে


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১, ২০২৩, ১২:৪০ অপরাহ্ন / ৮৪
ঢাকার কেরানীগঞ্জের পোশাক পল্লী ঝিমোচ্ছে ক্রেতার অভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ রাজধানীর অদূরে বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে কেরানীগঞ্জ পোশাকপল্লী। পাইকারি পোশাক কেনাকাটার জন্য বিখ্যাত এ পল্লিতে সারা বছরই লেগে থাকে খুচরা ব্যবসায়ীর ভিড়। এখান থেকে কেনা পোশাকে সাজে তাদের বিপণিবিতান। ঈদ বা উৎসবে আরও প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে দেশের বৃহৎ এ পোশাকপল্লি। উৎসব ঘিরে সাধারণ মানুষ যখন কেনাকাটা শুরু করে, কেরানীগঞ্জের এ পল্লীর বেচাকেনা ততদিনে একদম শেষের দিকে। বছরের পর বছর ধরে এমনটাই হয়ে আসছে। তবে এ বছরের চিত্র একদম ভিন্ন। প্রতিবারের মতো পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। তবে মার্কেট গুলোতে নেই ক্রেতার ভিড়। সারা দেশের পোশাকের প্রায় ৬০ শতাংশই যায় কেরানীগঞ্জের এই পোশাকপল্লি থেকে। দেশের নামিদামি মার্কেট ও দোকানগুলোতে শোভা পায় এখানকার তৈরি পোশাক। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে এ এলাকার মার্কেট গুলোতে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট কারখানাও। ঈদ এলেই এসব কারখানায় পোশাক তৈরির তোড়জোড় চলে। বছরে দুই ঈদ ও শীতের সময় কেরানীগঞ্জে বেচাকেনার ধুম পড়ে যায়। প্রতিবছর রমজান শুরুর আগ থেকেই এখনকার মার্কেটগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা শুরু হয়। তবে এবার রমজানের প্রথমভাগ শেষ হতে চললেও তেমন আনাগোনা নেই খুচরা ব্যবসায়ীদের।গত বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জের জেলা পরিষদ মার্কেট, আলম টাওয়ার মার্কেট, মাহবুব আলম মার্কেট, নুর সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ সামনে রেখে নানা ডিজাইনের পোশাক নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। মেয়েদের থ্রি-পিস, ছেলেদের প্যান্ট, পাঞ্জাবি, শার্ট থেকে শুরু করে ছোটদের পোশাক সবকিছুই আছে এখানে।

ব্যবসায়ীরা জানান, শবে মেরাজের পর থেকেই মূলত ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়। আর শবে বরাতের পর তা পুরোদমে জমে ওঠে। রমজানের দ্বিতীয় সপ্তাহেই শেষ হয় এ বেচাকেনা। তবে এবার ক্রেতার ভিড় নেই। রমজানের প্রথম সপ্তাহ পার হলেও শুরু হয়নি বিক্রি। এমনকি কারখানাগুলোতেও পোশাক তৈরির তোড়জোড় নেই। তাদের দাবি, গত ঈদের তুলনায় এবার বিক্রি নেমেছে অর্ধেকে। অনেকের আবার প্রতিদিন নামমাত্র বিক্রিও হচ্ছে না। এমনকি করোনার সময়ও এর থেকে বিক্রি ভালো ছিল। আগে এ সময় যেখানে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা বিক্রি হতো, সেখানে এবার দিনে বিক্রি হচ্ছে ১ থেকে ২ লাখ টাকা। কিছু কিছু দোকানে অবশ্য ৩ থেকে ৪ লাখ টাকাও পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। যদিও এসব দোকানে আগে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো। জিন্স প্যান্টের জন্য প্রসিদ্ধ কেরানীগঞ্জের জেলা পরিষদ মার্কেট। বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ক্রেতাশূন্য মার্কেটটি। কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এখন ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছেন মালিক এবং বিক্রেতারা। মার্কেটের রাজ প্যান্ট হাউসের মালিক রাজ এবং বিক্রয়কর্মী আবু কালাম জানান, আগে ঈদের সময় ক্রেতার ভিড়ে দোকান থেকে ওঠা যেত না। আর এখন বসে থাকতে হচ্ছে। নিউ মায়ের দোয়া প্যান্ট হাউসের বিক্রয়কর্মী মো. আব্দুর রহমান জানান, শবে বরাতের পর থেকে বিক্রি কিছুটা ভালো ছিল। তবে এখন কম হচ্ছে। অন্য ঈদের তুলনায় এবার অনেক কম বিক্রি হচ্ছে। আলম টাওয়ারের দোকানগুলোর অবস্থাও প্রায় একই। ঈদের আয়োজনে এখানে রয়েছে পাঞ্জাবি, শার্ট, সালোয়ার-কামিজ, জিন্স প্যান্ট, বাচ্চাদের আইটেমসহ সব ধরনের পোশাক। পাঞ্জাবির দোকান ‘শেখ সাদি’র ম্যানেজার গোলাম রাব্বানীসহ দুই বিক্রয়কর্মী জানান, গত বছরের চেয়ে এবার বেচাবিক্রির অবস্থা অনেক খারাপ। যদিও সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় কম পাঞ্জাবি তৈরি করেছেন। তবে যা আছে, সেগুলোও বিক্রি হচ্ছে না। নিম্নমানের পাঞ্জাবিগুলোই বেশি বিক্রি হচ্ছে।

শিশুদের পোশাক রয়েছে কিডস ক্লাব নামে একটি দোকানে। সেখানেও ক্রেতা নেই। দোকানটির ম্যানেজার হৃদয় খান জানান, এখানকার বেশিরভাগ পণ্য যায় মফস্বলে। গ্রাম এবং মফস্বলের ওপর ভিত্তি করেই কেরানীগঞ্জের ব্যবসা চলে। খুচরা বিক্রেতারা যদি বিক্রি না করতে পারেন, তাহলে তো আমাদেরও বিক্রি হবে না। ঈদ উপলক্ষে প্রায় ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তবে প্রত্যাশিত বিক্রি হবে না। আলম টাওয়ারের প্যান্ট ক্লাবের মালিক দিন ইসলাম বলেন, মানুষের কাছে হয়তো টাকা নেই। এ ছাড়া মাসের শেষের দিক হওয়ায় অনেকে বেতন পাননি। তাই বেচাকেনা কম হচ্ছে। মফস্বল এবং খুচরা বাজারে যদি বেচাকেনা না হয়, তাহলে তো পাইকারি বাজারেও বিক্রি হবে না। কেরানীগঞ্জের মাহবুব আলম মার্কেটে গিয়েও দেখা যায়, ক্রেতার অভাবে দোকানগুলোতে যেখানে ঈদ মৌসুমে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতো, সেখানে এবার দিনে এক লাখ টাকা বিক্রিও কঠিন হয়ে পড়ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, খুচরা বিক্রেতারা নগদ টাকা আটকে রাখতে চান না, তাদের যতটা প্রয়োজন ততটাই কিনছেন। আগে যেখানে ৫০টি শার্ট কিনতেন, এখন সেখানে ৫-৬টি কিনছেন। তবে ভিন্ন চিত্রও দেখা গেছে মাহবুব আলম মার্কেটের ‘ফান ক্লাব’ নামক একটি দোকানে। সেখানে মোটামুটি বেচাকেনা হচ্ছে। দোকানের মালিক মো. ইমরান জানান, পরিচিত ক্রেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় অন্যদের তুলনায় তার বেচাকেনা একটু বেশি হচ্ছে।

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি স্বাধীন শেখ বলেন, এই এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার দোকান রয়েছে। তবে কোনো দোকানেই এখনো প্রত্যাশিত বেচাবিক্রি হচ্ছে না।