• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫২ অপরাহ্ন

ঢাকার আশুলিয়ায় পাপিয়া খ্যাত সালমার দাপটে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী : প্রশাসন নীরব 


প্রকাশের সময় : মার্চ ৮, ২০২৪, ১:৪৯ অপরাহ্ন / ১৭৫
ঢাকার আশুলিয়ায় পাপিয়া খ্যাত সালমার দাপটে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী : প্রশাসন নীরব 

নিজস্ব প্রতিবেদক,সাভার, ঢাকাঃ ঢাকার সাভারের  আশুলিয়া থানাধীন গাজীর চট এলাকায় একজন সুনামধন্য পুলিশ কর্মকর্তার কথিত স্ত্রী পরিচয়ে এক নারীর আধিপত্য বিস্তার ও দাপটের প্রভাবে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।

বিয়ে বানিজ্য করে তিনি এখন বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন বলেও গুঞ্জন স্থানীয়দের। তিনি এলাকায় জনপ্রতিনিধি হওয়ার চেস্টায় আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও জানান এলাকাবাসী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ভূক্তোভোগি জানান, অভিযুক্ত সালমা আক্তার (৪৫) মধ্যে গাজীর চট এলাকার শাহাজান ড্রাইভারের মেয়ে। তার নিজের আয়ের উৎস না থাকলেও, কয়েক ডজন বিবাহের মধ্যে দিয়ে সে কোটিপতি বনে যায়। আশুলিয়ার গাজিরচট, ডিওএইচএস ও ঢাকার শান্তিবাগ এলাকায় বেশ কয়েকটি আলিশান ফ্লাট বাড়ির মালিকসহ বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন তিনি।

গত দুই যুগ আগে কাঠগড়া এলাকায় মোঃ হান্নানের সাথে বিবাহ হয় সালমার। সে ঘরে দুইটি সন্তান থাকা অবস্থায় স্বামীকে তালাক দেয় সে। এরপর ধামরাই এলাকায় দ্বিতীয় বিয়ে করে সালমা আক্তার। কিছুকাল পরে সে ঘরে এক মেয়ে থাকা অবস্থায় তাকে তালাক দিয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মনিরকে বিয়ে করে। এর কিছুকাল পরে কাতার প্রবাসী ওবায়দুর রহমানকে বিয়ে করে সালমা।

এছাড়াও ভিডিও কলের মাধ্যমেও তার বিরুদ্ধে একাধিক বিবাহের অভিযোগ রয়েছে। বিগত সকল স্বামী তালাকের সাথে সাথে তাদের অর্থ সম্পদ, জমি- ফ্লাট প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় সালমা এবং তার হাতে আসে বিশাল পরিমান সম্পদ ও কালো টাকার পাহাড় । তার কিছুকাল পর এক পুলিশ কর্মকর্তাকে বিয়ের দাবি করে সালমা, মূলত এর পর থেকেই সে ক্ষমতার লোভে বেপরোয়া হয়ে উঠে।

তার রাজনৈতিক কোনও পদ পদবী না থাকলেও, কালো টাকার গরমে সে এখন জনপ্রতিনিধি হওয়ার নেশায় বড় বড় রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের ছবি ও পরিচয় ব্যবহার করছেন। প্রবাদ আছে ঘটি ডুবে না, নাম তার তাল পুকুর। সালমা জীবনভর বিয়ে-শাদীর রাজনীতিতে জড়িত ছিলো। যার জনপ্রিয়তা শুন্যের কোঠায়। সে বর্তমানে জনপ্রতিনিধি হওয়ার নেশায় এবং নিজের আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন তাতে এলাকার ত্যাগী সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ ধরনের ব্যক্তিরা যদি জনপ্রতিনিধি হয় তাহলে সমাজের চিত্র কি হতে পারে তা অকল্পনীয়।

স্থানীয়রা আরও জানান, সালমা ওই পুলিশ কর্মকর্তার প্রভাব খাটিয়ে একের পর এক আধিপত্য বিস্তার ,প্রতিবেশীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মামলায় জড়ানোর হুমকি দিয়ে এলাকার মানুষদের হয়রানীর মাধ্যমে জিম্মি করতে চাইছে। এক কথায় সে রাম রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে এসব ঘটনায় এলাকার মানুষেরা সরাসরি তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়না। ভূক্তভোগিরা ঐ ভয়ংকর নারীর কবল থেকে দেশ এবং সমাজকে বাচাঁতে প্রশাসন ও দূর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা মনে করেন দূদক সঠিকভাবে তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে থলের বিড়াল, সেইসাথে দেশবাসী জানতে পারবে আশুলিয়ার পাপিয়া খ্যাত সালমার অঢেল সম্পদের আসল রহস্য। সালমার ভাই দেলোয়ার একাধিকবার মাদকসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। দেলোয়ার মুলত সালমার ছত্রছায়ায় এলাকায় ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা ও কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

স্থানীয় প্রতিবেশীরা জানান, সালমা গংরা ক্ষমতার দাম্ভিকতায় দীর্ঘদিন যাবৎ আমার সাথে শত্রুতা সৃষ্টির পায়তারা করে আসছে। সালমা বিভিন্ন সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় তার গুরুজনদের হেয়প্রতিপন্ন করার হীন মানসিকতায় বিভিন্ন আপত্তিকর কথাবার্তা পোস্ট দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটায় । এতে করে তারা বিব্রতবোধ সহ নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে। সে নিজের আত্মীয়স্বজন ও গুরুজনদের সাথেও গালি-গালাজসহ মারমুখী আচরণ করে। সেইসাথে ফোন করে তার সমর্থকদের জড়ো করে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এরপর উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা করে জেল খাটাবে এবং দেখে নিবে বলে হুমকি দেয়। তার সাথে কতিপয় বখাটে, সন্ত্রাসীদের সাথে সক্ষতা রয়েছে, সালমা গংরা খুব খারাপ প্রকৃতির মানুষ। সালমা নিজের কু- স্বার্থ চরিতার্থ করতে যা খুশি তাই করতে পারে।এ বিষয়ে দু’পক্ষই আশুলিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সালমা আক্তার তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি বর্তমানে নিজ অর্থায়নে জনসেবার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখছি। যেহেতু আমি একজন সুনামধন্য পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী, সে কারনে আমার সমাজের প্রতি একটা দায়বদ্ধতা আছে। আমার বিরুদ্ধে যাহারা অভিযোগ করেছে তারাই এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করে। মটরবাইকে বিকট শব্দের সাইলেন্সার লাগিয়ে মানুষকে ভয় দেখায়, শব্দ দূষণে পরিবেশ নষ্ট করে। আমি কাউকে হুমকি বা ভয়ভীতি এবং অযথা হয়রানি করেছি, পুলিশের প্রভাব খাটিয়েছি এ অভিযোগও ভিত্তিহীন। যারা সমাজে অন্যায় করছে আমি তার প্রতিবাদ করছি। গত ০৬/ ০৩/২৪ তারিখে আমি এদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছি। এলাকাবাসীর আমার প্রতি আস্থা রয়েছে। কিছু স্বার্থম্বেষী মহল তারা সুবিধা করতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে।

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানা পুলিশের উপ- পরিদর্শক ( এস আই) জোহাব আলী বলেন, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে আশুলিয়ার পাপিয়া খ্যাত সালমার ক্ষমতার উৎস কথিত স্বামী সেই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে মুঠোফোনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ এলাকায় আমার কোন স্ত্রী নেই, ওই নারী আপনাদের মিথ্যা কথা বলেছে। কেউ যদি কারো নাম ব্যবহার করে অপরাধ করে, তবে সে নিজেই অপরাধী। ফেইসবুকে আপনাকে স্বামী দাবি করে পোস্ট দিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এসব দেখিওনা শুনিওনা। দয়াকরে আমাকে এইসবের ভিতরে টানবেন না। সে অপরাধ করলে আপনারা তার বিরুদ্ধে লেখালেখি করেন। আমার সাথে তার কোনও সম্পর্ক নাই ফলে তার দ্বায়িত্ব আমি নিব না। অপরাধ যে করবে তার দ্বায়ভার সে নিবে, আইন আইনের গতিতে চলবে।