• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন

জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক চা বিক্রেতা আয়েশা


প্রকাশের সময় : মে ৫, ২০২৩, ১:৫৪ অপরাহ্ন / ৭৪
জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক চা বিক্রেতা আয়েশা

নিজস্ব প্রতিবেদক, নাটোরঃ দোকানে দোকানে গিয়ে ফেরি করে চা বিক্রি করছেন এক মাঝ বয়সী নারী। তার এক হাতে একটি চায়ের ফ্লাক্স আরেক হাতে রাখা বালতিতে পানি। ফ্লাক্সের পাশে ঝোলানো রয়েছে কয়েকটি চায়ের কাপ। কাপগুলো বালতিতে রাখা পানিতে ধুয়ে চা দিচ্ছেন চা-পিপাসুদের। আর বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন চা-পিপাসুরাও। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে দৃশ্যটি দেখা যায় নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুর বাজারে। জানা যায়, চা বিক্রেতা ওই নারীর নাম আয়েশা বেগম। পাশের উপজেলা লাপুরের আব্দুলপুর এলাকার মেয়ে আয়েশা সুখের ঘর বাধেন বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নের মিশ্রিপাড়া গ্রামের ফজলুর রহমানের সাথে। স্বামী দয়ারামপুর বাজারে কড়ইতলা নামক স্থানে একটি দোকানে চা বিক্রি করে সংসার চালাতেন। ভালোই চলছিল আয়েশা- ফজলুর সংসার। তবে কিছুদিন যেতেই স্বামীর মাথায় ঢোকে জুয়ার নেশা। আর তখন ঋণ গ্রস্থ হয়ে পড়েন স্বামী ফজলুর রহমান। ইতোমধ্যে জন্ম নেয় তিনটি কন্যা সন্তান। ঋণের জ্বালায় সংসারে হাল ধরেন আয়েশা। শুরু করেন ভুড়ি বিক্রি। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত গিয়ে তিনি ভুড়ি বিক্রি করে পরিশোধ করেন ঋণের টাকা। এভাবে কস্টের মাঝেও সুখ খুঁজে নিয়েছিলেন আয়েশা বেগম। কিন্তু চার বছর আগে হঠাৎ করে হৃদ- রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় স্বামী ফজলুর রহমান। এবার কিভাবে কি করবেন বুঝে পাচ্ছিলেন না। তখন স্বামীর মৃত্যুর তৃতীয় দিন রাতে তিনি স্বপ্নে দেখেন তার স্বামী তাকে তার চায়ের দোকানে যেতে বলছেন। আর সেই স্বপ্ন দেখার পর দিনই তিনি যান মৃত স্বামীর চায়ের দোকানে। সেখানে গিয়ে দেড় কেজি চিনি আর এক প্যাকেট চা পাতা পান। সেগুলো নিয়ে বাড়ি আসেন এবং একটি ফ্লাক্স ও কয়েকটি কাপ কিনে স্বামীর রেখে যাওয়া চা চিনি দিয়ে শুরু করেন ফেরি করে দোকানে দোকানে গিয়ে চা বিক্রি করা। শুরু হয় নতুন করে আয়েশার জীবন যুদ্ধ। তবে মহান সৃষ্টি কর্তার কৃপায় এভাবে চা বিক্রি করেই ভাগ্য ফিরে তার। চা বিক্রির উপার্জন দিয়ে ক্রয় করেন জমি, তৈরি করেন ছোট্ট একটি সুন্দর বাড়ি। উপযুক্ত পাত্রের সাথে বিয়েও দিয়েছেন তিন কন্যাকেই। সকল অনুষ্ঠান যাযথভাবে আদর আপ্যায়নও করছেন মেয়ে জামাইদের। থেমে যায়নি আয়েশার গল্প এখানেই। আয়েশার উপার্জন থেকে জমানো টাকা সাধ্যমত দান করছেন স্থানীয় মসজিদ, কবরস্থান ও মাদ্রসায়।

এ বিষয়ে সংগ্রামী আয়েশা বেগম বলেন, স্বপ্নে স্বামীর আদেশ দেখে এই পেশা বেছে নিয়েছি। আল্লাহ সহায় হওয়ায় আমি খুব ভালো আছি। আমার মত অনেক নারী ভিক্ষা করছেন। কিন্তু আমি নিজে পরিশ্রম করে এত কিছু করছি তাতে আমার খুব ভলো লাগছে। তিনি আরো বলেন, সকালে ফজরের নামায পড়ে সংসারের কাজ শেষ করে চা তৈরি করে বাজারে আসেন আবার দুপুরে বাড়ি গিয়ে যোহরের নামায পড়ে বাজারে আসেন আবার বিকালে বাড়ি গিয়ে আসরের নামায পড়ে বাজারে আসেন এবং এশার আযান হলে বাড়ি চলে যান। এভাবে প্রতিদিন ৮-১০ ফ্লাক্স চা বিক্রি করেন তিনি। তিনি দেশাবাসীকে তার সুস্থতার জন্য দোয়া এবং তার বয়সী যারা ভিক্ষা করেন তাদের ভিক্ষা বৃত্তি ছেড়ে কোন কাজ করার আহ্বান জানান। স্থানীয়রা বলছেন যদি সঠিক ভাবে বিচার বিশ্লেষণ করা হয় তবে জীবন যুদ্ধে হার না মানা এই আয়েশা বেগমই প্রকৃত জয়ীতা সম্মাননা পাবার অধিকার রাখে।