• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫০ অপরাহ্ন

চলনবিলে নৌ-ভ্রমণের আড়ালে চলছে অশ্লীল নৃত্য ও অসামাজিক কার্যকলাপ : প্রশাসন নীরব


প্রকাশের সময় : জুলাই ২৪, ২০২২, ৭:১২ অপরাহ্ন / ৫২৩
চলনবিলে নৌ-ভ্রমণের আড়ালে চলছে অশ্লীল নৃত্য ও অসামাজিক কার্যকলাপ : প্রশাসন নীরব

এস এম মজনু, সিরাজগঞ্জঃ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের নদ-নদী ও বিলের পানিতে নৌ ভ্রমণ ও বিনোদনের নামে চলছে নগ্ননৃত্য ও দেহ ব্যবসা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য যাত্রাপালা নেই আগের মতো, সবার সাথে মিলেমিশে যাত্রা দেখার আনন্দ সবই যেন হারিয়ে ফেলেছে গ্রামবাংলার মানুষ। আর এখনকার যুগের চিত্রটা ভিন্ন, সব কিছু হারিয়ে গিয়েছে। আর নতুন রূপে ফিরে এসেছে অশ্লীল আর বেহায়াোনা, হারিয়ে গেছে গ্রামের সেই যাত্রাপালা।

এখনকার চিত্রটা একটু ভিন্ন। তাই ডিজিটাল অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে বেপরোয়ায় লিপ্ত হয়েছেন হাজার হাজার স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করা যুবক ও তরুণ ছেলেরা। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকা অবস্থায় বেছে নিচ্ছে ধ্বংসের পথ। দিনভর ভাড়া করা এ সকল নৌকায় মাইক ও সাউন্ডবক্স লাগিয়ে উঠতি বয়সী যুবকরা মাঝবয়সী নারীদের নিয়ে করছে বেহায়াপানা, নাচ-গানের সাথে চলছে মাদক সেবন। নৌকার মধ্যে এক শ্রেণির লোক নর্তকীদের উলঙ্গ নাচ ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করছে। নৌকায় পতিতাবৃত্তি চালিয়ে উঠতি বয়সী যুবকদের বিপথগামী করছে নারী দেহ ব্যবসায়ীরা। নারী লোভে ও নেশার টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে উঠতি বয়সী যুবকরা করছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমেই এখানে চলে পিকনিকের নামে বাণিজ্য। এই চিহ্নিত দালালদের পিছনে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও নেতাদের ছত্রছায়া থাকায় সব ম্যানেজ করে চলে তারা। এই দালালরা দুইভাবে নারী ভাড়া দিয়ে থাকে। পিকনিকে ও গভীর রাতে পতিতা নিয়ে নৌকায় তুলে ব্যবসা করে। এই পিকনিকের নৌকা এলাকায় ‌‘প্রমোদতরী’ নামে পরচিতি।

এলাকাবাসী জানায়, হাটিকুমরুল ইউনিয়নের একজন ভাড়াটিয়া বাসিন্দা আল আমিন হোসেন তিনি ছিলেন একজন ঝাল মুড়ির দোকানদার প্রতিদিন সে দিনের বেলা ঝালমুড়ি বিক্রি না করলেও ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন রাতের বেলায় ঝালমুড়ি বিক্রি করতে করতে হঠাৎ করেই সে পতিতা মহিলাদের কন্টাক্ট করে লিপ্ত হন দেহ ব্যবসা সাথে, শুরু করেন দেহ ব্যবসা।

পরবর্তীতে ভিন্নরূপে ফিরলেন আল-আমিন একটু কৌশল পাল্টালেন তিনি তেমনি আর আড়ালে না থেকে এবার নতুন কৌশলে হাত করলেন সিরাজগঞ্জ জেলা যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদ নামের একটি সংগঠনের নেতাদের। এরপর চালু করলেন শিল্প নামের নর্তকীর ব্যবসা সে তার নিজের ভাড়াটিয়া বাসায় চার পাঁচটি মেয়ে রাখে সব সময় নর্তকীদের দিয়ে দিনে নৌকা পিকনিক ও রাতে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। এভাবে এলাকাবাসী ও প্রশাসনকে ফাকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

অপর দিকে জাহিদ বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই যুক্ত থাকতেন গানবাজনার সাথে যাত্রা শিল্পিদের সাথে চলাফেরা করতে করতে তিনিও বিয়ে করেন একজন নর্তকীকে আর তার নাম চামেলি খাতুন জাহিদ ও তার বউ দুজন মিলেই শুরু করেন নাচগান এর শিল্পীর ব্যবসা। বিভিন্ন গ্রামও শহরের মেয়েদের নিয়ে এসে তারা বাসায় রেখে খাইয়ে-পরিয়ে চালায় সেই নৌকা পিকনিক নামে নানা অসামাজিক কর্মকান্ড। এছাড়াও আলামিন, শাহীন, গভীর রাতে যুবকদের কাছে নারী ভাড়া দিয়ে দেহব্যবসা করে থাকে। আর দালালরা নারী নর্তকীদের বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া করে রাখে। জাহিদ,আলা-আমিন, শাহিন কি কাজ করে কিভাবে করে এবং তার খুঁটির জোর কোথায়-তা নিয়ে সবার মনে প্রশ্ন জেগেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিদিনই চলনবিল নলকা ফুলজোর নদী, দহুকুলা, মোহনপুর, চাটমোহর, উধুনিয়া, হাটিকুমরুল গোলচত্বর তথা সিরাজগঞ্জ রোড হতে পিকনিক অথবা ভ্রমণের নামে নৌকায়, নর্তকী ও পতিতা ভাড়া দেয়। আলম, শফি, ময়নাল, হাসান, দালালরা মূলত হাটিকুমরুল দবিরগঞ্জসহ আরও বেশ কয়েটি স্থান থেকে নর্তকী ও দেহ প্রসারণী সরবারাহ করে থাকে। এই সকল দালালরা নর্তকী এবং দেহ প্রসারণীদের বেশ ভালোই অর্থ দিয়ে থাকে। যারা নগ্ননৃত্যের পাশাপাশি দৈহিক মেলামেশা করে, তারা ২-৩ হাজার টাকা করে পেয়ে থাকে। এইসব দালালরা যুবক ও স্কুলগামী ছাত্রদের জীবন ধ্বংস করছে বলে মনে করেন বিভিন্ন এলাকার গ্রামবাসী।

সিরাজগঞ্জ জেলা যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদ এর সভাপতি মনজেল হক ও মিজানুর রহমান জানান, বাংলাদেশে যাত্রাপালা প্রায় বিলুপ্তের পথে। এখন শুধু অশ্লীল আর বেহায়া পানায় ভরপুর তাই আমার ক্লাবের সবাইকে বার বার বুঝাতে চেয়েও আমরা ব্যর্থ যাত্রা শিল্পের বাইরে কেউ কুকাম ও অশ্লীল মেয়েদের নিয়ে ব্যবসায় লিপ্ত হলে এর দায়ভার সিরাজগঞ্জ জেলা যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদ নেবে না।

সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি, কোথাও অশ্লিল কার্যকলাপ হলে বা অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জল হোসেন বলেন, সংগঠনের নামে কোন ব্যাক্তি বা সংগঠন অশ্লিল কার্যকলাপে লিপ্ত হয় বা নারীদের দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যপারে ভ্রমন পিপাসু সাধারন জনগন ও স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি এসকল নৌকা ভ্রমনের নামে অশ্লিলতা ও চলন বিলের সৈন্দর্য্য রক্ষা সহ এলাকার সুষ্ঠ স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে এসব ভুইফোর সংগঠন বন্ধে প্রশাসনের সুদৃষ্টি দেওয়া জরুরী।