• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৭:২৯ অপরাহ্ন

চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা নিয়ে প্রতিবেদন করায় সাংবাদিক আইয়ুব কে ‘হত্যাচেষ্টা’ আটক হয়নি চক্রের কেউ!!


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১০, ২০২৩, ৩:০৬ পূর্বাহ্ন / ৬৪
চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা নিয়ে প্রতিবেদন করায় সাংবাদিক আইয়ুব কে ‘হত্যাচেষ্টা’ আটক হয়নি চক্রের কেউ!!

এম রাসেল সরকারঃ পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করে এখন হাসপাতালে শয্যাসায়ী চট্টগ্রামের সাংবাদিক আইয়ুব মিয়াজী, বর্তমানে পুরো পরিবার নিয়ে হুমকির মুখে তিনি৷ মঙ্গলবার তাকে নির্যাতন করে একটি ভবনের দোতলা থেকে ফেলে দেয়ার পরও গ্রেপ্তার হননি কেউ৷

চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা নিয়ে সংবাদ করার প্রেক্ষিতে স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিককে ভবনের দোতলা থেকে ফেলে ‘হত্যার চেষ্টা’ করা হয়৷ তাকে অচেতন অবস্থায় ফেলে দেয়ার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়৷ আইয়ুব মিয়াজী জানান এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা পাহাড় কাটা চক্রের সদস্য।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আইয়ুব মিয়াজী বলেন, সন্ত্রাসীদের হুমকির মুখে আমার পরিবারের সদস্যরা এখন আমার সঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন৷ সুস্থ হওয়ার পর সবাইকে নিয়ে এলাকায় ফিরতে পারব কী-না জানি না।

আইয়ুব মিয়াজীর বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলায়৷ তিনি দৈনিক জনবাণী পত্রিকার চন্দনাইশ উপজেলা প্রতিনিধি৷ ওই এলাকায় পাহাড় কাটা নিয়ে কয়েকটি প্রতিবেদন করায় সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে মোট তিন লাখ টাকা জরিমানা করে ও পাহাড়ের মাটি কাটার যন্ত্রপাতি জব্দ করে৷ তারই জেরে মঙ্গলবার বিকেলে সন্ত্রাসীরা চন্দনাইশের দোহাজারি এলাকায় একটি ভবনের দোতলা থেকে তাকে ফেলে দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে৷ তার আগে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা তো দূরের কথা, কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনও হয়নি।

জানা গেছে, চন্দনাইশ এলাকায় পাহাড় কাটা চক্রের নেতৃত্ব দেন আলাউদ্দিন এবং ফারুক নামে দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি৷ তাদের সহায়তা করে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা৷ আইয়ুব মিয়াজী জানান, হামলার সময় ওই দুই জন ছাড়াও পুলিশের একজন সোর্স এবং আরো কয়েকজন সন্ত্রাসী ছিলো৷ তাদের পাহাড়কাটা গ্রুপে মোট ২০-২৫ জন আছেন।

চন্দনাইশ এলাকায় পাহাড় কাটার জন্য ‘প্রতি স্পটে পুলিশ এককালীন ৮০ হাজার টাকা করে নেয়’ বলে তার অভিযোগ৷ বিনিময়ে মোবাইল কোর্টের অভিযানের জন্য যখন পুলিশ চাওয়া হয় তখন তাদের আগেই খবর দিয়ে দেয়া হয়৷ ফলে তাদের আটক বা পাহাড় কাটা বন্ধ হয় না।

তিনি বলেন,” শুধু চন্দনাইশ নয়, পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামে শত শত পাহাড় আর কয়েক হাজার একর রিজার্ভ ফরেস্ট উজাড় করা হচ্ছে৷ পাহাড়ে সামাজিক বনে আগুন দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে৷ সরকার গুচ্ছ গ্রাম করার জন্য যে পাহাড়গুলো ঠিক করেছে তারও মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে৷ এই এলকায় কয়েকশ ইটভাটা আছে৷ পাহাড়ের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা হয়।

চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার চৌধুরী দাবি করেন, ‘‘আগে অনেক পাহাড় কাটা হয়েছে৷ এখন আর পাহাড় কাটা হয় না। আর সাংবাদিকের ওপর যারা হামলা করেছেন তাদের গ্রেপ্তার করতে বলা হয়েছে৷ আমি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি তুলেছি৷”

চন্দনাইশ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন,” পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিপ্তরের৷ তারা যখন ফোর্স চায় আমরা তখন দিই৷’ তবে তিনি পাহাড়কাটা চক্রের কাছ থেকে প্রতি স্পটে ৮০ হাজার টাকা করে উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘যারা অভিযোগ করে তারাই জানে কারা নেয়৷ পুলিশ নেয় না।”

সাংবাদিককে দোতলা থেকে ফেলে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িত একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জনান তিনি। কিন্তু এজাহারভুক্ত মূল দুই আসামির কেউই গ্রেপ্তার হয়নি৷ এর আগে গত বছরের ২৯ জুলাই আরো একবার সাংবাদিক আইয়ুব মিয়াজীকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ওপর হামলা চালানো হয়েছিলো৷ সেই আসামিরাও গ্রেপ্তার হয়নি৷

গত ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান চৌধুরীর গাড়িতেও হামলা চলানো হয়৷ পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল ইসলাম জসিমের ইন্ধনে তারা লোকজন হামলা চালায় বলে অভিযোগ৷

বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এবং বেলার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সদস্য আলিয়ার রহমান বলেন, ‘‘সেই ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম জসিমই এখন চট্টগ্রামের আকবর শাহ এলাকায় পাহাড় কেটে সড়ক তৈরি করছেন৷ সিটি কর্পোরেশন সেই সড়কের অনুমোদন এবং অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে৷ পাহাড় কাটার সময় ভূমিধ্বসে একজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন৷”

তিনি বলেন, “এই এলাকার পাহাড়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তিন হাজার পরিবারকে থাকতে দিয়েছে৷ উদ্দেশ্য পাহাড় দখল করা৷ এখন সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ(সিডিএ) সবাই মিলে পাহাড় দখল করছে৷”

তিনি বলেন, “আমরা চট্টগ্রামের পাহাড় নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেছিলাম বেলার পক্ষ থেকে৷ হাইকোর্ট স্পষ্ট নির্দেশ দেয় যে চট্টগ্রামের পাহাড়ের শ্রেণিবিন্যাস করতে হবে৷ তারপর বৈজ্ঞানিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে পাহাড়ের ব্যবহার নিয়ে। কিন্তু এসব মানা হচ্ছে না৷ প্রভাবশালী চক্র সরকারি ও বেসরকারিভাবে পাহাড় ধ্বংস করছে৷ আমরা আবার হাইকোর্টে যাবো। এবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএকে বিবাদি করব।

‘পাহাড় কাটা হচ্ছে না, উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে?

পাহাড় কাটার অভিযোগ যার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের সেই ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম জসিম বলেন, ‘‘আমি তো বেআইনি কিছু করছি না৷ আমি তো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদিত রাস্তা নির্মাণ করছি৷”

তিনি দাবি করেন,”চট্টগ্রামে এখন আর কোনো পাহাড় কাটা হচ্ছে না,উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। কিছু লোক অপপ্রচার করছে। তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ আছে। আগামী নির্বাচনে আমি চট্টগ্রাম চার আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থী। আমি যাতে মনোনয়ন না পাই সেজন্য প্রতিপক্ষ ষড়যন্ত্র করছে৷”

এনিয়ে চেষ্টা করেও চট্টগ্রামের মেয়র ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কারুর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।