
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে স্লোগান দিতে দিতে ছাত্রলীগের একটি মিছিল পুলিশের ওপর হামলা চালায়। ঘটনার জবাবে পুলিশ গুলি ছোড়ে এবং ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রলীগের ১০ কর্মীকে আটক করে।
ঘটনাটি ঘটে ১১ অক্টোবর সন্ধ্যায়। পুলিশ জানায়, মিছিল থেকে হঠাৎ ইট-পাটকেল ছুড়ে মারার পাশাপাশি কয়েকজন কর্মী পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রথমে লাঠিচার্জ ও পরে গুলি চালায়। এ সময় কয়েকজন আহতও হয়।
আটক ছাত্রলীগ কর্মীদের রবিবার খুলশী থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন যমুনা টেলিভিশনের চট্টগ্রাম ব্যুরোর প্রতিবেদক জুবায়ের ইবনে শাহাদাত।
জানা গেছে, জুবায়ের পূর্বে পোর্ট সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলেন এবং তিনি তথ্যমন্ত্রীর আত্মীয়। তথ্যমন্ত্রীর সুপারিশেই তার যমুনা টিভিতে চাকরি হয়েছে—এমনটিও দাবি করেছেন একাধিক সূত্র।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় জুবায়ের ইবনে শাহাদাত কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই ভিডিও ধারণ শুরু করেন। পুলিশ তাকে বারবার ভিডিও বন্ধ করতে অনুরোধ করলেও তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরে, তিনি বাইরে থাকা আটক ছাত্রলীগ নেতাদের স্বজনদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করেন।
বিষয়টি লক্ষ্য করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ— সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি, দক্ষিণ) আমিরুল ইসলাম। তিনি জুবায়েরকে ভিডিও না করার অনুরোধ জানান। এ সময় জুবায়ের ও ডিসি আমিরুল ইসলামের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। ঘটনার দৃশ্য ধারণে করে তা আবার টেলিভিশনে প্রচার করা হয়।
খুলশী থানার একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় অনুমতি ছাড়া ভিডিও করাটা গ্রহণযোগ্য নয়, বিশেষ করে যখন বিষয়টি তদন্তাধীন। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা আছে, তবে সেটি একটি কাঠামোর মধ্যে থাকতে হয়।
সিএমপির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘পেশাদার সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা ও অনুমতির বিষয় রয়েছে, যা সকলের মেনে চলা জরুরি। ওইদিনের ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রিপোর্টার নিষিদ্ধ সংগঠনের পক্ষ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়েছেন। বিষয়টি ঊধ্বর্তনরা দেখবেন।’
জানা গেছে, জুবায়ের ইবনে শাহাদাতের ফুফা শাহাজাহান সিকদার বর্তমানে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মেয়র এবং আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। তাছাড়া মন্ত্রী হাসান মাহমুদের একান্ত সচিব হিসেবে পরিচিত সাংসদ আজাদ তালুকদারও জুবায়েরেরও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।
চট্টগ্রামের প্রবীণ সাংবাদিকদের একাংশ বলেন, আইনের প্রক্রিয়া চলাকালে ভিডিও ধারণ করা সাংবাদিকতার নীতি নয়। সাংবাদিকতা মানে দায়িত্ব নেওয়া, প্রশাসনের কাজে বাধা সৃষ্টি করা নয়।
আরেকজন সিনিয়র রিপোর্টার মন্তব্য করেন, সারাদেশে যখন মানুষ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত, তখন কিছু তথাকথিত সাংবাদিক পতিত ক্ষমতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে আবারও মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে। এদের আমরা সাংবাদিক বলতে রাজি নই।
ডিসি আমিরুল ইসলাম বলেন, আইনের প্রয়োগে কেউ বাধা দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব। সাংবাদিকদের আমরা সম্মান করি, কিন্তু নিষিদ্ধ সংগঠনের হয়ে মাঠে নেমে পুলিশকে উস্কানি দিলে তা মেনে নেওয়া হবে না।
পরবর্তীতে জুবায়েরের সমর্থনে যে ‘প্রতিবাদ ও মানববন্ধন’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, তাতেও উপস্থিত ছিল যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বক্তব্য দেয় এবং মানববন্ধনের নেতৃত্বও দেয়। ফলে প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে— এই প্রতিবাদ কি সাংবাদিকতার পক্ষে, নাকি নিষিদ্ধ দলীয় পুনরুত্থানের অংশ?
আপনার মতামত লিখুন :