• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ০১:২৭ অপরাহ্ন

গণপূর্ত বিভাগ-৪ : সহকারী হিসাবরক্ষক সালাউদ্দিন শত কোটি টাকার মালিক : দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সাধারণ মানুষ


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৪, ২০২৫, ৯:২০ পূর্বাহ্ন / ৫৩
গণপূর্ত বিভাগ-৪ : সহকারী হিসাবরক্ষক সালাউদ্দিন শত কোটি টাকার মালিক : দুদকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সাধারণ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ গনপূর্ত অধিদপ্তরে আরেক আতঙ্কের নাম মোঃ সালাউদ্দিন। তিনি ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৪ এ একজন উপ-বিভাগীয় সহকারী হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। যার বেতন স্কেল ২০ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি মাসিক আয় করেন প্রায় ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা।

তিনি চলাফেরা করেন রাজকীয় স্টাইলে। চড়েন কোটি ঢাকার মার্সিটিজ ব্রান্ডের গাড়ীতে। শত কোটি টাকার দুর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তা সালাউদ্দিন নান্য অনিয়ম করেন। তিনি নিজ কর্মস্থলে না এসেও মাসের পর মাস বেতন তুলছেন। সেই সাথে নিয়মিত গ্রহন করছেন অনিয়মের মাসোহারা। এ বিষয়টি অফিসের সকলে জানলেও নিশ্চুপ রয়েছেন কোন এক ভয়ে।

মোঃ সালাউদ্দিন মাসে ২ দিন অফিসে এসে দাপটের সাথে পুরো মাসের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। মোঃ সালাউদ্দিনের বর্তমান কর্মস্থল গণপূর্ত বিভাগ-৪ এর উপ বিভাগীয় রেলওয়ে ডায়ভারসন হিসাব শাখাটি সেগুন বাগিচাস্থ ১২ তলা ভবনে ৬ষ্ঠ তলায় অবস্থিত।

কোন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে তোয়াক্কা না করেই মোঃ সালাউদ্দিন দীর্ঘ ২০ বছর ধরে চাকরি করে আসছেন। এর মধ্য ৪ বার বদলির আদেশ হলেও অদৃশ্য এক শক্তির বলে তিনি ঢাকাতেই থেকে যান বার বার।

এক সময় নিজেকে ছাত্রলীগের নেতা হিসাবে পরিচয় দিতেন। তিনি নাকি ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। এই সুবাধে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সাথে সখ্যাতা গড়ে তুলেছিলেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ভোল পাল্টেছেন মোঃ সালাউদ্দিন। বর্তমানে তিনি নিজেকে সাবেক ছাত্রদল নেতা পরিচয় দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাথে গড়ে তুলছেন সখ্যাতা। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে শত কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে সাবেক ছাত্রদল নেতা পরিচয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাথে সখ্যাতা গড়ে আবারো শত কোটি টাকা কামিয়ে নেওয়ার ধান্দায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন তিনি।

একাধিক সুত্রে জানা যায়, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সাথে সখ্যাতা গড়ে মোঃ সালাউদ্দিন ক্যাসিনো কান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি নেপথ্যে থেকে ফকিরাপুল এলাকার বিভিন্ন ক্লাবে ক্যাসিনোর ব্যাবসা করতেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণপূর্ত-৪ এর রেলওয়ে ডাইভারসনের এক কর্মকর্তা জানান, সালাউদ্দিন হিসাব সহকারী হওয়ার কারনে আলোচিত জি কে বিল্ডার্স এর মালিক জি কে শামীমের সাথে তিনি কাজ বাগিয়ে নেয়ার কাজে সহযোগিতা করেন।

মোঃ সালাউদ্দিন একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে শেখ সেলিম, সাবেক মেয়র তাপস, এমপি নানক সহ অনেকের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে ছিলেন। বর্তমানেও তিনি বিএনপির কয়েকজন বড় নেতার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এবং জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বলে একাধিক সুত্রে জানা যায়।

সহকারী হিসাবরক্ষক সালাউদ্দিন শত কোটি টাকার সম্পদের হিসাবঃ মোঃ সালাউদ্দিন কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ভোলায় ২টি বিলাস বহুল ডুপ্লেক্স বাড়ী তৈরী করেছেন। তিনি ৪টি মাছের ঘের ও শত বিঘা জমির মালিক। বর্তমানে তিনি ঢাকার খিলগাঁও শহীদ বাগিচার পাশে ৪/১১/এ নিবাস নামে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে একটি চাইনিজ রেস্তোরা করেছেন। এছাড়া তিনি মতিঝিল সরকারি কলোনিতে থাকা অবস্থায় ৪টি ফ্ল্যাট নিয়েছেন। প্রত্যেকটি ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় কয়েক কোটি টাকা। তিনি নিজে সরকারি কোয়াটারে বসবাস করেন অথচ কয়েকটি ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। সালাউদ্দিনের বড় ভাইয়ের নামে রয়েছে গণপূর্তের দ্বিতীয় শ্রেণীর লাইসেন্স গণপূর্ত-৪ এর রেলওয়ের ডাইভারসনের যত কাজ তার ৫০% কাজ পেয়ে থাকেন সালাউদ্দিনের বড় ভাই।

আরেকটি সূত্র থেকে জানা যায়, প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের সময় সারা দেশের সহকারী হিসাব রক্ষকদেরকে হিসাব রক্ষক কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন এই দুর্নীতিবাজ সালাউদ্দিন। এছাড়াও বর্তমানে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা সালাউদ্দিন বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী সামীম আহমেদের নাম ব্যবহার করে নানা অপকর্ম করে যাচ্ছেন।

২০ হাজার টাকা বেতন স্কেলের একজন কর্মকর্তা কি ভাবে শত কোটি টাকার মালিক হয় এটাই সাধারণ জনগণের মনে প্রশ্ন। সরকার পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে সালাউদ্দিন রাজনৈতিক দিক থেকে নিজেকে বদলে ফেলার চেষ্টায় ব্যাস্ত রয়েছেন।

এ ব্যাপারে মোঃ সালাউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন এখানে চাকরি করি। আপনার মত অনেক সাংবাদিককে এবং রাজনৈতিক নেতা এমনকি আমার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদেরকে আমার ম্যানেজ করেই চলতে হয়। এ সময় তিনি নিউজটি না করার জন্য এ প্রতিবেদকে অনুরোধ করেন। এবং অন্য ভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হন। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে নিউজটি না করার জন্য এই প্রতিবেদককে কয়েকজন সংবাদ কর্মীদেরকে দিয়েও ফোন করে অনুরোধ করান।