
কে এম সাইফুর রহমান, গোপালগঞ্জঃ কোটালীপাড়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো: মাসুম বিল্লার দেওয়া প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রসহ রঙিন ঘর উপহার পেয়ে সুখের হাসি ফুটে উঠেছে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার অসহায় সোনাবান বিবির (৮০) মুখে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খাট, তোষক, বালিশসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, চাল, ডাল, তেল, আলু,পিয়াজসহ প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী নিয়ে উপজেলার সিতাইকুন্ড গ্রামের কাজী বাড়িতে হাজির হলেন ইউএনও মাসুম বিল্লাহ। সোনাবানের জন এই বাড়িতেই আগে থেকেই তৈরী করা হয় একটি রঙ্গিন ঘর। ঘরের সাথেই বানানো হয় টয়েলেট ও রান্না ঘর। আসবাবপত্রসহ হতদরিদ্র সোনাবানের হাতে ইউএনও তুলে দেন রঙ্গিন এই ঘরের চাবি। আবেগে সোনাবান অঝোর ধাঁরায় কেঁদে ফেলেন। কেঁদে ফেলেন ইউএনও নিজেও। আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন উপস্থিত সকলে।
সোনাবান বিবি সিতাইকুন্ড গ্রামের মৃত আব্দুল কাজীর স্ত্রী। জন্ম থেকেই অভাব অনাটন আর দারিদ্র্যতার সাথে বসবাস তার। বৃদ্ধ বয়সে এসেও মা, বাবা, স্বামী, সন্তান, ভাই, বোনহীন সোনাবান একটি ভাঙ্গা খুপড়ি ঘরে চরম মানবেতর দিন কাটাচ্ছিলেন তিনি।
জানাগেছে, অসহায় সোনাবানের বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েলের। ৬ মাস আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুকে) ‘‘শেষ বয়সে একটু সুখ-শান্তি চাই, কে দেবে‘‘? শিরোনামে সোনাবানকে নিয়ে একটি আবেগঘন পোস্ট দিলে এগিয়ে আসে উপজেলা প্রশাসন। তখনকার ইউএনও মো: মঈনুল হক সোনাবানের জন্য সরকারিভাবে ঘর দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসের মাধ্যমে একটি প্রকল্প হাতে নেন। এরই মধ্যে ইউএনও মঈনুল হকের বদলী হয়ে যায়। অন্যদিকে জায়গার জটিলতার কারনে ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে। বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মো: মাসুম বিল্লাহ জানতে পেরে জায়গার সমস্যা সমাধান করে মেঝে পাকা একটির রঙ্গিন ঘর নির্মাণ করেন। একই সাথে ঘরের সাথে একটি টয়েলেট এবং রান্নাঘরও নির্মাণ করে দেন।
আজ সোমবার দুপুরে খাট, তোষক, বালিশসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, চাল, ডাল, তেল, আলু,পিয়াজসহ প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীসহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে সোনাবানের বাড়িতে আসেন। নতুন ঘরের চাবি সোনাবানের হাতে তুলে দেন ইউএনও মো: মাসুম বিল্লাহ। সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল আজম, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আবু তাহের হেলাল, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: আনসার আলী, সাংবাদিক মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল, কামরুল ইসলাম ও হাসিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সোনাবানের প্রতিবেশী কাজী ইউনুচ জানান, অনেক দুঃখে কষ্টে তার জীবন কাটে। সরকারি কোন সহায়তা তিনি পান না। ভাঙ্গা ঘরে প্রায়ই না খেয়ে থাকতে হয়। প্রতিবেশীরা একটু সাহায্য করলে তার পেটে ভাত জুটে। অন্যথায় অনাহারে থাকতে হয়। আজ ইউএনও স্যার যা করলো তা সমাজে ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমরা স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ।
খুশিতে আত্মহারা সোনাবান কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, সোংবাদিক (সাংবাদিক) জুয়েল একদিন আমার ভাঙ্গা ছাপড়া ঘরের ছবি তুলে নিয়ে যায়। আমার দু:কখু শোনে। এ্যারপর টিএনও অফিসের লোক আইসকা আমার নতুন ঘর বানায় দেয়। টিএনও স্যার আমার লইগ্যা যা করলো তাতে আমি জন্মের মতন খুশি হইছি। আমি স্যারের লইগ্যা ও সেই সোংবাদিকের লইগ্যা দোয়া করি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো: মাসুম বিল্লাহ বলেন, একজন গণমাধ্যমকর্মীর ফেসবুকের পোষ্টের মাধ্যমে সোনাবান বিবির খবর জানতে পেরে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যার একটি ঘরের ব্যবস্থা করেন। আমরা তদারকির মাধ্যমে সেই ঘরটি নির্মাণ করে আজ হস্তান্তরের জন্য এসেছি। পাশাপাশি সোনাবান বিবির জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও খাদ্যসামগ্রী দিলাম। এটি একটি মানবিক কাজ ছিল। অসহায় পরিবার বা মানুষের কষ্টে পাশে দাঁড়ানোই প্রশাসনের দায়িত্ব। আশারাখি সোনাবান বিবি এখন একটি সুস্থ সুন্দর পরিবেশে জীবনযাপন করতে পারবে। সরাকারের পাশাপাশি সমাজের সকল বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাবো সোনাবানের মতো অসহায় মানুষের পাশে যেন সকলে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। উপজেলা প্রশাসনও সবসময় সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :