• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৩ পূর্বাহ্ন

কীভাবে ম্যানেজ করে চলতো শ্যামলীর আমার বাংলাদেশ হাসপাতালটি, বিস্ময় র‍্যাবের


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৮, ২০২২, ৫:০৬ অপরাহ্ন / ১৮৮
কীভাবে ম্যানেজ করে চলতো শ্যামলীর আমার বাংলাদেশ হাসপাতালটি, বিস্ময় র‍্যাবের

মোঃ রাসেল সরকারঃ সরকারি নীতিমালা তোয়াক্কা না করে নানা ধরনের অব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে চলছিল রাজধানীর শ্যামলীর ‌’‌‌আমার বাংলাদেশ হসপিটাল’ নামের প্রতিষ্ঠানটি। হাসপাতালটিতে ছিল না কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, একজন এমবিবিএস চিকিৎসক দিয়েই চলছিল আইসিইউ ও এনআইসিইউ চিকিৎসা। এছাড়াও রোগীদের কোনও রকম বিল-ভাউচার না দিয়ে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ নানা অনিয়মেই চলছিল হাসপাতালটি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিয়ে কীভাবে এত সব ম্যানেজ করে গত এক বছর ধরে হাসপাতালটির কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে অভিযান পরিচালনাকারী সংস্থা র‍্যাব।

গত ৩১ ডিসেম্বর ঠাণ্ডার সমস্যায় ভোগা ছয় মাসের দুই যমজ শিশু আব্দুল্লাহ ও আহমেদকে নিয়ে সাভারের বাটপাড়া রেডিও কলোনি থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন আয়েশা আক্তার। কিন্তু সেখানে এনআইসিইউতে সিট খালি না থাকায় এক অ্যাম্বুলেন্স চালকের আশ্বাসে সন্তানদের নিয়ে শ্যামলীর কলেজ গেট এলাকার হাসপাতালটিতে যান ওই নারী।

তার অভিযোগ, সেখানে ছয় দিন চিকিৎসা দেওয়ার পর ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা দাবি করেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারওয়ার। বিল কমিয়ে ধরার অনুরোধ করে কয়েক দফায় ৫০ হাজার টাকা পরিশোধের পরও টাকার জন্য তিনি চাপ দিতে থাকেন। গত বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) বিকালে তাদের বের করে দিয়ে শাহিন নামে একজনের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে আয়েশা বেগমের দাবি। পথে এক শিশুর মৃত্যু হয়, অন্যজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে গোলাম সরোয়ারকে আটক করে র‍্যাব। পরে তার বিরুদ্ধে ‘অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু সংঘটনের’ অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। পরে হাসপাতালটিতে অভিযান চালায় র‍্যাব। অভিযানের সময় র‌্যাব কর্মকর্তারা হাসপাতালটির চিকিৎসা ব্যবস্থার বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পান। পরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, এককথায় সরকারি নীতিমালা বিধি-বিধান তোয়াক্কা করে চলছিল আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল নামের এই বেসরকারি হাসপাতালটি। হাসপাতালের মালিক গোলাম সারওয়ারের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল এই হাসপাতালে। চিকিৎসা দেওয়ার পর কাউকে কোনও বিল-ভাউচার দেওয়া হতো না। মালিক গোলাম সারওয়ার যে টাকা ধার্য করতো তাই দিতে বাধ্য হতো রোগীর স্বজনরা।

র‌্যাব বলছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মূলত শিশুদের টার্গেট করা হতো। রাজধানীর শ্যামলী এলাকায় শিশু হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে যেসব শিশুদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হতো, তাদের অভিভাবকদের বোঝানো হতো পার্শ্ববর্তী এই প্রাইভেট হাসপাতালটিতে ‘‌ভালো চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়’। পরবর্তী সময়ে তাদের ভর্তি করে বড় অংকের বিল ধরিয়ে দেওয়া হতো। ধার্যকৃত বিলের উপর আবার নেওয়া হতো ১৫ পার্সেন্ট সার্ভিস চার্জ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা ও র‌্যাব কর্মকর্তারা যৌথ অভিযানে আরও দেখতে পায়, হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটার থাকলেও মূলত সেটি ছিল নামেমাত্র অপারেশন থিয়েটার। ছিল না অপারেশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। এমনকি হাসপাতালটির ছিল না কোনও পরিবেশগত ছাড়পত্র ও। আইসিইউ ও এনআইসিইউতে চিকিৎসক ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছিল কার্যক্রম। শুধু একজন এমবিবিএস ডাক্তার দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছিল আইসিইউ ও এনআইসিইউ-এর কার্যক্রম।

খন্দকার আল মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আমরা বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। গ্রেফতারকৃত গোলাম সারওয়ার চিকিৎসাসেবা না দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে প্রতারণার সাথে জড়িত। এর আগেও তার পরিচালিত হাসপাতাল ও ডায়াগোনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ ওঠার পর সেসব প্রতিষ্ঠান তিনি বন্ধ করে দিতেন। স্থান পরিবর্তন ও নাম পরিবর্তন করে আবার একই ধরনের অনিয়মের লিপ্ত থাকতেন।

উল্লেখ্য- কীভাবে এতসব অনিয়ম ম্যানেজ করে আসছেন এসব বিষয়ে আমরা আরও খতিয়ে দেখছি। এ ধরনের প্রতারণা এবং জিম্মির মতো ঘটনা যারা করছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হবে।