• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন

এবার হত্যা মামলার প্রধান আসামি পেলেন নৌকা!


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৬, ২০২১, ৩:৫১ অপরাহ্ন / ১২৩
এবার হত্যা মামলার প্রধান আসামি পেলেন নৌকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার : সাভারের আশুলিয়ায় পাথালিয়া ইউনিয়নে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের কর্মী আব্দুর রহিমকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি পারভেজ দেওয়ানকে মনোনয়ন দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। রোববার (০৫ ডিসেম্বর) নিহত আওয়ামী লীগের সেই কর্মীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। এর আগে, শনিবার (০৪ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মাধ্যমে পারভেজ দেওয়ানকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।

নিহত আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুর রহিমের পরিবার অভিযোগ করে জানান, গত ইউপি নির্বাচনে দ্বন্দ্বের জেরে পারভেজ দেওয়ানের নির্দেশে ইউপি আওয়ামী লীগ কর্মী আব্দুর রহিমকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ৫ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার শফিউল আলম সোহাগসহ ১৫ জন সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। পরে নিহতের ভাই যুবলীগ নেতা সুমন পন্ডি বাদী হয়ে ২৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

নিহত রহিমের ভাই সুমন পন্ডি বলেন, আমার ভাই পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। কিন্ত নির্বাচনে তৎকালীন চেয়ারম্যান পারভেজ চেয়ারম্যানের প্রতিপক্ষকে সমর্থন করতেন তিনি। পরে এরই জের ধরে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার কয়েকমাস পরই চেয়ারম্যানের লোকজন প্রকাশ্যে আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। পরবর্তীকালে পুলিশ চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করলেও হাজতবাসের পর জামিনে মুক্ত হন। এরপর রহস্যজনক ভাবে পুলিশ আমার স্বাক্ষর ছাড়াই গোপনে প্রধান আসামি চেয়ারম্যানসহ ৬ আসামিকে বাদ দিয়ে চার্জশিট দেয়। পরে আদালতে আপত্তি জানালে সিআইডি দেড় মাস তদন্ত করে চেয়ারম্যানসহ ১৩ আসামিকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয়।

এসব বিষয় নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের মূল্যায়ন না করেই পারভেজ দেওয়ানকে ইউপি চেয়ারম্যানের মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন নেতারা।

পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ হাওলাদার বলেন, পারভেজ দেওয়ান হত্যা মামলার প্রধান আসামি। তাকে কিভাবে মনোয়ন দেওয়া হয়েছে সেটা আমাদের জানা নেই। তবে আমরা তৃণমূলে পরিবর্তন চেয়েছিলাম, আমাদের চাওয়ার মূল্যায়ন করা হয়নি।

পাথালিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, নিহত আব্দুর রহিম আওয়ামী লীগের সবচেয়ে সক্রিয় সদস্য ছিল। তাকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। এবারও পারভেজ দেওয়ান গতবারের মতোই পায়তারা করতেছে। হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। আবারও কর্মীদের ওপর আক্রমণ করার চেষ্টা করতেছে। পারভেজ দেওয়ান নৌকার মনোনোয়ন পাওয়ায় আমরা আতঙ্কিত। তিনি তিনবারের চেয়ারম্যান হয়েও একটা নিজস্ব ইউনিয়ন পরিষদ ভবন করতে পারেননি। এখনো ভাড়া ভবনে চলছে সকল কার্যক্রম। উনি নির্বাচনে এলে বিপুল ভোটে পরাজিত হবে।

নৌকা প্রতীক পাওয়া পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান বলেন, মিথ্যা হত্যা মামলায় থানায় থেকে আমাকে অব্যাহতি দিয়েছিল। পরে সিআইডির সঙ্গে আতাত করে একমাসের মধ্যে তদন্ত না করে আমার বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিপক্ষরা তাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়েছে। এছাড়াও অনেক খোঁজ নিয়েই তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজির আহমেদ বলেন, হত্যা মামলার আসামির বিষয়টা হয়তো মনোনয়ন বোর্ডের নজরে আসে নাই। বিষয়টি হয়তো তাদের জানাও নেই। তবে বিষয়টি সাধারণত ইউনিয়ন থেকে উপজেলা তারপর জেলা। ইউনিয়ন থেকে যেভাবে আসছে তাতে এ ধরনের কোনো কিছু আমাদের জানানো হয়নি। যদি কেউ বলতো তাহলে হয়তো কেন্দ্রে আমরা বিষয়টা জানাতে পারতাম।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান বলেন, মনোনয়নে কাজ করছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। সেখানে অনুমোদন দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের কোনো ভূমিকা নাই। এটা পার্লামেন্টারি বোর্ডের সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে আমার কোনো কমেন্ট না করাই ভালো। সর্বোচ্চ জায়গা থেকে সিদ্ধান্ত হইছে। ওনারা যাচাই বাছাই করেই সিদ্ধান্ত দিয়েছে।