• ঢাকা
  • রবিবার, ২৩ Jun ২০২৪, ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন : আলফাডাঙ্গায় আনারস প্রতীক সমর্থককে মারধর, তদন্তে গড়িমসি


প্রকাশের সময় : জুন ১৩, ২০২৪, ৭:০৩ অপরাহ্ন / ৩৬
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন : আলফাডাঙ্গায় আনারস প্রতীক সমর্থককে মারধর, তদন্তে গড়িমসি

নিজস্ব প্রতিবেদক, আলফাডাঙ্গা, ফরিদপুরঃ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর এক সমর্থকের ওপর হামলা চালায় দোয়াত-কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর একদল সমর্থক। এই ঘটনায় গোপালপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইনামুল হাসানসহ বেশ কয়েকজনের নামে আলফাডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ দেন মারধরের শিকার মুছাব্বির হোসেন। গত ৫ জুন এই ঘটনা ঘটলেও অভিযোগ তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই।

পুলিশ বলছে, ভুক্তভোগীর অভিযোগ তদন্তে তারা কাজ করছেন। তবে অভিযোগপত্রে কিছু সংশোধনী প্রয়োজন। একারণে তদন্ত থেমে আছে।

জানা গেছে, নির্বাচনে দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খান বেলায়েত হোসেনের সমর্থকেরা মুছাব্বির হোসেনকে মারধর করে। মুছাব্বির আনারস প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য শেখ তাহিদুর রহমানের সমর্থক। ভোটে দুই প্রার্থীই পরাজিত হয়েছেন।

ঘটনার দিন মারধরের শিকার মুছাব্বির এখনও আতঙ্কে আছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখনও তার শরীরের বিভিন্ন অংশ জখম আছে। ঘটনার দিন দুর্বৃত্তরা যে টাকা ও মূল্যবান জিনিস লুটে নিয়েছিল তা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিম রেজা জানিয়েছেন, অভিযোগ পাবার পর তা একজন এসআই তদন্ত করছেন। তবে এখন পর্যন্ত তদন্তের কোনো আপডেট নেই।

বর্তমানে মুছাব্বির হোসেনের অভিযোগটি তদন্ত করছেন আলফাডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তদন্ত চলছে। তবে ভুক্তভোগীকে অভিযোগপত্র সংশোধন করতে বলা হয়েছে একারণে তদন্তে ধীরগতি রয়েছে।’

কি সংশোধন করতে বলা হয়েছে জানতে চাইলে রবিউল বলেন, অভিযোগে বলা হয়েছে তার (মুছাব্বির হোসেন) কাছে থাকা নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এমন তথ্য সংশোধন প্রয়োজন। আমি এমন কিছু এখনও পায়নি। একারণে মুছাব্বির হোসেনকে বলা হয়েছে থানায় এসে ওসি স্যারের সঙ্গে কথা বলতে।’ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ বাদ দিয়ে মারধরের অভিযোগ রাখলে তা তদন্ত করে দেখবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

অভিযোগ আছে, হামলাকারীরা সবাই স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের সঙ্গে স্থানীয় থানা পুলিশের সু-সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু পুলিশ তদন্তের নামে কালক্ষেপন করছে।

জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের দিন গোপালপুর ইউনিয়নের কামারগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে দশটার দিকে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে গুরুতর আহত হন মুছাব্বির হোসেন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়। পরে থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।

লিখিত অভিযোগে মুছাব্বির বলেন, সকালে ভোট দিতে গিয়েছিলাম। ভোট দিয়ে ফেরার পথে কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকায় তার ওপর হামলা চালায় দোয়াত-কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী বেলায়েত হোসেনের সমর্থকরা। গোপালপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইনামুল হাসানের নেতৃত্বে অন্তত ডজনখানেক ব্যক্তি আমাকে প্রথমে গালিগালাজ করেন। পরে আমাকে বেধড়ক মারধর করেন।

থানায় লিখিত অভিযোগে মুছাব্বির হামলাকারীদের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছেন। তারা হলেন—গোপালপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইনামুল হাসান, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য এবং বিএনপির সক্রিয়কর্মী তবিবর তালুকদার ওরফে তবিবর রহমান তবি, হাদী, শামীম, রফিকুল ও সেলিম।

মুছাব্বিরের অভিযোগ, হামলাকারীরা তার হাতঘড়ি ও প্যান্টের পকেটে ৩৫ হাজার টাকাসহ থাকা মানিব্যাগ নিয়ে যায়। এছাড়াও সেখানে তার বেশকিছু ব্যক্তিগত জরুরি কাগজপত্র ছিল।

বিষয়টি মধুখালি সার্কেলের এএসপি ইমরুল হাসানকে অবহিত করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখতে থানাকে বলছি। অভিযোগের সত্যতা মিললে অবশ্যই মামলা হবে।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগী যদি দিয়ে থাকেন তাহলে তা যথাযথ ভাবে তদন্ত হবে। নিজের দায়িত্ব থেকেই থানা পুলিশ এই কাজে করবে। আইনের মধ্যে থেকে পুলিশ তার কাজটি করবে।