• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪৫ অপরাহ্ন

আসামি না হয়েও খাবার খেতে যেতে পারেন কারাগারে!


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৮, ২০২২, ২:১৬ অপরাহ্ন / ১৩৭
আসামি না হয়েও খাবার খেতে যেতে পারেন কারাগারে!

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর: ভিন্ন পরিবেশে খেতে কার না ভালো লাগে। কিন্তু তাই বলে কি খাবার খেতে কেউ স্বেচ্ছায় কারাগারে যায়? তাও আবার অপরাধী না হয়ে। জেলহাজত, কয়েদি নম্বর, আসামি বসার স্থান ও ফাঁসির মঞ্চ সবকিছুই রয়েছে। ভিন্নধর্মী এই কারাগার সত্যিকারের না হলেও প্রথম দেখায় যে কারও মনে হবে এটি একটি মিনি কারাগার। অথচ এটি একটি রেস্টুরেন্ট। রংপুর মহানগরীর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্কের মোড় এলাকায় এই রেস্টুরেন্টের অবস্থান। এটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘কারাগার রেস্টুরেন্ট’। এখানে অন্যান্য রেস্টুরেন্টের মতোই সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়। ব্যতিক্রম নাম আর ভিন্ন আদলে গড়া রেস্টুরেন্টে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোজনরসিকরা আসছেন। অনেকেই ছবি তোলেন কারাগারে আটক থাকার মতো করে।

রেস্টুরেন্টটিতে প্রবেশ করতেই ডান দিকে দেখা মিলবে ফাঁসির মঞ্চ। সেখানে ঝোলানো রয়েছে একটি ফাঁসির দড়ি। ফাঁসির মঞ্চের ওপরে বড় করে লেখা ‘বিদায় মঞ্চ থেকে বলছি। আর বাম পাশে রয়েছে জেলখানার একটি কক্ষ। লোহার গ্রিলে আবদ্ধ এ কক্ষে মাথা নিচু করেই প্রবেশ করতে হয়। ভেতরে প্রবেশ করলে মনে হবে যেন কারাগারের মধ্যে আছি। সেখানে লেখা ‘জেল থেকে বলছি’। মেঝেতে রয়েছে বসার স্থান রয়েছে, আর মাথার ওপরে আছে একটি ফ্যান ও রঙিন বাতি। হাজতখানায় বসলে নজর কাড়বে ‘কয়েদি নম্বর ৪২০’, ‘কয়েদি নম্বর ৭৮৬’, ‘থালাবাটি কম্বল জেলখানার সম্বল’, ‘আইনের চোখে সবাই সমান’, ‘ভিআইপি গুন্ডা’ ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড। এসব দেখে খানিকটা সময় জেলখানার পরিবেশ উপলব্ধি করা যাবে। ইচ্ছে হলে হাজতখানার ভেতরে বসেই খাওয়া যাবে। অনুভব করা যাবে কীভাবে জীবনযাপন করে কয়েদিরা।

ফাঁসির মঞ্চ ও কারাগারের মাঝখানে রয়েছে বসার স্থান। এখানে বিভিন্ন ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয়। এ রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায়- ভাত, পোলাও, বিভিন্ন ধরনের মাছ ও মাংস, খিচুড়ি, বিরিয়ানি ও হালিম। অন্যান্য রেস্টুরেন্টের তুলনায় খাবারের মান আর ব্যতিক্রম পরিবেশের কারণে প্রতিদিন ভিড় করছেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। কেউ খাবার খেয়ে আবার কেউবা ভিন্ন পরিবেশ উপভোগ করে উদ্যোক্তার প্রশংসা করছেন।

কারাগার রেস্টুরেন্টের হাজতখানায় কথা হয় নাহিদা আক্তারের সঙ্গে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী বলেন, এই হাজতখানাটা একটু ব্যতিক্রম। বাস্তবের সঙ্গে হয়তো এই কারাগারের মিল নেই। কিন্তু এখানে বসে খাবার খেতে খেতে কারাগারের মতো ভিন্ন কিছু অনুভব করছি। বন্ধুদের সঙ্গে একটু মজা করছি, ছবি তুলছি। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো কেউ ফোন করলে যদি বলি আমি কারাগারে তাহলে হঠাৎ চমকে ওঠে। এই কারাগারে আমরা কোনো অপরাধ না করে এসেছি, আবার ইচ্ছে করলে যেতেও পারছি।

শিপন তালুকদার নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, রংপুরে আগে একটাই কারাগার ছিল। এখন কিন্তু দুটো কারাগার। একটা কারাগার রংপুর মেডিকেল মোড় এলাকায়, সেখানকার পরিবেশটা দেখার সুযোগ নেই। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এই কারাগার রেস্টুরেন্টে সেটা কিছুটা অনুভব করা যাচ্ছে। এখানে অপরাধ না করেও আসা যাচ্ছে। পরিবেশটাও অনেক ভালো ও মজা করার মতো। আমরা বন্ধুরা প্রায়ই এখানে এসে এনজয় করি।

কারাগারের ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে এক বন্ধু আরেক বন্ধুর গলায় ফাঁস তুলে দিচ্ছিলেন। তারা দুজন হাসতে হাসতে জানালেন, ‘এটা তো সত্যিকারের ফাঁসি না। কিন্তু মনে হচ্ছিল জল্লাদ আর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি একমঞ্চে। বাস্তব জীবনে যেন এমনটা না ঘটে, সেই প্রত্যাশার কথা শোনালেও মূলত মজা করতেই তারা এভাবে কারাগারে সময় পার করছিলেন।

ভোজনরসিক রবিউল আলম রবি বলেন, কারাগারে বসে খাবার অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি কোনোটাই আমার নেই। এই রেস্টুরেন্টের নামটা শোনার পর থেকে ইচ্ছে হয় কারাগারে গিয়ে খাবো। শুধুমাত্র খাবার খেতেই স্বেচ্ছায় কারাগারে এসেছি। এখানকার খাবারের মান ভালো। অন্যান্য রেস্টুরেন্টের তুলনায় দামও কম। আমার ভালো লেগেছে। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য এখানকার খাবার অনেকটা সাশ্রয়ী।

হাজতখানায় বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় মেতেছিলেন ‘টঙের গান’ দলের শিল্পী মাহমুদুল হাসান আবির। হাসতে হাসতে গাইলেন ‘আমি বন্দী কারাগারে, আছি গো মা বিপদে, বাইরের আলো চোখে পড়ে না, আমি বন্দী কারাগারে’। বন্ধুদের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে খেতে আসা আবির বলেন, ফেসবুকে কারাগারের ছবি দেখে দেখতে এসেছি। রেস্টুরেন্ট এ রকম কারাগার, ফাঁসির মঞ্চ আছে এটা ব্যতিক্রম একটি বিষয়। কিছু ছবিও তুলেছি। দেখে ভালো লেগেছে। খাবারের মানও বেশ ভালো।

রেস্টুরেন্টটির মালিক তরুণ উদ্যোক্তা সামসুজ্জামান রিপন বলেন, ‘ছোট থেকে নতুন কিছু করার ইচ্ছে ছিল। এর আগেও রংপুরে আমার খাবারের হোটেল ছিল। কিন্তু এমন আঙ্গিকে ছিল না। তরুণরা নতুনত্ব পছন্দ করে। অনেকেই চোখ ধাঁধানো অনেক কিছু করে। আমিও সেই চিন্তা থেকেই এই রেস্টুরেন্টটি করেছি। নাম যেহেতু কারাগার দিয়েছি তাই একটি কারাগার না থাকলে তো আর ভালো হয় না, এ কারণে ছোট আকারে একটি কারাগারও করেছি।

তিনি আরও বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে ভোজনপ্রিয় মানুষরা আসেন। চেষ্টা করছি মানসম্মত খাবার পরিবেশন করে ক্রেতা ধরে রাখার। রেস্টুরেন্ট যদিও নতুন, তবুও প্রত্যাশা অনুযায়ী ক্রেতা পাচ্ছি। আশা করছি এটি পরিচিতি লাভ করলে আরও বেশি ক্রেতা পাবো। আগামীতে হাজতখানা ও ফাঁসির মঞ্চের পাশাপাশি একটা আদালত বানানোর ইচ্ছে আছে।