• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৪:০২ অপরাহ্ন

আমি ভোর থেকে বসে আছি আমার হাবিবকে দেখবো বলে—-জনৈক নারী ভিক্ষুক


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২, ২০২৩, ৯:৩৬ অপরাহ্ন / ৮৫
আমি ভোর থেকে বসে আছি আমার হাবিবকে দেখবো বলে—-জনৈক নারী ভিক্ষুক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ এক সহায়-সম্বলহীন নারী। প্রতিদিন ভিক্ষা করে কোন মতে যার জীবন কাটে। আজকের জন্য এক মহৎ উদ্দেশ্যে ভিক্ষায় ইস্তফা দিয়ে খুব সকালে বাসা থেকে বের হয়েছেন তিনি।

কাউকে কিছু না বলে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের গোপালগঞ্জের বাস ভবনের সামনে ঘোরাঘুরি শুরু করেন। তাকে দেখে অনেকেই চিনতে পেরে সামান্য কিছু আর্থিক সহযোগিতাও করেন। সেটা নিতে গিয়ে নিজের অভাবী হাত বাড়িয়ে দিলেও তাতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তিনি আসলে মনে মনে চাচ্ছিলেন ভিন্ন কিছু। এমনকি তিনি উক্ত বাসা থেকে দূরে কোথাও যাচ্ছেনও না।

কখনো বাসার প্রধান ফটকে আবার কখনো বা বাসার ভেতরের ফটকের আশপাশে নিরব গোয়েন্দার মতো নজর রাখছেন। টু্ংগীপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গণ্যমান্য অতিথিবৃন্দসহ হাবিবুর রহমান নিজ বাস ভবনে আগমন করবেন, যে আনন্দ সংবাদটিকে কেন্দ্র করে পাড়া-প্রতিবেশী ও অন্যান্যদের মনে তখন বইছে খুশির জোয়ার।ফলে এই অসহায় নারীর মনের বা চোখের ভাষা বুঝার মতো সময় ও সুযোগ তখন কারোর মধ্যেই নেই ।

ইতিমধ্যে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান নিজ বাসবভনে আগমন করেন।কিন্তু অপেক্ষার পালা শেষ হয়েও হচ্ছে না। কারণ, হাবিবুর রহমান চোখ ফেলবার মতোও বিন্দুমাত্র সময় পাচ্ছেন না। আগত অতিথিবৃন্দ ও স্থানীয়দের সাথে কুশল বিনিময়ে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। কিন্তু অধীর অপেক্ষমাণ অসহায় নারীকে তখন কে রুঁখবে? সকল ভীড় ও ব্যস্ততা ঠেলে হাবিবুর রহমানের দিকে এগিয়ে এলেন তিনি। বাম হাতে ভিক্ষার থলি আর ডান হাত বাড়িয়ে দেন ডিএমপি’র নবনিযুক্ত কমিশনারের দিকে।

কমিশনার মহোদয় সবার থেকে ক্ষণিকের জন্যে চোখ সরিয়ে নিজের হাতটিও বাড়িয়ে দেন। পরম শ্রদ্ধাভরে কাছে টেনে নেন তাকে। ডিএমপি’র পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান তখন শুধুই হাবিব।

গা-মাথায় হাত বুলিয়ে মাতৃস্নেহে মন ভরে দোয়া ও আদরে সিক্ত করলেন তার প্রিয় হাবিবকে। আঠালো কন্ঠে বলতে লাগলেন আমি ভোর থেকে বসে আছি আমার হাবিবকে দেখবো বলে। তোমার মা-বাবা অনেক ভালো মানুষ ছিলো, তারা কোনোদিন আমাকে ফিরায় নাই! মাতৃমমতায় আপ্লুত হাবিব তাকে বুকের মাঝে টেনে নেন, তার সমস্যা গুলো এতো মানুষের ভীড়েও গভীর মনোযোগের সাথে শুনলেন ও সমাধানের আশ্বাস দিলেন।

একজন অসহায় নারী তথা একজন ভিক্ষুকের প্রতি এমন মানবিক আচরণ ও মমত্ববোধ উপস্থিত সকলকে কিছুটা হলেও স্তব্দ করে দেয়! এভাবেই ‘মানুষ মানুষের জন্য’ বাণীটিকে সত্য ও শাশ্বত করে বাচিয়ে রাখে সমাজের গুটি কয়েক নিবেদিত প্রাণ হাবিব, যাদের তুলনা হয় না।