• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০১:২৩ পূর্বাহ্ন

অভাবের তাড়নায় গ্রাম থেকে রাজধানীতে এসেছিলেন স্বামী পরিত্যক্তা শিউলি বেগম


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০২৩, ২:০৭ পূর্বাহ্ন / ১৫৬
অভাবের তাড়নায় গ্রাম থেকে রাজধানীতে এসেছিলেন স্বামী পরিত্যক্তা শিউলি বেগম

বিশেষ প্রতিনিধি,ঢাকাঃ অভাবের তাড়নায় কাজের খোঁজে গ্রাম থেকে রাজধানীতে এসেছিলেন স্বামী পরিত্যক্তা শিউলি বেগম। যাত্রাবাড়ী এলাকায় পরিচিত হন এক ব্যক্তি। তিনি চাকরির প্রলোভন দেখান। সরল বিশ্বাসে শিউলি লোকটির সঙ্গে যান। তারপর যাত্রাবাড়ীর শহীদ সরণি রোডের সামিউল্লাহ প্লাজায় অবস্থিত প্রভাতি আবাসিক হোটেলে শিউলির জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।

দুই মাসের বেশি সময় ধরে শিউলিকে বদ্ধ কক্ষে জোর করে আটকে রেখে দেহ ব্যবসায় নামতে বাধ্য করা হয়। এখানেই শেষ নয়, কিছুদিন পর সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে শিউলিকে পাচার করে দেওয়া হয় ভারতে। পাচারের ছয় মাস পর পালিয়ে দেশে ফিরতে পেরেছেন শিউলি। কিন্তু আর স্বাভাবিক হতে পারেননি তিনি। সারাক্ষণ তাকে তাড়া করে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও ভারতের হায়দরাবাদে কাটানো বিভীষিকাময় জীবনের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা।

গণমাধ্যমকে শিউলি জানান, তিন বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় আমার। এরপর দুই সন্তানকে নিয়ে অথই সাগরে পড়ি। দুই বেলা খাওয়াতেও পারতাম না। বাধ্য হয়ে চাকরির আশায় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে চলে আসি। সেখানে এক লোকের সঙ্গে পরিচয় হয় আমার। তিনি আমাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে একটি হোটেলে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে নেওয়ার পর আমার মোবাইল এবং অন্যান্য জিনিসপত্র কেড়ে নিয়ে আমাকে আটকে রাখা হয়। এক পর্যায়ে জোর করে দেহ ব্যবসায় নামতে বাধ্য করে আমাকে। এ সব কাজ করতে রাজি না হলে নেমে আসত অসহনীয় অত্যাচার। পরে হোটেল মালিক শিশির ও সাজ্জাদ নামের দুই ব্যক্তি আমাকে ভারতে পাচার করে দেয়।

শিউলি বলেন, আমিসহ মোট আটজন নারীকে সাতক্ষীরা দিয়ে রাতের আঁধারে বর্ডার পার করে হায়দরাবাদে পাঠায় মানব পাচারকারীরা। সেখানে একটি বাড়িতে আটকে রাখা হয় আমাদের। ওই বাড়িতে আরো কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয় আমাদের। তাদের মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশিও ছিল। আমাদের মতো তারাও দালালের মাধ্যমে পাচারের শিকার হয়। ওই বাড়িতে পাচারকারীচক্রের সদস্যদের কাছে কয়েকবার ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে।

এর কয়েক দিন পরই আমাদের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হোটেল গুলোতে এক দিনে কয়েকজনের ধর্ষণের শিকার হতে হতো। এ সব ঘটনার প্রতিবাদ করলে নেমে আসতো ভয়ঙ্কর নির্যাতন। ওখানে যেহেতু আমাদের পাসপোর্ট ছিল না, পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এবং ব্ল্যাকমেইল করে দেহ ব্যবসা চালিয়ে যেতে বাধ্য করা হতো।

শিউলি বলেন, এভাবেই কেটে যায় প্রায় ছয় মাস। যখন স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন বাদ দিয়েছি, তখনই দেখতে পাই আশার আলো। ভারতীয় এক খদ্দের আমাদের কষ্টের কথা শুনে সাহায্য করতে রাজি হন। পরে তার সহায়তায় আমরা আট নারী একই ভাবে রাতের আঁধারে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে চলে আসি। দেশে আসার পর এখনো আমরা ভয়ে পালিয়ে থাকি। যাত্রাবাড়ী এলাকার দিকে কখনোই আর আসি না।

শিউলি আরো বলেন, এই অপরাধচক্র গুলো এখনো আমাকে তাড়া করে বেড়ায়, তারা প্রকাশ্যেই বেড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে এখনো আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।