• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৭:২২ অপরাহ্ন

অবৈধ টিভি চ্যানেলের রমরমা বাণিজ্য


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩, ১:৩১ অপরাহ্ন / ২১২
অবৈধ টিভি চ্যানেলের রমরমা বাণিজ্য

বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকাঃ অনুমোদনহীন টিভি চ্যানেলের রমরমা বাণিজ্য চলছে সারাদেশে। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার অনুমোদনহীন টিভি চ্যানেল বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলেও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরে চলছে বেশ কয়েকটি অবৈধ টিভি চ্যানেল। এ সব চ্যানেলে মূলত বাংলা ছবি ও অশ্লীল বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। অবৈধ সম্প্রচারের মাধ্যমে এসব টিভি চ্যানেল বিজ্ঞাপন থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ভারতীয় কয়েকটি টিভি চ্যানেলের লোগো নকল করেও একাধিক কেবল নেটওয়ার্কে যৌন উত্তেজক ওষুধের অশ্লীল বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে।

তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ ধরনের বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ এবং অনুমোদনহীন টিভি বন্ধের প্রশাসনিক দায়িত্ব বিটিভির। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিটিভির মহাপরিচালকের কাছে বারবার চিঠি দেওয়া হলেও এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে বিটিভি সূত্র জানায়, বিটিভির বর্তমান কাঠামো এবং স্বল্প জনবল নিয়ে অনুমোদনহীন টিভি সম্প্রচার বন্ধে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। পৃথক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ছাড়া অবৈধ সম্প্রচার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে না। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনুমোদনহীন কোনো টিভি চ্যানেল চালানোর সুযোগ নেই। অবশ্যই এর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যেভাবে চলছে অনুমোদনহীন টিভি : তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছেই অনুমোদনহীন টিভির তালিকা রয়েছে। এসব টিভি কীভাবে পরিচালিত হয়, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা জানেন না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছর জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিটিভিকে তিন দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে অনুমোদহীন টিভি চ্যানেল বন্ধের জন্য। তথ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে এসব টিভি চ্যানেল জরুরি ভিত্তিতে বন্ধের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এসব টিভি মূলত ঘরোয়া ভাবে কম্পিউটারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কম্পিউটার থেকে সম্প্রচারের জন্য ভিডিও চিত্র ইসরায়েলে ফ্রি স্যাটেলাইট স্টেশনে পাঠানো হয়। সেখান থেকে স্যাটেলাইটে পাঠানো হয়। বাংলাদেশে কিছু কেবল অপারেটর ডাউনলিংক করে এসব টিভির অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। অনুমোদনহীন এসব চ্যানেলের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাতে গিয়েই প্রথম ইসরায়েলে স্থাপিত ফ্রি স্যাটেলাইট স্টেশন ব্যবহার করে সম্প্রচার চালানোর বিষয়টি জানা যায়। পরে দেখা যায়, সে সময় পরীক্ষামূলক সম্প্রচারে থাকা একটি বৈধ টিভি চ্যানেলও একই ভাবে ইসরায়েলের ফ্রি স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। পরে বৈধ চ্যানেলটি স্যাটেলাইট পরিবর্তন করে।

সূত্র জানায়, বিভিন্ন নামে অবৈধ টিভি চালিয়ে আসছে। তাদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা শহরে কেবল টিভি নেটওয়ার্কে এসব অবৈধ চ্যানেল সম্প্রচার করা হচ্ছে। এসব চ্যানেলে বাংলা ছবি, কখনও যৌন উত্তেজক মিউজিক ভিডিও এবং হোমিও ও আয়ুর্বেদ ওষুধের অশ্লীল বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়।

অবশ্য কোয়াবের সাবেক সভাপতি আনোয়ার পারভেজ এবং সাবেক কোয়াব নেতা দীন ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠিত কোনো কেবল নেটওয়ার্কে এ ধরনের অবৈধ টিভি সম্প্রচার করা হয় না। ছোট ছোট কিছু পকেট নেটওয়ার্ক আছে, যেখান থেকে এগুলো সম্প্রচারিত হতে পারে।

তারা দু’জনেই জানান, লাইসেন্স এবং সম্প্রচারের বৈধ অনুমতিপত্র ছাড়া তাদের নেটওয়ার্কে কোনো টিভি সংযুক্ত করা হয় না। লোগো নকল করে অশ্লীল বিজ্ঞাপন :অবৈধ টিভি সম্প্রচারের পাশাপাশি ভারতীয় জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের লোগো নকল করেও রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন কেবল টিভি নেটওয়ার্কে ‘শক্তি প্রাস’, ‘লাভ ফরএভার’ প্রভৃতি নামে যৌন উত্তেজক ওষুধের অশ্লীল বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে অবাধে। রাজধানীর মিরপুর, রামপুরা, বাড্ডা, খিলক্ষেত, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিচালিত কেবল নেটওয়ার্কে এসব পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার হতে দেখা গেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, রাত সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা এবং সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত দু’দফায় ভারতের জি বাংলা, সনি-৮, জলসা মুভিজ এবং কালার বাংলার লোগো নকল করে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে।

একাধিক দর্শক জানান, এসব ভারতীয় জনপ্রিয় টিভির নিয়মিত সম্প্রচার বন্ধ করে এমন ভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়, হঠাৎ করে মনে হয় ভারতীয় টিভিতেই বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ওই সব টিভির লোগো কার্ড আকারে নকল করে ব্যবহার করা হয়। ঢাকায় যখন এসব টিভির লোগো ব্যবহার করে অশ্লীল বিজ্ঞাপন চালানো হয়, তখন ভারতে খোঁজ নিয়ে এবং একাধিক টিভির অনলাইন লাইভ সম্প্রচারে নিয়মিত অনুষ্ঠান প্রচার হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।

কেবল অপারেটরদের একটি সূত্র জানায়, আগে ভারতের টিভি চ্যানেল গুলোতেই এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হতো। সম্প্রতি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এ ধরনের বেশ কিছু বিজ্ঞাপন সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর পর এসব ওষুধের ভারতীয় উৎপাদকরা বাংলাদেশে কিছু এজেন্ট বসিয়ে তাদের মাধ্যমে কিছু অসাধু কেবল টিভির প্রাইভেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অশ্লীল বিজ্ঞাপন প্রচার করছে।

বিটিভির সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন :আইন অনুযায়ী অবৈধ ও অনুমোদনহীন টিভির সম্প্রচার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব বিটিভির। তবে বাস্তবে বিটিভি এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সামর্থ্যই রাখে না। বিটিভি সূত্র জানায়, আইন করা হয় যখন শুধু বিটিভি এবং বেশ কিছু বিদেশি চ্যানেল কেবল টিভি নেটওয়ার্কে সম্প্রচার করা হতো। এখন দেশেই অনেক টিভি চ্যানেল হয়েছে। বর্তমানে বিটিভি অন্যান্য চ্যানেলের মতো একটি চ্যানেল। এ কারণে বিটিভির সেই প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের তাগিদই আর নেই। তা ছাড়া জেলা পর্যায়ে অবৈধ চ্যানেলসহ অনুমোদনহীন বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে অভিযানে জেলা প্রশাসক ও পুলিশের সহায়তা নিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই প্রশাসন থেকে সহায়তা পাওয়া যায় না। এ কারণে টিভি সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত করা ছাড়া এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব নয়।

বিটিভির মহাপরিচালক বলেন, তিনি কেবল দৈনন্দিন রুটিন কার্যক্রম দেখছেন। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের চিঠি এসেছে কি-না এবং এসে থাকলে আগের নিয়মিত মহাপরিচালকরা কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন, তা তার জানা নেই।