বিশেষ প্রতিনিধি,ঢাকা: ঢাকার হাসপাতালে ঠাঁই নেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ভিড়ে। কিন্তু রাজধানীর বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগী। দেশের ৫২ জেলার হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে রোগী ভর্তি রয়েছে কক্সবাজারে। দেশে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯৯ জন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এখন প্রত্যেক জেলায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালে তিন হাজারের বেশি রোগী ভর্তি আছে। আমরা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু রোগীর সংখ্যা না কমলে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো কঠিন। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের ৫০০ মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছি। যেন শিগগির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। যেসব এলাকায় মশা বেশি সেসব এলাকায় স্থানীয় প্রশাসনকে সক্রিয় হতে হবে। যেন মশা কমে আসে, আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড ৯০০ জন ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। এ নিয়ে সারা দেশে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩ হাজার ২২৭ জনে। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তিনজন। গত সোমবার দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ ৮৫৭ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই দিন দুজন মারা গিয়েছিল। প্রতিদিনই আক্রান্তের রেকর্ড ভাঙছে ডেঙ্গু। গতকাল হাসপাতালে ভর্তি ৯০০ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৫২৮ ও ঢাকার বাইরে ৩৭২ জন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬ হাজার ৯৩৮ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৩ হাজার ৬১২ জন। একই সময়ে মারা গেছেন ৯৯ জন। কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসা নেওয়া রোগীরা আসছেন না এ হিসাবের তালিকায়। এমনকি ঢাকার ৫১টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের বাইরে ভর্তি হওয়া রোগীদের তথ্য আসে না স্বাস্থ্য অধিদফতরে। জেলা সদর হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোনো বেসরকারি হাসপাতালের তথ্যও যোগ হয় না স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেওয়া হিসাবে। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা থেকে যাচ্ছে অজানা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ১২টি জেলা বাদে বাকি সবগুলোতে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।
ঢাকার পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নেই। এ ছাড়া রাঙামাটি, বান্দরবান, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর তথ্য নেই স্বাস্থ্য অধিদফতরে। বাকি ৫২ জেলার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ডেঙ্গু রোগী। ঢাকার পরে কক্সবাজারে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৪৩৪ জন, মারা গেছেন ২২ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা এবং ফ্লুইড ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন হাসপাতালগুলোতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সব সিভিল সার্জন, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, পরিচালকদের সঙ্গে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে সার্বিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশক নিধনে জোর দিতে বলা হয়েছে।’ এডিস মশা নির্মূলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আজ থেকে সপ্তাহব্যাপী অভিযান পরিচালনা করবে বলে জানিয়েছে। গত রবিবার থেকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মশক নিধনে অভিযান পরিচালনা করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
আপনার মতামত লিখুন :