
মো: রাসেল সরকারঃ “বাকস্বাধীনতা বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল নিধিরাম “সম্প্রতি বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর সরকার ও তার সংস্থাগুলোর নিবর্তনমূলক ইচ্ছার প্রতিফলন আরো একবার দেখা গেলো। প্রসঙ্গক্রমে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, দেশে প্রেস কাউন্সিল বলবৎ থাকতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো এমন কঠোর নিবর্তনমূলক আইনের অধীনে মামলা দিয়ে, গ্রেপ্তার করে- কেন সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে?? অর্থাৎ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার্থে কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটির প্রাসঙ্গিকতা, কার্যকারিতা ও সক্ষমতা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে৷
যখনই কোনো নিবর্তনমূলক আইন দিয়ে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের হয়রানি করার চেষ্টা করা হয় তখন প্রেস কাউন্সিলের ভূমিকা ও সংস্থাটির সীমাবদ্ধতার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে৷ ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর যখন তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার যথেচ্ছ ব্যবহার হয়েছিল, আইনটির অধীনে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তখনও অভিযোগ করা হয়েছিল, সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে প্রেস কাউন্সিলের ভূমিকাকে বারবার উপেক্ষা করা হয়েছে৷
এমন অভিযোগ অতীতে বহুবার বলা হয়েছে – এটি হলো ধান নাই চাল নাই, আন্দিরাম মহাজনের মতো কিংবা এটি একটি নখদন্তহীন কাগুজে প্রতিষ্ঠান৷
ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অব প্রেস কাউন্সিলের সদস্যদের উদ্দেশ্য এবং কার্যাবলী পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বিশ্বের প্রায় সব দেশের প্রেস কাউন্সিলই (কোনো কোনো দেশে প্রেস অমবুডসম্যান বা ন্যায়পাল নামে পরিচিত) দুটি মৌলিক উদ্দেশ্যে গঠিত: এক. বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ও সংবাদ প্রকাশে গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা; দুই. রাজনৈতিক ও বাজার ব্যবস্থা থেকে উদ্ভুত যে কোনো বাহ্যিক চাপ বা হস্তক্ষেপ থেকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা৷
পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন প্রেস কাউন্সিল হলো সুইডিশ প্রেস কাউন্সিল, যেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১৬ সালে৷ এরপর থেকে যতগুলো প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সবারই উদ্দেশ্য একই-গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ করা৷ বাংলাদেশেও সংবাদপত্র এবং সংবাদসংস্থার স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের পেশাগত মান সমুন্নত রাখার উদ্দেশ্যে প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ এর জন্য প্রণীত ১৯৭৪ সালের আইনের ১১ নম্বর ধারায় কাউন্সিলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রেসের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থাসমূহের মান বজায় রাখা ও উন্নয়ন করা৷
কার্যাবলীতে বলা হয়েছে, সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থাসমূহের স্বাধীনতা সংরক্ষণে সহায়তা করা; সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থা এবং সাংবাদিকদের কাজের উচ্চমান বজায় রাখতে আচরণ বিধি প্রণয়ন করা; সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা৷ ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এসব উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী কতটুকু সংস্থাটি পালন করতে পেরেছে? সংস্থাটি বার্ষিক আমলনামার যে বিবরণী প্রকাশ করে থাকে সেগুলোতে দৃষ্টি দিলে এর অন্তঃসারশূন্যতা সহজেই স্পষ্ট হয়ে উঠে৷
তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি একবার বলেছিল, যে উদ্দেশ্যে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তার নিরিখে প্রতি বছর সংস্থাটির জন্য যে পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় তার পুরোটাই জলে যায়৷
(লেখক: মো: রাসেল সরকার
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।)
আপনার মতামত লিখুন :