বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাঃ সাংবাদিক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি ও র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনার বিচার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে মশাল মিছিল করে বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠন। শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এ মিছিল চলে।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বারবার মামলা করে গণমাধ্যমকর্মীদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। বাক্স্বাধীনতা নিশ্চিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারসহ সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। শনিবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব দাবি জানান। তাঁরা বলেন, এভাবে সাংবাদিকদের হয়রানি করে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা প্রত্যাহার, পত্রিকাটির নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের নিঃশর্ত মুক্তি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিল করেছে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো। এ কর্মসূচি থেকে র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের (নওগাঁর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী) মৃত্যুর বিচার ও ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ বন্ধেরও দাবি করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে বের করা বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ), সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী), বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, ছাত্র ফেডারেশন (জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল), বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি আন্দোলন) দুই শতাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন। মিছিল থেকে ‘অবিলম্বে ডিএসএ বাতিল কর, করতে হবে’, ‘অবিলম্বে শামসুজ্জামানকে নিঃশর্ত মুক্তি দাও ফ্যাসিবাদ নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’, ‘মাছ-মাংস-চাইল-ডাইলের, স্বাধীনতা লাগব’ প্রভৃতি স্লোগান দেওয়া হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘কালাকানুন’ আখ্যায়িত করা হয় গতকাল বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে। ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে আয়োজিত এ সমাবেশে অ্যাকটিভিস্ট ও সাবেক ছাত্রনেতারা বলেন, সরকার মুক্ত গণমাধ্যমকে গলা চিপে ধরতে চায়। সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শরিফুজ্জামান, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী ও অ্যাকটিভিস্ট জীবনানন্দ জয়ন্ত, আয়োজক সংগঠনের সংগঠক আকরামুল হক, অ্যাকটিভিস্ট একরাম হোসেন, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা রেজোয়ান হক প্রমুখ বক্তব্য দেন৷ বরিশাল নগরের সদর রোডে প্রতিবাদ সমাবেশ করে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখা। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সংহতি জানান। সমাবেশে বাসদের বরিশাল জেলা শাখার সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী, ‘মাছ-মাংস-চালের স্বাধীনতা চাওয়া যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমরা সবাই এই অপরাধে অপরাধী। ১৬ কোটি মানুষকে আপনারা গ্রেপ্তার করুন।’ তিনি বলেন, ‘লুটপাট, টাকা পাচারে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হলো, র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু হলো, অথচ তখন তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় না! সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বরিশাল ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল দুপুরে দিকে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) দিনাজপুর শাখা ও জেলা সচেতন সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন হয়। এতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিরা মুখে কালো কাপড় বাঁধেন। মানববন্ধনে বাসদ নেতা কিবরিয়া হোসাইন বলেন, ‘অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে দেশদ্রোহের খাতায় নাম তুলে দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় এনে হয়রানি করা হচ্ছে।’ অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রগতি লেখক সংঘ ও মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ভাবনার প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও প্রথম আলো দিনাজপুর বন্ধুসভার সদস্যরা। নীলফামারী শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে সচেতন নাগরিকবৃন্দের ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এতে অংশ নেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ নীলফামারী বন্ধুসভার সদস্যরা।
পটুয়াখালীতে মানববন্ধন করেছে পটুয়াখালী প্রেসক্লাব ও প্রথম আলো বন্ধুসভা। গতকাল দুপুরে প্রেসক্লাব চত্বরে আয়োজিত মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ একাত্মতা প্রকাশ করেন। প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন ব্যানার্জী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বারবার মামলা করে গণমাধ্যমকর্মীদের কণ্ঠ রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও জেলা জাসদের নেতা, কবি, সাংবাদিকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে পটুয়াখালীর বাউফল প্রেসক্লাব। টাঙ্গাইলের সখীপুরে গতকাল মানববন্ধন করেছেন সখীপুর প্রেসক্লাবের সদস্যরা। এ কর্মসূচিতে উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদকর্মীরা অংশ নেন। সাংবাদিক ও সুধী সমাজের ব্যানারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গতকাল মানববন্ধন হয়েছে। বক্তারা বলেন, রাতের আঁধারে সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে তুলে নেওয়া হলো, এটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ঘটনা।
আপনার মতামত লিখুন :