এম রাসেল সরকার: পুলিশ পরিচয়ে বিভিন্ন পেশার মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। পরবর্তীতে কারও কারও হদিস পাওয়া গেলেও অনেকের কোনও খোঁজ পাওয়া যায় না। কখনও কখনও কেউ হয়তো নিজেই ফিরে আসেন। আবার কাউকে দেখা যায়, কোনও একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আদালতে সোপর্দ করছে। এসব নিয়েই কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকারের। তিনি বলেন, পুলিশ কখনই এমন কাজ করতে পারে না, করেও না। তিনি বলেন, যাকে যেই পরিচয়েই তুলে নেওয়া হোক, ভুক্তভোগীর স্বজনদের প্রথম কাজ হচ্ছে থানাকে অবহিত করা। সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা।
রাজধানী ঢাকাকে নিরাপদ রাখতে পুলিশের বিশেষ কোনও পদক্ষেপ আছে কিনা?
তিনি বলেন, রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে পুলিশ দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নিয়মিত তদারকি করে যাচ্ছেন। আগে সিনিয়র কর্মকর্তাদের তদারকিতে অংশগ্রহণ কম ছিল। এখন এই তদারকি বাড়ানো হয়েছে। এতে ফলাফলও ভালো আসছে। পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হলেও অনেক উন্নতি হয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির। আরও উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে নগরবাসীকে জিরো ক্রাইম সোসাইটি উপহার দেওয়া। যদিও পৃথিবীর কোথাও জিরো ক্রাইম সোসাইটি এখনও নিশ্চিত হয়নি। জিরো ক্রাইম সোসাইটি গড়তে না পারলেও আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাবো। যাতে অপরাধের মাত্রাটা সহনশীল পর্যায়ে থাকে। যে কারণে পুলিশের সব পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
কবে নাগাদ পুরো রাজধানীকে সম্পূর্ণ সিসিটিভির আওতায় আনতে পারবে পুলিশ?
তিনি বলেন, অপরাধ দমনে সিসিটিভি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেখানে সিসিটিভির ক্যামেরা থাকে সেখানে অপরাধীরা একটু সতর্ক থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সিসিটিভির ফুটেজ দেখে অপরাধীকে শনাক্ত করে। বর্তমানে রাজধানীতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি রয়েছে। সিসিটিভির ক্যামেরা বসানো নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি প্রজেক্টও চলমান রয়েছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সিসিটিভির অনেক ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। গুলশান-বনানীতে কয়েক হাজার ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এগুলো আবার মেনটেইনেন্সও করতে হয়। সিসিটিভির ক্যাবলগুলো অনেক সময় কেটে দেওয়া হয়। এতে ক্যামেরা অকার্যকর হয়ে যায়। এসব সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তাছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগেও এখন সবাই সিসিটিভি ক্যামেরা লাগায়। সেসব ক্যামেরারও সাহায্য নিয়ে থাকে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া বিষয়ে কী বলবেন?
তিনি বলেন, পুলিশ হোক আর যেকোনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়েই হোক, কাউকে তুলে নেওয়া হলে সেটা দ্রুত থানাকে অবহিত করতে হবে। ভুক্তভোগীর স্বজনদের প্রথম কাজ হচ্ছে থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করা। পুলিশকে অবহিত করা। তারপর থেকে পুলিশ সেই ঘটনার তদন্ত শুরু করবে। পুলিশ সবসময় একটি স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে কাজ করে। কাউকে এভাবে ধরে নিয়ে এসে আটকে রাখা পুলিশের কাজ নয়। এমন অস্বচ্ছতার কাজ পুলিশ করে না। আমরা যখন কাউকে ধরে নিয়ে আসি সেটা থানায় এন্ট্রি করে দিতে হয়। অন্যায়ভাবে কাউকে ধরে এনে আটকে রাখার কাজ পুলিশ করে না।
অনেক সময় দেখা গেছে, পুলিশ পরিচয়ে কোনও অপরাধী চক্র কাউকে তুলে নিয়ে যায়। সেটা কারও সঙ্গে টাকার ঝামেলা থাকতে পারে, জমিজমার দ্বন্দ্ব থাকতে পারে, নারীঘটিত সমস্যাও থাকে। প্রতিপক্ষ তুলে নিয়ে যায় পুলিশ পরিচয়ে। যে কারণে এমন ঘটনা ঘটলে পুলিশকে অবহিত করতে হবে। থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে হবে। আবার অনেকেই নানা কারণে আত্মগোপনে চলে যায়।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পুলিশ একটি পক্ষে কাজ করে এমন অভিযোগ রয়েছে।
তিনি বলেন, এমন অভিযোগ দুঃখজনক। এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাশা করি না। পুলিশ কারও শত্রু নয়। কোনও রাজনৈতিক দলেরও শত্রু নয়। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে না, স্বাধীনতাবিরোধী, তাদের বিষয়ে কোনও ছাড় নেই। তাছাড়া কেউ জনগণের জানমালের হুমকি হয়ে উঠলে পুলিশের কাজ তাদের প্রতিহত করা। এজন্য কেউ প্রতিপক্ষ মনে করলে কিছু করার নাই।
পুলিশের সেবা নিয়েও অভিযোগ আছে সাধারণ মানুষের?
তিনি বলেন, জনগণকে সেবা দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমাদের ডিউটির নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা নেই। চাকরি ধরনটাই হচ্ছে ২৪ ঘণ্টা কাজে থাকতে হবে। চাকরিতে যোগদানের পরপরই কারও ছয় মাস কারও এক বছর ট্রেনিং নিতে হয়। সেখানে মানুষকে কীভাবে সেবা দিতে হবে শেখানো হয়। ভুক্তভোগীকে সাহায্য করাই পুলিশের কাজ। পুলিশ যেন প্রকৃতপক্ষে জনগণের বন্ধু হয়ে কাজ করতে পারে। পুলিশকে সে পর্যায়ে নেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
২১তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকারের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখায় ২৮ বার শ্রেষ্ঠ উপ-কমিশনার (ডিসি) হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন বিপ্লব কুমার সরকার। ২০২২ সালের ৩ জুন অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পান। বর্তমানে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :