
মাওলানা শামীম আহমেদঃ মেরাজের বিবরণ পবিত্র কোরআনের সুরা নাজমে ও সুরা ইসরায় বিবৃত হয়েছে। প্রসিদ্ধ হাদিসের গ্রন্থ বুখারি, মুসলিম ও আব দাউদস হ অন্যান্য গ্রন্থে মেরাজের বিষয়টি নির্ভরযোগ্য বিশুদ্ধ সূত্রে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, শপথ নক্ষত্রের যখন তা বিলীন হয়। তোমাদের সাথি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিপথগামী হননি এবং বিভ্রান্ত হননি। আর তিনি নিজে থেকে কোনো কথা বলেন না। (বরং তিনি যা বলেন) তা প্রদত্ত ওহি (ভিন্ন অন্য কিছু) নয়। তাকে শিখিয়েছেন মহাশক্তিধর (জিবরাইল আ.)।
সে (জিবরাইল আ.) পাখাবিশিষ্ট, সে স্থিত হয়েছে দূর ঊর্ধ্বে। অতঃপর নিকটবর্তী হলো, পরে নির্দেশ করল। তারপর হলো দুই ধনুকের প্রান্তবর্তী বা আরও নিকট। পুনরায় তিনি ওহি করলেন তার বান্দার প্রতি যা তিনি ওহি করেছেন। ভুল করেনি অন্তর যা দেখেছে। তোমরা কি সন্দেহ করছ তাকে, যা তিনি দেখেছেন সে বিষয়ে। আর অবশ্যই দেখেছেন তিনি তাকে দ্বিতীয় অবতরণ স্থলে, সিদরাতুল মুনতাহার কাছে, তার নিকটেই জান্নাতুল মাওয়া। যখন ঢেকে গেল সিদরা যা ঢেকেছে, না দৃষ্টিভ্রম হয়েছে আর না তিনি বিভ্রান্ত হয়েছেন, অবশ্যই তিনি দেখেছেন তাঁর রবের বড় বড় নিদর্শনসমূহ। (সুরা নাজম ১-১৮)
শবে মেরাজ উপলক্ষ্যে আমাদের সমাজে কিছু নামাজ ও রোজা প্রসিদ্ধ রয়েছে। বিশেষত মেরাজের রাতে মসজিদের মিম্বরে মিম্বরে কিছু হাদিস এ রাতের বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে শুনানো হয়।
শবে মিরাজ উপলক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো নামাজ আল্লাহর রসুলের হাদিসের মাধ্যমে অথবা সাহাবিদের আমলের মাধ্যমে অথবা তাবেয়িদের আমলের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়নি। এ রাতের কোনো ইবাদত আল্লাহর রসুলের কোনো হাদিসের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়নি। মেরাজের পরে নবীজি যত বছর বেঁচেছিলেন, তাকেও বিশেষ কোনো আমল করতে দেখা যায়নি।
শবে মেরাজ এর বিশেষ কোনো আমল, রোজা বা ইবাদত নির্ধারিতভাবে শরীয়তে সাব্যস্ত নেই। মুমিনগণ নিজ পছন্দ অনুযায়ী যে কোনো ইবাদত বন্দেগি ও নেক আমল করতে পারেন।
শবে মেরাজ উপলক্ষ্যে নফল রোজা রাখার কোনো বর্ণনা কোরআন-হাদিসের কোথাও নেই। আল্লাহর রসুল ও তার অনুসারীরা এই দিনে বিশেষভাবে কোনো রোজা রেখেছেন এমন কোনো বর্ণনা ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই এই দিনে শবে মেরাজ উপলক্ষ্যে রোজা রাখা কোনো ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না।
রসুল সা. সে রাত্রিতে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখেছেন। জাহান্নামের প্রহরী মালেক ফেরেশতাকে দেখেছেন। তার দিকে ফিরে তাকাতেই তিনি আমাকে প্রথমেই সালাম দিলেন। (বুখারি৩১৮২, মুসলিম ২৫১)
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী এখানে স্পষ্ট বলেছেন যে, রজব মাসের কোন রাতের বিশেষ নামাজের ফজিলত সহিহ হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত নয়।
শবে মেরাজ যেহেতু আমাদের দেশে ২৭ তারিখে পালন করা হয়, সুতরাং এ রাতের বিশেষ নামাজ সহিহ হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত নয়। আল্লামা ইববে রজব হাম্ভলি রহ. বলেন, রজব মাসের বিশেষ কোন নামাজ সহিহভাবে প্রমাণিত নয়। (লাতায়িফুল মাআরিফ ১৬৪)
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের এ উপলক্ষ্যে বিশেষ কোনো আমলের নির্দেশ দেননি। এজন্য শবে মেরাজ উপলক্ষ্যে বিশেষ কোনো ইবাদত করা বেদআত। এ রাত আমাদের এটাই শেখায় ফরজ বিধান পাঁচ ওয়াক্ত ঠিক মত পড়তে হবে। অনেকে শবে মেরাজের ইবাদত নিয়ে মাতামাতি করেন, কিন্তু ফরজ নামাজই ঠিক মত পড়েন না।
সুতরাং এক রাতে ইবাদত করে শেষ করে ফেলবেন, আর ফরজ নামাজ ঠিক মত আদায় করবেন না, এমন কোনো বিধান ইসলাম দেয় না। সুতরাং এসব ইবাদত বর্জনীয়।
ধারাবাহিক ইবাদত অল্প হলেও আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দের। নিয়মিত নামাজ আদায়, আল্লাহর জিকির, তাসবিহ আদায়, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, সুদ, ঘোষ, মিথ্যা বলা থেকে বিরত থেকে আমলি জীবন যাপনই আল্লাহ তাআলা বান্দাদের থেকে কামনা করেন।
আপনার মতামত লিখুন :