মামুনুর রশিদ,দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ দিনাজপুর জেলায় এবারেও টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলনে কৃষকরাও খুশি। লাভজনক ফসল হলেও করোনা ভাইরাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে টমেটো আবাদ করে দাম না পেয়ে হতাশ দিনাজপুরের চাষিরা।
লকডাউনসহ বিভিন্ন কারণে পরিবহনে ভাড়া বেশি ও বাইরের ব্যবসায়ীদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। প্রতিদিনই পাইকারী বাজারে দাম কমছে। দুদিন আগেও যে টমেটো বিক্রি হয়েছে গাবুড়া হাটে ৪০০-৬০০ টাকা মণ, সেই টমেটো গতকাল রোববার বিক্রি হয়েছে ২৫০-৩০০ টাকা মণ।
দিনাজপুর জেলার সদর, ফুলবাড়ী, চিরিরবন্দর, বিরল, কাহারোল ও বোচাগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিপুল ও রাণীসহ কয়েকটি জাতের টমেটোর চাষ হয়। জানুয়ারির শেষে এই টমেটো আবাদের পর ক্ষেত থেকে তোলা হয় মার্চ মাসের শেষের দিকে। তাই বাজারে টমেটোর এখন ভরা মৌসুম। প্রতি মৌসুমে দিনাজপুর জেলার কাউগাঁ, গাবুড়া ও পাঁচবাড়ী বাজার থেকে কয়েক কোটি টাকার টমেটো বেচাকেনা হয়। এসব টমেটো যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গাবুড়ার হাটে টমেটোর আমদানি প্রচুর হলেও সেভাবে বিক্রি হচ্ছে না এবং ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আগের মতো যাচ্ছে না বলে জানান পাইকারী ব্যবসায়ীরা। তাই রোববার টমেটোর বাজারে দামে ধস নামায় বিপাকে ব্যবসায়ীসহ কৃষকরা।
দিনাজপুর সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের কৃষক মনো কুমার রায় বলেন, চলতি বছর ভাল লাভের আশায় এক বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করেন। টমেটোর দাম নেই। খরচও হয়েছে অনেক। একই অবস্থা অন্যান্য টমেটো চাষিদেরও। এক বিঘা জমিতে টমেটো আবাদে খরচ হয় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা।
ঢাকার টমেটো ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন জানান, গাবুড়া বাজার থেকে প্রতি ট্রাকে ১০ থেকে ১৫ টন টমেটো নিয়ে যায়। চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কম। তবে বেড়েছে পরিবহন ভাড়া। তবে সরকারিভাবে টমেটো সংরক্ষণ এবং বিপণনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকলে সারা বছর এলাকার টমেটো সারাদেশে ক্রেতাদের সরবরাহ করা যেত। টমেটো চাষিদের দাবি, অন্যান্য ফসলের মতো টমেটোরও ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হোক।
দিনাজপুর সদরের শেখপুরার রাজারামপুরের গাবুড়া টমেটো বাজার ইজারাদার মমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন এখান থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ মেট্রিক টন টমেটো ৫০-৬০টি ট্রাকে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। টমেটো নষ্টের এবং লোকসানের হাত থেকে কৃষককে বাচাঁতে এই এলাকায় টমেটো সংরক্ষণে কোল্ড স্টোরেজ করতে সরকারসহ বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে এলে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন তেমনি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানও ঘটবে। এতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিশীলতাও বাড়াবে নিঃসন্দেহে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষি কর্মকর্তা তৌহিদুল ইকবাল জানান, এবার জেলায় ১৯০০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :