• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩১ অপরাহ্ন

জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যার চুক্তির টাকা আসে দুবাই থেকে হুন্ডিতে


প্রকাশের সময় : জুন ১৯, ২০২২, ৪:২৫ পূর্বাহ্ন / ১৪০
জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যার চুক্তির টাকা আসে দুবাই থেকে হুন্ডিতে

মোঃ রাসেল সরকারঃ মতিঝিল আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুসহ জোড়া খুনের ঘটনার জট খুলছে। এ খুনের অন্যতম মাস্টার মাইন্ড শীর্ষ সস্ত্রাসী জিসানের সহযোগী মুসাকে রিমান্ডে এনে খুনের আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।

এ কিলিং মিশনের চুক্তি হয় ৯ লাখ টাকা দিয়ে। শীর্ষ সস্ত্রাসী জিসান ওই টাকা দুবাই থেকে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে পাঠিয়েছিল মুসার কাছে। পরে মুসা ভুটানে পালিয়ে থাকা মোল্লা শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করে,কীভাবে এই কিলিং মিশন সম্পন্ন করা যায়। এ ঘটনায় মোল্লা শামীম কিং মেকারের ভূমিকা পালন করেছে।

পরে মোল্লা শামীম খিলগাঁওয়ে সুমন নামে এক যুবকের মাধ্যমে শুটার ভাড়া করে। তাকে ৯ লাখ টাকাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। দেয়া হয় বিভিন্ন প্রলোভন। এতে শুটার ওই কিলিং মিশন সম্পন্ন করতে রাজি হয়।

পরে মোল্লা শামীম রাকিব নামে এক যুবকের মাধ্যমে পল্টনের একটি দোকান থেকে গুলি সংগ্রহ করে।
মুসা মামলার তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছেন যে, ব্রাজিল থেকে চোরাই পথে পাচার হয়ে আসা রিভলবার মোল্লা শামীমের কাছে আগে থেকেই ছিল। মোল্লা শামীম গুলিগুলো রাকিবের মাধ্যমে পল্টনের একটি দোকান থেকে সংগ্রহ করেছে। পরে চুক্তি অনুযায়ী শুটার এবং মোল্লা আকাশ শাহজাহানপুরে টিপুকে প্রকাশ্যে রাস্তায় খুন করে।

ডিবি পুলিশ মুসার তথ্যের ভিত্তিতে রাকিব ও আর্মস এর দোকানদার জিতুকে গ্রেপ্তার করেছে। মুসাকে খুনে ব্যবহৃত হওয়া অস্ত্র ও মোটরসাইকেলের ব্যাপারে মামলার তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদ করলে মুসা জানিয়েছেন যে, খুনে ব্যবহার ওই মোটরসাইকেল ও অস্ত্র কোথায় আছে সেটি মোল্লা শামীম জানে।

খুনের পরেই মোল্লা শামীম ভুটানে পালিয়ে গেছে। পুলিশ ইতিমধ্যে ভুটান পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য। গত ২৪শে মার্চ রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকার সড়কে খুন হন টিপু। ওই সময় গাড়ির কাছেই রিকশায় থাকা বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী প্রীতিও গুলিতে নিহত হন। আহত হন টিপুর গাড়িচালক মুন্না। এ ঘটনায় টিপুর স্ত্রী বাদী হয়ে শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেন।

সূত্র জানায়, গত শুক্রবার মুসার ৬ দিনের রিমান্ড শেষে ডিবি পুলিশ তাকে আবার অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আরও ১২ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন। পরে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্র্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবীর তাকে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়াও আদালত এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ইমরান রহমান জিতু ও রাকিব রহমানের দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার মুখ্য সমন্বয়কারী ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি নিফাত রহমান শামীম মানবজমিনকে জানান, রিমান্ডে মুসার আপডেট তথ্য নেই।

মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এ খুনের পরিকল্পনা হয় দুবাইয়ে। শীর্ষ সস্ত্রাসী জিসান মতিঝিল এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে জিসান মতিঝিলে এক সময় শীর্ষ সস্ত্রাসী বিকাশ গ্রুপের হয়ে কাজ করা মুসার সঙ্গে যোগাযোগ করে টিপু হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন করে। সূত্র জানায়, দুবাই থেকে মতিঝিলের এক হুন্ডি ব্যবসায়ীর কাছে টাকা আসে। পরে ওই টাকা রিসিভ করে মুসা। ওই হুন্ডি ব্যবসায়ীর নাম জানতে পেরেছে ডিবি পুলিশ। তাকে ধরার জন্য অভিযান চলছে।

সূত্র জানায়,টিপু হত্যাকাণ্ডে আদালতে এখন পর্যন্ত ১৬৪ ধারাই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার আসামি আকাশ ও মানিক। এ হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ডিবি পুলিশ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো; আকাশ, আবৃত্তিকার আহকামুল্লাহ এর ভাই আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল, নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির, ওমর ফারুক, মোরশেদুল ইসলাম, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক, মোহাম্মদ মারুফ খান, মশিউর রহমান, ইয়াসির আরাফাত, সেকান্দার শিকদার, হাফিজুল ইসলাম, সুমন শিকদার, গুলি সংগ্রহকারী রাকিব ও ইশতিয়াক জিতু।