• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৬:৫৬ পূর্বাহ্ন

কক্সবাজারে আদালতে জবানবন্দি দিলেন সেই নারী পর্যটক


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৫, ২০২১, ১:১৫ অপরাহ্ন / ১১৩
কক্সবাজারে আদালতে জবানবন্দি দিলেন সেই নারী পর্যটক

ঢাকা : কক্সবাজার সাগর পাড়ে পর্যটক নারী ধর্ষণের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মামলা দায়েরের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও একজন আসামিও এখনো পর্যন্ত ধরা পড়েনি। অভিযোগ উঠেছে, ধর্ষিতা নারী ও তার স্বামীর বিষয়ে পুলিশের নানা ‘অপকর্ম’সন্ধানের সুযোগ কাজে লাগাতে পারে আসামিরা। তারা এ সুযোগে ধরাছোঁয়ার বাইরে পালিয়ে যেতে পারে। এদিকে সাগর পাড়ে ধর্ষিতা নারী শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের বিচারিক হাকিমের আদালতে ১৭ পৃষ্ঠাব্যাপী বিবরণ তুলে ধরেছেন ২২ ধরার জবানবন্দিতে।

গত বুধবার রাতে কক্সবাজার সাগরতীরের একটি চা দোকানে এবং হোটেলে দুই দফা ধর্ষণের শিকার ওই নারীর স্বামীর দায়ের করা মামলাটি কক্সবাজার সদর মডেল থানায় বৃহস্পতিবার রাতে রেকর্ড হওয়ার পরই তদন্তের জন্য পাঠানো হয় ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছে।ট্যুরিস্ট পুলিশ মামলার এজাহারের কপি হাতে পেয়েই তদন্ত কাজে নেমে পড়ে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক রুহুল আমিন হাওলাদার এবং পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান ভিকটিম নারী ও তার স্বামীকে দীর্ঘক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

শুক্রবার কক্সবাজারের বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক হামিমুন তানজিম ভিকটিম নারীর ২২ ধারার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এ বিষয়ে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন জানান, ধর্ষণের শিকার ওই নারীর ১৭ পৃষ্ঠাব্যাপী জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন বিচারিক হাকিম। তিনি ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনাসহ কক্সবাজার শহরে প্রায় তিন মাস ধরে বিভিন্ন হোটেলে অবস্থানের বিস্তারিত বিবরণ জানিয়েছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, মামলার বাদী ভিকটিমের স্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ পৌর এলাকায়। সেখান থেকে স্ত্রীসহ দুই বছর আগে রাজধানী ঢাকার জুরাইন এলাকায় চলে আসেন। জবানবন্দিতে তিনি জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ২০১ নম্বর কক্ষে আশিকের হাতে ধর্ষণের কথা জানান। সেই সঙ্গে সানি বীচ এলাকার একটি চা দোকানের পেছনের কক্ষে হত্যার ভয় দেখিয়ে আরো দুই দুর্বৃত্ত তাকে ধর্ষণ করে বলে জানান। আশিক পূর্ব পরিচিত হলেও ওই নারী গত বুধবার তাকে অপহরণের সময়েই কেবল তাকে দেখেছে বলে জানিয়েছেন।

গত বছরের ৮ নভেম্বর একবার কক্সবাজার এসে তার স্বামীর সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হয়ে পুলিশের ৯৯৯ নম্বরে তিনি ফোন দেওয়ার তথ্যও প্রকাশ করেন বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। সেই সময় ৯৯৯ নম্বরে ওই নারী পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তার স্বামী তাকে মারধর করছেন। তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে মাদক কারবারে জড়িত থাকারও অভিযোগ উত্থাপন করেন। কক্সবাজারে প্রায় গত তিন মাস ধরে বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান নেওয়ার কথাও জবানবন্দিতে ওই নারী স্বীকার করেন।

এদিকে পর্যটক নারী ধর্ষণের ঘটনার প্রধান আসামি আশিকুল ইসলাম আশিক কক্সবাজার সৈকতের একজন ‘মূর্তিমান আতংক’হিসাবেই পরিচিতি রয়েছে সর্বত্র। তিনি একজন চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও মাদক কারবারি হিসাবেও পুলিশের কাছে তালিকাভুক্ত। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ১৬টি মামলা। কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া মহল্লার মোহাম্মদ করিমের ছেলে আশিকুল ইসলাম আশিকের রয়েছে ৩২ সদস্যের একটি বাহিনীও। মাত্র ৪ মাস আগে একটি ছিনতাই মামলায় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েই নারী ধর্ষণের এমন ঘটনায় নেতৃত্ব দেয় বলে ধর্ষিতা নারীর অভিযোগে জানা গেছে।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান জানিয়েছেন, আশিক সাগর পাড়ের বড় মাপের একজন ছিনতাইকারী এটা আমাদের জানতে একটু বিলম্ব হয়ে গেছে। এটাও জেনেছি যে, তার বিরুদ্ধে ছিনতাই, মাদক কারবার এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা রয়েছে ১৬টি। পুলিশ সুপার জানান, আশিক সাগর পাড়ের হোটেল ও কটেজ জোন থেকে ব্যাপক হারে চাঁদাবাজি করার তথ্যও তাদের কাছে এসেছে। এমনকি যেখানে মাদকের ডেরা সেখানেই আশিক, যেখানে অপরাধজনক ঘটনা সেখানেই আশিকের সম্পৃক্ততার তথ্যও পুলিশের কাছে আসার কথা জানান তিনি। তবে এসব তথ্য পুলিশের কাছে বিলম্বে আসায় এতদিন আশিককে পাকড়াও করা হয়নি- জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার। এবার আর হাত ছাড়া হওয়ার সুযোগ পাবে না বলেও তিনি নিশ্চিত করে জানান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশিক বাহিনীর হুংকারে সাগর পাড়ের এমন কোনো হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ এবং পর্যটন ব্যবসায়ী নেই যারা কিনা তাকে ভয় পায় না। প্রত্যেক হোটেল-কটেজের মালিককেই প্রতি সপ্তাহে ৫/১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয় আশিক বাহিনীকে। পর্যটক ধর্ষণ মামলার আরেক আসামি এবং আশিক বাহিনীর সদস্য মেহেদী হাসান বাবু হচ্ছেন ৩টি মামলার আসামি। সবগুলোই মোটরবাইক চুরির মামলা। তার বাবা শহরের একটি হোটেলের দারোয়ান। অথচ শহরের বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান বাবু ইতিমধ্যে ৫ তলা ভবনের মালিক।

নারী পর্যটক মামলার আসামি ইস্রাফিল খুদার বিরুদ্ধেও রয়েছে ছিনতাইয়ের ২টি মামলা। ইতিমধ্যে র‌্যাবের হাতে আটক হওয়া অপর আসামি হোটেল জিয়া গেস্ট ইন ম্যানেজার রিয়াজুদ্দিন ছোটন হচ্ছেন আশিকের ঘনিষ্টজন। ছোটনও অনেক বিত্তবৈভবের মালিক। র‌্যাবের হাতে আটক ছোটনকে এখনো পর্যন্ত ট্যুরিস্ট পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, মামলায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, ছিনতাইকারী আশিক বাহিনীর ৩২ সদস্য কক্সবাজার সৈকত কেন্দ্রিক দাপিয়ে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই কাজে জড়িত থাকলেও জেলা পুলিশ এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আশিক বাহিনীর সদস্যরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাগর পাড়ের শৈবাল পয়েন্টের ঝাউবিথীতে মাদকের আড্ডা বসায়। সবাই মাদক সেবনের পর তারা দলে দলে ভাগ হয়ে সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলি, হিমছড়ি, কবিতা চত্বরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে ছিনতাই কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

ছিনতাই ও মাদক কারবারি আশিক বাহিনীর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবার ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে আশিকসহ অন্যান্য বাহিনী সদস্যদের মেলামেশাসহ নানা অনুষ্ঠানের ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। সাদ্দাম হোসেন শহরের বাহারছড়া মহল্লায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। এমন সুবাদে মহল্লার এসব ছিনতাইকারীর দল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির সঙ্গেই উঠবস করে থাকেন।

তবে এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, একই মহল্লায় থাকি বিধায় হয়তোবা তারা কোনো অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে ছবি ধারণ করতে পারে। তবে তার মানে এই নয় যে, তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। বাস্তবে ওদের কেউই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী নয়।সাদ্দাম হোসেন বিষয়টি নিয়ে তার ফেসবুকেও একটি স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, এসব ছিনতাইকারী বাহিনীর সদস্যদের তিনি কঠোর শাস্তি চান।