• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০১ পূর্বাহ্ন

আল্লাহর প্রেমে সর্বোচ্চ ত্যাগের উৎসব ঈদুল আযহা


প্রকাশের সময় : জুলাই ২২, ২০২১, ৪:৪২ অপরাহ্ন / ৫৯০
আল্লাহর প্রেমে সর্বোচ্চ ত্যাগের উৎসব ঈদুল আযহা

নিজস্ব প্রতিবেদক: কুরবানির ঈদ সম্পর্কে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘বকরি-ঈদ’ শীর্ষক কবিতায় লিখেছেন: ‘শহিদান’দের ঈদ এলো বকরীদ!/অন্তরে চির-নওজোয়ান যে তারই তরে এই ঈদ। আল্লার রাহে দিতে পারে যারা আপনারে কোরবান,/নির্লোভ নিরহংকার যারা, যাহারা নিরভিমান,/দানব-দৈত্যে কতল করিতে আসে তলোয়ার লয়ে,

ফিরদৌস হতে এসেছে যাহারা ধরায় মানুষ হয়ে,/অসুন্দর ও অত্যাচারীরে বিনাশ করিতে যারা জন্ম লয়েছে চিরনির্ভীক যৌবন-মাতোয়ারা,- /তাহাদেরই শুধু আছে অধিকার ঈদগাহে ময়দানে,/তাহারাই শুধু বকরীদ করে জান মাল কোরবানে।তসবি ও তলোয়ার লয়ে আসি অসুরে যায় বিনাশী।/এরাই শহিদ, প্রাণ লয়ে এরা খেলে ছিনিমিনি খেলা,/ভীরুর বাজারে এরা আনে নিতি নব নওরোজ-মেলা!

প্রাণ-রঙ্গিলা করে ইহারাই ভীতি-ম্লান আত্মায়,/আপনার প্রাণ-প্রদীপ নিভায়ে সবার প্রাণ জাগায়।/! একই কবিতায় কবি নজরুল আরও লিখেছেন: এরা আল্লার সৈনিক, এরা ‘জবীহ-উল্লা’-র সাথি,/এদেরই আত্মত্যাগ যুগে যুগে জ্বালায় আশার বাতি।/ইহারা, সর্বত্যাগী বৈরাগী প্রভু আল্লার রাহে,/ভয় করে নাকো কোনো দুনিয়ার কোনো সে শাহানশাহে।/এরাই কাবার হজের যাত্রী, এদেরই দস্ত চুমি!
কওসর আনে নিঙাড়িয়া রণক্ষেত্রের মরুভূমি!/‘জবীহ-উল্লা’র দোস্ত ইহারা, এদেরই চরণাঘাতে,/‘আব-জমজম’ প্রবাহিত হয় হৃদয়ের মক্কাতে।/ইব্রাহিমের কাহিনী শুনেছ? ইসমাইলের ত্যাগ?/আল্লারে পাবে মনে কর কোরবানি দিয়ে গরু ছাগ?
আল্লার নামে, ধর্মের নামে, মানব জাতির লাগি/পুত্রেরে কোরবানি দিতে পারে, আছে কেউ হেন ত্যাগী?/…
কোরান মজিদে আল্লার এই ফরমান দেখো পড়ে,/…/ইব্রাহিমের মতো পুত্রেরে আল্লার রাহে দাও,/নইলে কখনও মুসলিম নও, মিছে শাফায়ৎ চাও! …
বকরীদি চাঁদ করে ফরয়্যাদ, দাও দাও কোরবানি,/আল্লারে পাওয়া যায় না করিয়া তাঁহার না-ফরমানি! এবং সীমাহীন প্রেম প্রীতি ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে ৷

আরবিতে ঈদুল আযহা শব্দের অর্থ হচ্ছে আত্মত্যাগের উৎসব। ঈদুল আযহা আল্লাহর প্রেমের পথে সর্বোচ্চ ত্যাগের আনন্দের প্রতীক। কুরবানি হতে হবে আন্তরিক। যারা হজব্রত পালন করেন তাদের হজ্ব ও পশু কুরবানি কবুল হওয়া নির্ভর করছে খোদা-প্রেমের গভীরতা ও আন্তরিকতার মাত্রার ওপর।মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছুর আকর্ষণ ত্যাগ করতে পারা এবং লোভ-লালসাসহ সব ধরনের পশু-প্রবৃত্তিকে কুরবানি করতে পারার মধ্যেই রয়েছে হজ ও পশু কুরবানির সার্থকতা।ঈদের দিন জামায়াতে নামাজ পড়ার আগেই আমরা মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই এমন এক মহতী উৎসব ও অজস্র নেয়ামত দান করার জন্য। ঈদের দিনসহ অন্তত তিন দিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর এ উপলক্ষে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানানোর রীতি রয়েছে।

ত্যাগ আর কুরবানির মহিমায় ভাস্বর পবিত্র কুরবানির ঈদ। এ দিনে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) প্র তাঁর প্রিয়পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করার খোদায়ি নির্দেশ সংক্রান্ত মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তিনি স্বপ্নে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর রাস্তায় কুরবানি করার নির্দেশ পেয়ে প্রিয়পুত্র হযরত ইসমাইলকে কুরবানি করার সিদ্ধান্ত নেন। পুত্র ইসমাইলকেও তাঁর স্বপ্নের কথা বলেন। যেমন পিতা, তেমন পুত্র! নিজের কুরবানির কথা শুনেও ঘাবড়ালেন না তিনি। ইসমাইল বললেন, ‘হে আমার পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তা-ই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।’

আল্লাহর প্রতি হযরত ইব্রাহিমের এমন একনিষ্ঠ প্রেম শয়তানের সহ্য হলো না। সে এই পরীক্ষাকে ব্যর্থ করতে একবার যায় বাবার কাছে আরেকবার ছেলের কাছে। মায়ের কাছে গিয়েও প্ররোচনা দিচ্ছিল ইবলিস। কিন্তু কোনো কাজই হলো না। সবার কাছ থেকে বিমুখ হলো অভিশপ্ত শয়তান।
শয়তান চলে যাওয়ার পর সংবেদনশীল মুহূর্তটি ঘনিয়ে এলো। দয়ালু পিতা তাঁর প্রিয় পুত্রকে জমিনে শুইয়ে দিলেন। ধারালো ছুরি চালালেন পুত্রের গলায়। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছেন হযরত ইব্রাহিম (আ)! এমন সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐশী আওয়াজ এলো: “হে ইব্রাহিম! তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করেছ। আল্লাহ ইসমাইলকে কুরবানি করার আদেশ রহিত করেছেন।” এরপর আল্লাহ একটি দুম্বা পাঠালেন ইসমাইলের পরিবর্তে কুরবানি করতে। হযরত ইব্রাহিম তা-ই করলেন।

হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর ছেলে ইসমাইল (আঃ)-এর আত্মত্যাগকে স্মরণ করে প্রতিবছর হাজীরা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্যের প্রমাণস্বরূপ পশু কুরবানি করেন। এছাড়া, সামর্থবান মুসলমানরাও এদিন কুরবানি দিয়ে থাকেন। সারা বছর গোশত কিনার সামর্থ্য না রাখলেও দরিদ্র ও নিঃস্ব মুসলমানরা বিত্তবান মুসলমানের কুরবানির ওসিলায় কুরবানির গোশত খাওয়ার সুযোগ পান।
এখানে আমরা স্মরণ করতে পারি ইসলাম ধর্মের নীতিমালাকে জাগিয়ে তোলার জন্য হযরত ইমাম হুসাইনের অনন্য আত্মত্যাগের কথা। তিনি কেবল নিজের জীবনই বিসর্জন দেননি ইসলামের জন্য। নিজের পরিবারের প্রায় সব সদস্য ও এমনকি এক বছরের বা ছয় মাসের শিশু সন্তানকেও আল্লাহর রাহে কুরবানি করেছেন। তাঁর এই আত্মত্যাগ হযরত ইব্রাহিমের আত্মত্যাগকেও ছাড়িয়ে গেছে। ইমাম হুসাইন (আ) এটাই শিখিয়ে গেছেন যে ইসলামকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনে নিজের জীবন, পরিবার ও স্ত্রী-কন্যাদের জীবন বিলিয়ে দিতে হবে এবং এমনকি তাদের লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়কেও ইসলামের চেয়ে বিন্দুমাত্র প্রাধান্য দেয়া যাবে না।

ইসলামের পথে তথা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে জুলুমের মোকাবেলায় ইমাম হুসাইনের (আ) আত্মত্যাগে ভাস্বর কারবালার মহাবিপ্লব এবং মহানবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্যদের আত্মত্যাগের পর আমরা আধুনিক যুগে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানির প্রোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখেছি ইরানের ইসলামী বিপ্লবে, ইসলামী ইরানের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম ইমাম খোমেনী (র)’র জুলুম-বিরোধী আপোষহীন নীতিতে ও তারই সুবাদে পশ্চিম এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়া শাহাদাতের সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং এর ক্রমবিকাশে। এই আত্মত্যাগ ও শহীদী চেতনার বলেই পরাশক্তিগুলোর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ইরানের ইসলামী বিপ্লব ও তার সহযোগী ও অনুগামী শক্তিগুলো অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে এবং মার্কিন সরকার ও ইহুদিবাদী ইসরাইলসহ শয়তানি শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে জোরালো সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আপোষহীন এই সংগ্রামে