• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৩:১৭ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীতে চাকরিচ্যুত পাওনা টাকা চাওয়ায় মেডিকেল কতৃপক্ষের নির্যাতনের শিকার ডা. রবিন হাসান


প্রকাশের সময় : মে ১৫, ২০২২, ৮:৪২ পূর্বাহ্ন / ১৮৯
রাজশাহীতে চাকরিচ্যুত পাওনা টাকা চাওয়ায় মেডিকেল কতৃপক্ষের নির্যাতনের শিকার ডা. রবিন হাসান

শেখ শিবলী রাজশাহী ব্যুরোঃ রাজশাহীতে মোডিকেল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনা, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন কর্ম কার্ন্ডের জেরে বিতর্কিত রাজশাহী শাহ মাখদুম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পাওনা টাকা চাওয়ায় ঐ হাসপাতালে চাকরি রত ডাক্তারকে বেধরক মারপিট ও রক্তাক্ত যখমসহ মোটরবাইক, মানিব্যাগ ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ডাক্তার রবিন সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন হাসপাতালটির বিভিন্ন অনিয়ম নির্যাতিত হবার বিষয়ে। বেসরকারী এ হাসপাতালের সাবেক এক ডাক্তারের সিল সাইন নকল করে ভুয়া রিপোর্ট তৈরির প্রতিবাদ করে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত হন ভুক্তভোগী ডাঃ রবিন হাসান। অগ্রযাত্রা’র হাতে আসা বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজেও ডাক্তার রবিনকে মারধর এবং নির্যাতনেরম প্রমাণ মিলেছে৷ অনুসন্ধান ও ডাঃ রবিনের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে-

গত দুই বছর ধরে রাজশাহীর শাহ মাখদুম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরি করেন ডা. রবিন হাসান হাবিব। এক সময় এখানে কর্মরত ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের বায়োকেমেস্ট্রির স্বনামধন্য অধ্যাপক ডা. ইরফান রেজা। বেশ কিছু দিন আগে তিনি হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে চলে যান। এর পর তাঁর সিল ও সাইন নকল করে বিভিন্ন মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলোর রিপোর্ট দেওয়া হতো, যার সবই মূলত ভুয়া ছিলো । একইভাবে আল্ট্রাসাউন্ডেরও ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া হতো এ হাসপাতাল থেকে।

ডা. রবিন হাসান হাবিবের অভিযোগ, বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হবার পর তিনি এ নিয়ে হাসপাতালের এক পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন এবং অনৈতিক এ কাজের প্রতিবাদ জানান। কারণ মেডিকেল রিপোর্টের মতন গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এমন প্রতারণা কিছুতেই মানতে পারছিলেন না ডাঃ রবিন। মূলত এরপর থেকেই তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয় কর্তৃপক্ষ।

এক পর্যায়ে ঠুনকো অযুহাত দেখিয়ে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে শোকজ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাসময়ে শোকজের জবাবও দেন তিনি। তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

তিনি আরও বলেন, ‘তারপরও আমাকে চাকরিতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। স্থায়ী অব্যাহতিও দেওয়া হচ্ছে না। এতে আমি অন্য কোথাও চাকরিতেও যোগ দিতে পারি নি। এরপর আমি চাকরি ফিরে পেতে এবং পাওনা টাকা চেয়ে আবার আবেদন করি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো জবাব দেয়নি। বাধ্য হয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে কোর্টের মাধ্যমে টাকা চেয়ে তাঁদের কাছে আইনি নোটিস দিই। আড়াই মাস হয়ে গেলো, তবুও নোটিশের কোনো জবাব আসেনি। এরই মধ্যে অনলাইনে একটা ব্রেসলেস অর্ডার দিই আমি, গতকাল বৃহস্পতিবার সেই ব্রেসলেস আনতে গিয়ে হাসপাতাল চত্বরে তাদের আক্রমণের শিকার হই৷’

হামলার বর্ণনা দিয়ে ডা. রবিন বলেন, ‘হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনিরুজ্জামান স্বাধীন ও তার দুই ভাই মিঠু ও টিটু আমার ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা রড দিয়ে আমাকে আঘাত করে। তাদের সঙ্গে আনুমানিক আরও ১৫ জন যোগ দেয়। হাসপাতাল মালিকের ভগ্নিপতি ডাঃ মোজাম্মেল আমাকে মারার ইঙ্গিত দিয়েছিল; কিন্তু তিনি সরাসরি গায়ে হাত তোলেননি। পরবর্তীতে আমাকে রক্ষার বাহানাও করেন তিনি।’

শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর মোজাম্মেল হকের সাথে ভুক্তভোগী ডাঃরবিনের কথোপকথনের একটি ভিডিও এসেছে অগ্রযাত্রা’র হাতে।তাতে ডাঃরবিন যে টাকা পাবেন তা মোজাম্মেল কে স্বীকার করতে দেখা ও শোনা যায়-
এই হাসপাতালে মাঝে মাঝেই স্বাস্থ্যকর্মী নিগ্রহের ঘটনা ঘটে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু দিন আগে একই কারণে হাসপাতালের মালিকের ভাইয়ের স্ত্রীর হাতে মারধরের শিকার হন কর্মরত এক নার্স।

এ ঘটনায় ওই নার্স চন্দ্রিমা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু তদন্ত শুরুর আগেই চাপ প্রয়োগ করে মামলা মীমাংসা করতে বাধ্য করা হয় তাঁকে। পরবর্তীতে তিনি চাকরি ছেড়ে চলে যান।

ডা. রবিন হাসান হাবিব বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) থেকে ২০২০ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেছেন। তিনি শেবাচিম ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি নগরীর খরখরি এলাকায় অবস্থিত শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজের পাশে পান্থাপাড়া গ্রামে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শাহ মাখদুম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মুজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, ‘গতকাল এ রকম একটি ঘটেছে। সরেজমিনে এসে খোঁজ নিলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।’

এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন চিকিৎসক শুধু কেন, সাধারণ মানুষ কেনো নাজেহাল হবে তা আমি প্রত্যাশা করি না।’

শাহ মাখদুমে একজন অধ্যাপকের সিল ও সাইন নকল করে পরীক্ষার-নিরীক্ষার রিপোর্ট প্রদানের সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কোনো তথ্য দিতে পারছি না, দুঃখিত।’

হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত হাসপাতাল মালিকের ভগ্নিপতি ও সহকারী পরিচালক ডা. মোজাম্মেল হক বেলালকে একাধিকবার চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যায়নি।