• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৮:৩৩ অপরাহ্ন

আওয়ামী লীগের জরিপে ১০০ ক্লিন এমপির তালিকায় যাঁরা


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৪, ২০২২, ৯:০৪ অপরাহ্ন / ৪২১
আওয়ামী লীগের জরিপে ১০০ ক্লিন এমপির তালিকায় যাঁরা

এম শিমুল খান/এমডি শোহান/মোহাম্মদ আলীঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর ২ বছরের কম সময় বাকি। প্রতিবারই আওয়ামী লীগ তার অর্ধেক মেয়াদের পর সারা দেশে সংসদ সদস্যদের নিয়ে জরিপ করে। এই জরিপে মূলত পাঁচটি তথ্য গ্রহণ করা হয়।

প্রথমত, দেখা হয় নির্বাচিত এমপিদের এলাকায় জনপ্রিয়তা কতটুকু। দ্বিতীয়ত, নির্বাচিত এমপিরা এলাকায় কতটুকু কাজ করছেন এবং যে সমস্ত নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো করেছিলেন, তা কতটুকু পূরণ করেছেন। তৃতীয়ত, এলাকায় তারা কোনো বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন কিনা। বিশেষ করে সন্ত্রাস, মাদক, নারী নির্যাতন বা অন্য কোনো অপরাধ চক্রের সঙ্গে জড়িত কিনা। কিংবা এই চক্রকে সহযোগিতা করেছেন কিনা। চতুর্থত, তাদের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কিনা বা তারা নিজেরা দুর্নীতিতে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা। পঞ্চমত, দলের ভিতরে বিভক্তি সৃষ্টি বা অনৈক্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান বা ভূমিকা কি। এই পাঁচটি বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগ একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আড়াই বছর পর থেকে একাধিক জরিপ করে। আর এই সমস্ত জরিপের উপর ভিত্তি করেই আওয়ামী লীগ সভাপতি পরবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

আওয়ামী লীগের এরকম প্রথম জরিপটি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে এবং এই জরিপে আওয়ামী লীগের ১০০ সংসদ সদস্য পাওয়া গেছে। যাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ নাই এবং এলাকায় তারা এখন পর্যন্ত তাদের অবস্থান অটুট রেখেছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন একেবারে আনকোরা তৃণমূলের নেতারা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শুধু আওয়ামী লীগের না, বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা। কাজেই তিনি তার এলাকায় নয়, পুরো বাংলাদেশেই সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আওয়ামী লীগ সভাপতির নেতৃত্বে আরও যাদের বিরুদ্ধে কোনোরকম অভিযোগ নাই, সম্পূর্ণ ভালো ইমেজ নিয়ে তারা তাদের নির্বাচনী এলাকায় দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাকের মতো হেভিওয়েট নেতারা।

এছাড়াও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় অপেক্ষাকৃত কম আলোচিত নেতারাও এলাকায় তাদের অবস্থান সংহত রেখেছেন এবং তাদের জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে তারা এখনো সংহত অবস্থায় রয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো এলাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো রকম বিতর্ক তৈরি হয়নি। ঠাকুরগাঁও-১ আসনের রমেশ চন্দ্র সেন, দিনাজপুর-১ আসনের মনোরঞ্জন শীল গোপাল,দিনাজপুর-২ আসনে খালেদ মাহমুদ চৌধুরী, দিনাজপুর-৩ আসনের ইকবালুর রহিম, দিনাজপুর-৪ আসনের আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মতো এমপিরা এখনো তাদের অবস্থান সংহত রেখেছেন। নিলফামারী-২ আসনের আসাদুজ্জামান নূর তার অবস্থানকে আগের চেয়েও সংহত করেছেন এবং এলাকায় তিনি একটি আলাদা ইমেজ তৈরি করেছেন। রংপুর-৪ এ টিপু মুনশি অবস্থা আগের মতই সংহত। রংপুর-৬ শিরীন শারমিন চৌধুরী তার এলাকায় অপরিহার্য রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিত হয়েছেন।

গাইবান্ধা-২ আসনে মাহবুব আরা গিনি নিজের জনপ্রিয়তা এলাকায় অটুটু রেখেছেন। গাইবান্ধা- ৩ আসনের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বীর অবস্থাও আগের মত সংহত এবং তিনি কোনো নতুন বিতর্কে জড়ান নি। এছাড়াও আরো যে সমস্ত নির্বাচনী এলাকাগুলোতে আওয়ামী লীগের অবস্থান অত্যন্ত সংহত এবং যারা এখন পর্যন্ত তাদের নির্বাচনী এলাকায় ক্লিন ইমেজ নিয়ে রয়েছেন তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নেতারা না থাকলেও আছেন বেশ কিছু তরুণ এবং উদীয়মান নেতা। আওয়ামী লীগ সরকারের দু’বারের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক নাটোর-৩ থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার এলাকায় অবস্থান এখনো ভালো। আওয়ামী লীগের নতুন এমপি মোহাম্মদ নাসিমের পুত্র তানভীর শাকিল জয় সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। তিনি এখন তার এলাকায় ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছেন এবং তিনি মোটামুটি সেখানে একক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন মেহেরপুর থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এলাকায় তার অবস্থা এখন সংহত এবং তিনি এলাকায় জনপ্রিয়। আওয়ামী লীগের আরেক নেতা মির্জা আজম জামালপুর থেকে ছয় বারের নির্বাচিত এমপি। তিনিও তার এলাকার অবস্থান ধরে রেখেছেন। শুধু তার নির্বাচনী এলাকা নয়, জামালপুরে তিনি একক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। নড়াইল-২ থেকে নির্বাচিত মাশরাফি-বিন-মর্তুজা এলাকায় কোনো বিতর্ক তৈরি করতে দেননি এবং তিনি এলাকায় আগের অবস্থান ধরে রেখেছেন। শেখ হেলাল উদ্দিন বাগেরহাট-১ থেকে নির্বাচিত। এলাকায় তিনি অবিসংবাদিত নেতা হিসেবেই পরিচিত। শেখ তন্ময় বাগেরহাট-২ থেকে নির্বাচিত। এলাকায় তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই আবির্ভূত। হাবিবুন নাহার বাগেরহাট-৩ থেকে নির্বাচিত এবং এলাকায় তার অবস্থান আগের মতোই অটুট রয়েছে। পঞ্চানন বিশ্বাস খুলনা-১ থেকে নির্বাচিত এবং এলাকায় তিনি বিতর্কের উর্ধ্বে অবস্থান করছেন। আব্দুস সালাম মুর্শেদী খুলনা-৪ থেকে নির্বাচিত। এলাকায় তার অবস্থান ক্রমশ সুসংহত হয়েছে বলেই প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত ভোলা-৩ এ নুরনবী চৌধুরী শাওন জনপ্রিয় হলেও তাকে নিয়ে অন্যরকম বিতর্কও রয়েছে। বরিশাল-১ আসনে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ একক জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ন রেখেছেন এবং তিনি দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকার গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে এখনো তার অবস্থানকে ধরে রাখতে পেরেছেন। ময়মনসিংহ-১ আসন থেকে জুয়েল আরেংও নিজেকে ক্রমশ পরিণত করছেন এবং এলাকায় তার অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন। সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুর পর কিশোরগঞ্জ-১ আসনের মনোনয়ন পান তার বোন সৈয়দা জাকিয়া নূর। তিনিও ক্রমশ এলাকায় তার অবস্থান সংহত করেছেন এবং জনপ্রিয় হচ্ছেন। রাষ্ট্রপতির পুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে তার অবস্থানকে ধরে রেখেছেন এবং সংহত করেছেন। জিল্লুর রহমানের পুত্র নাজমুল হাসান পাপন কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে তার ক্লিন ইমেজ অব্যাহত রেখেছেন। মানিকগঞ্জ-২ আসনে সংগীত শিল্পী মমতাজ এলাকায় এখনো তার জনপ্রিয়তাকে ধরে রেখেছেন এবং তিনি এলাকায় অবিসংবাদিত নেতা হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছেন।এভাবে দেখা গেছে যে, আওয়ামী লীগের ১০০ জন এমপি রয়েছেন যাদেরকে নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তবে ঢাকা মহানগরীতে আওয়ামী লীগের এমপিদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালই শুধুমাত্র নিজেকে সবধরনের বিতর্ক থেকে মুক্ত রাখতে পেরেছেন। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ এভাবে প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর জরিপ করবে এবং এইসব জরিপের ভিত্তিতেই শেষ পর্যন্ত আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।‎