• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা বাস আর হকারদের দখলে : ৩টি মহাসড়কের মিলনস্থল হলেও পুলিশের কাছে গুরুত্বহীন


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ২৮, ২০২৩, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন / ৮৭
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা বাস আর হকারদের দখলে : ৩টি মহাসড়কের মিলনস্থল হলেও পুলিশের কাছে গুরুত্বহীন

মোঃ রাসেল সরকার, ঢাকাঃ উপরে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার। নিচে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা। ঢাকা-চট্টগ্রাম ৮ লেনের মহাসড়ক, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একাংশ (ডেমরা সড়ক), এবং সর্বোপরী রাজধানী থেকে বের হওয়ার পথ মিলেছে এই চৌরাস্তায়। গুরুত্বপূর্ণ এই মোড়ে দিন রাত ভয়াবহ যানজট লেগে থাকে। শুধু যানজট বললে ভুল হবে, বাসের ভিড়ে পথচারীদের হাঁটার মতোও জায়গা থাকে না।

ভুক্তভোগিদের মতে, পুলিশ ইচ্ছা করলে সে যানজট নিরসন করতে পারে। কিন্তু কেনো করে না সে প্রশ্নের জবাবে পরিবহন শ্রমিকরা বলেছেন, এখানে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠালেই পুলিশকে বাড়তি টাকা দিতে হয়।

সরেজমিনে পুরো এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হলেও যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার যানজট নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের কোনো ভাবনা নেই। বরং পুলিশের সামনেই একটার পর একটা বাস এসে দাঁড়াচ্ছে রাস্তার মোড়ে। হেলপাররা হাঁক ছেড়ে যাত্রী ওঠাচ্ছে। একটার পেছনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে আরেকটা।

এক পর্যায়ে বাসের ভিড়ে পথচারীদের চলার মতো পথ থাকছে না। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার উপর দিয়ে গেছে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার। ঢাকা-চট্টগ্রাম ৮ লেনের মহাসড়ক ফ্লাইওভারের সামনে মিশেছে চৌরাস্তা থেকে কিছু দূরেই। সেখানে ৮ লেনের মধ্যে ৬ লেনই দখলে নিয়েছে ফ্লাইওভার।

দুই পাশে সরু রাস্তা দিয়ে কোনো মতে একটা করে গাড়ি প্রবেশ করতে পারে। সেই রাস্তাও এক বছরের বেশি সময় ধরে ভাঙা। যদিও কিছুদিন যাবত রাস্তার কাজ চলছে জোড়ে সোড়ে। ভাঙাচোরা এই রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করতে গিয়ে ফ্লাইওভারের মুখে যানজট লেগে থাকে। এরপর খানাখন্দের রাস্তা পার হয়ে চৌরাস্তায় এসে আবার যানজট।

এখানে কোন গাড়ি কোন দিকে যাবে তার কোনো নির্দ্দিষ্ট গতিপথ নেই বললেই চলে। ট্রাফিক পুলিশ মোড়ে ডিউটি করলেও তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। চৌরাস্তা থেকে মাওয়ার দিকে যে রাস্তাটি গেছে তার বেশির ভাগ অংশ দখল করে রেখেছে হকাররা।

ভ্যান গাড়ি, ঠেলাগাড়ির উপর হরেক রকমের পসরা সাজিয়ে তারা রাস্তার বেশির ভাগ অংশ দখলে রেখেছে। বাকী অংশে দাঁড়িয়ে থাকে বাস। তুরাগ পরিবহনের বাসে পুরো চৌরাস্তা দখল হয়ে থাকে দিন রাত। শহীদ ফারুক সড়কের মাথা থেকে ছাড়ে সিটি সার্ভিসের বাসগুলো। বাসগুলো ভিড়ে শহীদ ফারুক সড়কে প্রবেশ করা যায় না। শহীদ ফারুক সড়কের বেশির ভাগ অংশও দখলে রেখেছে হকাররা।

বাকী যত টুকু খালি আছে তা হিউম্যান হলারের দখলে। সদরঘাটমুখি হিউম্যান হলার গুলোর ভিড়ে শহীদ ফারুক সড়কে রিকশা চলাচলের মতো অবস্থা থাকে না। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, যাত্রাবাড়ীর চৌরাস্তার যানজট মনুষ্য সৃষ্টি। পরিবহন শ্রমিক আর হকাররা মিলে পুরো এলাকার রাস্তা দখল করে রাখে। দিনে এমনকি রাতেই একই অবস্থা থাকে। এগুলো নিয়ে কথা বলার মতো কেউ নেই।

স্থানীয় হকাররা জানান, ফুটপাত দখলে নেয়ার জন্য প্রতিদিনই চাঁদা দিতে হয়। চাঁদার টাকা তোলে সরকারী দলের স্থানীয় নেতারা।

ওই টাকা থেকে মোটা অংক যায় ট্রাফিক পুলিশের পকেটে। কামাল নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, বাস গুলোকে যদি নিয়ন্ত্রণ করা যেতো তাহলে এতোটা খারাপ অবস্থা হতো না। তুরাগের বাসগুলো এমন ভাবে রাস্তা দখল করে রাখে যে পথচারীরাও হাঁটতে পারে না।

সিটি পরিবহনের বাসগুলোও শহীদ ফারুক সড়কের সামনে এলোমেলো ভাবে রাখা থাকে। যে কারনে ফ্লাইওভারের নিচে লেন পদ্ধতি কোনো কাজে আসছে না। চার লেনের মধ্যে এক লেন সিটি সার্ভিসের বাস গুলো দখল করে রাখে। পরিবহন শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তার উপর বাস গুলো দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলার জন্য ট্রাফিক পুলিশকে বাড়তি টাকা দিতে হয়। এ জন্য পুলিশ কিছু বলে না। বাস গুলো এলোপাথারী দাঁড়ালে পুলিশেরই লাভ।

তবে ডিউটিরত দুজন ট্রাফিক পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য রাত দিন পরিশ্রম করছি। অনেকেরই অভিযোগ, যাত্রাবাড়ীতে ট্রাফিক পুলিশের বর্তমান ইন্সপেক্টর আসার পর থেকে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। এর আগে যিনি ছিলেন তিনি বাস গুলোকে সুশৃঙ্খল ভাবে রাস্তার এক পাশে দাঁড় করানোসহ চৌরাস্তা এলাকা যানজট মুক্ত রাখার জন্য তৎপর ছিলেন।