• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৯:২১ অপরাহ্ন

সাবীকের ম্যানেজার ইকরামুদ্দৌলার বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৭, ২০২৩, ৩:০৬ অপরাহ্ন / ১৩৯
সাবীকের ম্যানেজার ইকরামুদ্দৌলার বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

মোঃ রাসেল সরকার,ঢাকাঃ সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সম্পত্তি সংরক্ষণ বিভাগের ম্যানেজার ইকরামুদ্দৌলার বিরুদ্ধে ভুয়া ব্যাংক ভাউচার তৈরির মাধ্যমে কর্পোরেশনের ১০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া বিভিন্ন ফাইল জিম্মি করে টেনপার্সেন্ট কমিশন আদায় করার অভিযোগও রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইকরামুদ্দৌলা সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সম্পদ ব্যবস্থাপনা (সম্পত্তি সংরক্ষণ) বিভাগের ম্যানেজার হিসেবে কর্মকালীন সময়ে কর্পোরেশনের উত্তরাস্থ আবাসিক কোয়ার্টারে বসবাসরত কর্মচারীগনের বেতন-ভাতাদি থেকে কর্তনকৃত গ্যাস বিল কর্তনপূর্বক সাড়ে ১০ লাখ টাকা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড এর সংক্ষিপ্ত কোডে জমা প্রদান না করে আত্মসাৎ করেন। তবে তিনি উক্ত টাকা ব্যাংকে জমা দানের ভুয়া রশিদ তৈরি করে কর্পোরেশনের নথিতে হিসাব জমা করেন। একারনে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে তদন্ত পূর্বক সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার অজু করার সুপারিশ করেন।

অভিযোগ পত্রে উল্লেখ রয়েছে, ম্যানেজার ইকরামুদ্দৌলা গ্যাসের বিলের গৃহীত অগ্রিমের ১০,৭৬,৪০০/- (দশ লক্ষন ছিয়াত্তর হাজার চারশত) টাকা ভুয়া বিল-ভাউচার, ব্যাংকের গ্রুল নম্বর, টাকার অংক লেখার ধরন, ক্যাশ অফিসারের স্বাক্ষর ও শাখার (নগদ গ্রহণ) সিল মোহর জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজন করে উক্ত অগ্রিম টাকা সমন্বয় না করে তা সম্পূর্ণরূপে আত্মসাৎ করেন।

জনতা ব্যাংক লিঃ, দিলকুশা কর্পোরেট শাখার পত্রের মাধ্যমে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ৫০টি গ্যাস বিলের মধ্যে ৩৭টি জমা ভাউচারে জনতা ব্যাংকের দৈনন্দিন ব্যবহৃত স্ক্রল নম্বর, টাকার অংক লেখার ধরন, ক্যাশ অফিসারের স্বাক্ষর ও শাখার (নগদ গ্রহণ) সীল মোহর এর সাথে উক্ত ভাউচারসমূহে ব্যবহৃত উপাদানের কোনটারই মিল নাই। এতে নিশ্চিতভাবে আরো প্রমাণিত হয় যে, তিনি এহেন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের দৈনন্দিন ব্যবহৃত স্কুল নম্বর, টাকার অংক লেখার ধরন, ক্যাশ অফিসারের স্বাক্ষর ও শাখার (নগদ গ্রহণ) সীল মোহর জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজন করে ১০,৭৬,৪০০/- (দশ লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার চারশত) টাকা আত্মসাৎ করেন।

গ্যাস বিলের গৃহীত সকল অগ্রিম নিরীক্ষা ব্যতীত সমন্বয় করা হয়েছে। বিল-ভাউচার নিরীক্ষা ব্যতীত আর্থিক বিধি-বিধানের আলোকে সমন্বয়ের কোন সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে অডিট এন্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগ থেকে কোন নিরীক্ষা প্রতিবেদন গ্রহণ করা হয়নি। ফলে সমন্বয়ের জন্য উপস্থাপিত ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে সৃজিত কাগজপত্র ও ব্যাংক সংক্রান্ত কাগজপত্র এবং ব্যাংকের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর অডিট এন্ড কমপ্লায়েন্স বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। বরং তিনি গ্যাস বিল পরিশোধ করা হয়েছে মর্মে
ই- নথিতে ভূয়া প্রত্যয়ণ করেন।

ইকরামুদ্দৌলার এহেন কর্মকান্ডের ফলে জনতা ব্যাংক লিমিটেড এবং তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড এর নিকট সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। এছাড়া উত্তরাস্থ আবাসিক কোয়ার্টারে বসবাসরত সাধীকের কর্মচারীগণের প্রতি মাসের বেতন-ভাতাদি থেকে গ্যাস বিল কর্তন করা হলেও জালিয়াতির কারণে বিলগুলো ব্যাংকে জমা না হওয়ায় এবং গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় আবাসিক কোয়ার্টারে বসবাসরত কর্মচারীগণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

ইকরামুদ্দৌলা করপোরেশনের সম্পদ ব্যবস্থাপনা (সম্পত্তি সংরক্ষণ) বিভাগের ম্যানেজার হিসেবে গূরুত্বপূর্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে এহেন কার্যকলাপ সাবীক কর্মচারী প্রবিধানমালা-১৯৯২ এর ৩৬ (১)(গ) এর লংঙ্ঘন এবং ৩৭ (ক), (খ) ও (চ) বিধি মতে যথাক্রমে ‘দায়িত্ব পালনে অবহেলা’ ‘অসদাচরণ’ ও ‘চুরি, আত্মসাৎ, তহবিল তসরুপ বা প্রতারণা’ এর পর্যায়ভুক্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ম্যানেজার ইকরামুদ্দৌলা মটরপুলে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে গাড়ি মেরামতের নামে ভুয়া বিল সৃজনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। যে কারণে তাকে মটরপুল থেকে বদলি করে সম্পদ সংরক্ষণ বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ বিষয়ে অভিযোগ হওয়ার পরেও তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার আহসান কোন প্রকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বিষয়টি তদন্ত করলে অপরাধ চিহ্নিত হবে বলে আশা করেন কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা।

সূত্রটি আরো জানায়, ইকরামুদ্দৌলা সম্পদ সংরক্ষণ বিভাগে ম্যানেজার পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে এই বিভাগের যত প্রকার টেন্ডার হয় সেসব টেন্ডারের ফাইলপত্র প্রসেসিং এর কাজ করে থাকেন। এ কারণে তিনি বিভিন্ন ঠিকাদারের ফাইল জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে টেন পার্সেন্ট ঘুষ আদায় করেন। ফলে তাকে কর্পোরেশনের ভেতরে মিষ্টার টেন পার্সেন্ট নামে ডাকা হয়। এব্যাপারে ম্যানেজার ইকরামুদ্দৌলা কাছে জানতে চাইলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।