• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০১:০৩ অপরাহ্ন

ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে আবার সংকটের আশঙ্কা


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৮, ২০২২, ৬:২৬ অপরাহ্ন / ৭৮
ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে আবার সংকটের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: আবারও সমস্যায় পড়তে যাচ্ছেন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীরা। এবার গাড়ি চালানোর নিবন্ধন বা ড্রাইভিং লাইসেন্স যে কার্ডে ছাপানো হয় তার মজুদ কমে গেছে। কার্ডের যে মজুদ থাকার কথা তা নেই বলে স্বীকারও করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এর আগে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ১২ লাখ ৪৫ হাজার আবেদন জমা পড়েছিল কার্ড ছাপানোর জটিলতায়। নিয়মিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে সেনাবাহিনী পরিচালিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে দায়িত্ব দেওয়ার পর সেই জট প্রায় কেটেছে। কার্ডের মজুদ কমে যাওয়ায় আবার ভোগান্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্ডসংকটের কথা নিশ্চিত করে বিআরটিএর মিরপুর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, সংকট মোকাবেলায় আবেদনকারীদের লাইসেন্স দেওয়া কমানো হয়েছে। যাঁরা বিদেশে যাবেন বা খুব জরুরি, তাঁদেরই শুধু এখন দেওয়া হচ্ছে। আর ভিআইপি তদবির গুরুত্ব পাচ্ছে। লাইসেন্স কার্ড সরবরাহের দায়িত্বে আছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স। প্রতিষ্ঠানটি নিজেরাই কার্ড ছাপানোর কাজ করে। তবে কার্ড আমদানি করে অন্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। তাদের নিয়মিত আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কার্ড আমদানি করতে না পারায় কার্ডের মজুদ কমে যাচ্ছে। গত বছরের মে থেকে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স লাইসেন্স ছাপানোর কাজ শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ২০২০ সালের ২৯ জুলাই চুক্তি করে বিআরটিএ। চুক্তি অনুযায়ী, পাঁচ বছরে ৪০ লাখ লাইসেন্স কার্ড দেওয়ার কথা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পেশাদার লাইসেন্সের জন্য ৫০ হাজার কার্ড এবং অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য আরো ৫০ হাজার কার্ড মজুদ থাকতে হবে।

এ বিষয়ে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, সংকট বলতে যেভাবে কার্ডের মজুদ থাকার কথা সেভাবে মজুদ নেই। তবে তারা (ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান) বলছে (কার্ড) পাইপলাইনে আছে। কার্ড আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে, এমন কথা এখনো আমার নলেজে আসেনি। কার্ড কিভাবে আনবে এটা ওদের বিষয়।

কার্ডসংকটের কথা স্বীকার করেনি মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স। প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক বিপণন ব্যবস্থাপক পুষ্পরাজ আলফন্সে বলেন, লাইসেন্স ছাপানোর জন্য কার্ডের কোনো সংকট নেই। অনেক কার্ড আসছে তিনি বলেন, আমরা এমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি না যে কার্ডের সংকট পড়বে। আমাদের প্রতিষ্ঠান ও বিআরটিএর নামে কোনো মিথ্যা সংবাদ প্রচার করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

হারানো লাইসেন্স সহজে তোলা যাচ্ছে না: এই পরিস্থিতিতে কারো ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড হারিয়ে গেলে সেটা আর সহজে তোলা যাচ্ছে না। তবে এর পেছনে সফটওয়্যার জটিলতাও আরেকটি কারণ বলে জানিয়েছে বিআরটিএর সূত্র। আগের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি যে সফটওয়্যার এবং বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের সফটওয়্যার স্বাভাবিক কারণেই ভিন্ন। ফলে পুরনো সফটওয়্যার থেকে নতুন সফটওয়্যারে ডাটা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছে।

জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, লাইসেন্স নবায়নে কোনো সমস্যা নেই। নিয়মিত আবেদনেও সব কিছু ঠিক আছে। হারানো কার্ডের ক্ষেত্রে সফটওয়্যারে কিছু জটিলতা আছে। সেটা ঠিক করার কাজ চলছে। আমরা একটা একটা করে সব কিছু ঠিক করছি। দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।

খুলেছে পুরনো জট: লাইসেন্সের জট খুলতে নিয়মিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বাইরে কার্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিকে। গত বছরের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে বিআরটিএ। তখন বলা হয়েছিল, ছয় মাসের মধ্যে আটকে থাকা ১২ লাখ ৪৫ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জট নিরসন হবে। বিআরটিএর সূত্র জানায়, গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড ছাপিয়েছে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি। আরো দেড় লাখ কার্ড ছাপানোর বাকি আছে। কার্ড ছাপানোর গতি বাড়াতে গত মে মাসে জার্মানি থেকে আরো একটি মেশিন আনা হয়েছে। যেসব কার্ড ছাপা হয়েছে তার মধ্যে আরো তিন লাখ কার্ড সরবরাহ করা বাকি আছে। চলতি মাসের মধ্যে জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ছাপা হওয়া কার্ডগুলো সরবরাহ করতে চায় বিআরটিএ।

এ প্রসঙ্গে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, যে কার্ডগুলো ছাপার বাকি আছে সেগুলোর অনেক ধরনের সমস্যা আছে। যেমন কারো এনআইডির (জাতীয় পরিচয়পত্র) নতুন নাম্বার এসেছে। তারা যোগাযোগ করলে নতুন করে লাইন্সে করে দেব। তাদের আবার নতুন করে সব কিছু করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, এই মুহূর্তে পুরনো জমে থাকা আর কোনো কার্ড আটকে নেই।