• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৮:৫৭ অপরাহ্ন

গোপালগঞ্জ কারাগারের বিশ্রামাগারে দর্শনার্থীদের প্রশান্তি


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৭, ২০২২, ১১:০০ অপরাহ্ন / ৭৮
গোপালগঞ্জ কারাগারের বিশ্রামাগারে দর্শনার্থীদের প্রশান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জ জেলা কারাগার। এ কারাগারে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০ জন বন্দী থাকেন। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই কিছু কারাবন্দী জামিনে অথবা সাজা খেটে বের হয়ে আসেন। কারা বন্দীদের সাথে প্রতিদিনই পরিবার পরিজন ও স্বজনরা দেখা করতে আসেন। এখানে এসে দর্শনার্থীরা কারাগারের বিশ্রামাগারে আশ্রয় নেন। বিশ্রমাগারে প্রবেশের সাথে সাথে তাদের প্রশান্তি মেলে। সেখানে তারা স্বাচ্ছন্দে সময় কাটান। তারপর বন্দীদের সাথে দেখা করে কারাগারের বিশ্রামাগার ত্যাগ করেন দর্শনার্থীরা।

গোপালগঞ্জে জেলা কারাগারের জেলার মোঃ মোশফিকুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের দর্শনার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে একটি বিশ্রামাগার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি জেলা পরিষদের সহায়তায় ৩ লাথ টাকা ব্যয়ে একটি দর্শনার্থী সেড নির্মাণ করেন। এখানে ফ্যান, বসার জায়গা ও ব্রেস্টফিডিং কর্ণার রাখা হয়েছে। বিগত ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই জেলা কারাগারের দর্শণার্থী বিশ্রামগারের উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধূরী এমদাদুল হক। প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন দর্শণার্থী কারাবন্দীদের সাথে দেখা করেত গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে আসেন। এখানে আসার পর দর্শনার্থীরা বিশ্রামাগারে বিশ্রাম নেন। বিশ্রামাগারের মনোরম পরিবেশ তাদের প্রশান্তি দিচ্ছে। এছাড়া ব্রেস্টফিডিং কর্ণার মা ও দুধের শিশুদের বেশ কাজে আসছে। এখানে দর্শনার্থী বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে বিশ্রামগারটি দর্শনার্থীদের প্রিয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের সুপার মোঃ ওবায়দুর রহমান বলেন, কারাগার এখন কারেকশন সেন্টার। তাই এখানে কারাবন্দীরা স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন করেন। তাদের জন্য এখানে অনুক’ল পরিবেশ রয়েছে। তাই বন্দীদের সাথে সাক্ষাৎপ্রার্থী দর্শণার্থীদের সুবিধার জন্য গোপালগঞ্জে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বিশ্রামাগার করে দিয়েছেন। এখান থেকে প্রতিদিন দর্শণার্থীরা সুবিধা পাচ্ছেন।

ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার বর্ণিরচর গ্রামের ইবাদত (৫২) বলেন, এখানে আমার এক স্বজন বন্দী রয়েছেন। আমি তার সাথে দেখা করতে এসেছি। আগে এ কারাগারে দর্শনার্থী বিশ্রামগার ছিল না। তাই বন্দীদের সাথে সাক্ষাৎ করতে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে হত। ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে অনেক কষ্ট হত। এতে দুর্ভোগের কোন শেষ ছিল না। এখন বিশ্রামগার হয়েছে। এখন এখানে বিশ্রাম নিতে পারি। বিশ্রামগারে প্রয়োজনীয় ফ্যান ও বসার জায়গা রয়েছে। বিশ্রামাগারে দক্ষিণে জানালা-দরজা রাখা হয়েছে। তাই এথানে বসে দক্ষিণা বাতাসও পাওয়া যায়। এ কারণে এখানে অপেক্ষা করার সময় প্রশান্তি মেলে। এছাড়া জেলা কারাগারে নিয়ম শৃংখলা বেশ ভালো। তাই সহজেই বন্দীদের সাথে দেখা করা যায়।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সদরের পাঁকাহনিয়া গ্রামের মহরুন্নেছা (৩৫) বলেন, আমার ভাই কারাগারে বন্দী। তার সাথে দেখা করতে এসেছি। কারাগার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ১ ঘন্টাপর দেখা করা যাবে। তাই বিশ্রমাগারে বসে সময় কাটাচ্ছি। এখানে মনোরম পরিবেশে ভালো সময় কাটছে। বিশ্রামাগারটি খুবই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। এখানে পর্যাপ্ত বাতাস আছে।
গোপালগঞ্জর কাশিয়ানী উপজেলার সাতাশিয়া গ্রামের সুরত আলী (৫৫) বলেন,কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া স্বজনকে স্বাগত জানাতে এসেছিলাম। বিকেল সড়ে ৪ টার দিকে আমি কারাগার পৌঁছাই । তারপর কারাগার বিশ্রামাগারে অবস্থান করতে থাকি। কারাগারের বিশ্রামগারটি খুবই সুন্দর। সন্ধ্যার দিকে আমরা স্বজন মুক্তি পায়।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাতপাড় গ্রামের বিশ্বজিৎ বিশ্বাস (৩৬) বলেন, আমি এক স্বজনের সাথে দেখা করতে কারাগারে এসেছিলাম। বিশ্রমাগারে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর তার সাথে আমি সাক্ষাৎ করেছি। কারাগারে আমরা স্বজন ভালো আছে বলে আমাকে জানিয়েছে। চ্ছেন। তার মুখের কথা শুনে আমার মনে শান্তি লাগছে।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গিমাডাঙ্গা গ্রামের সুমনা খানম (২০) বলেন, ৫ মাস বয়সের বাচ্চা নিয়ে স্বামী তোফায়েল খানের সাথে দেখা করতে কারাগারে এসেছিলাম। এখানে আসার পর বাচ্চা ক্ষুধায় বিরক্ত করছিল। পরে বিশ্রামাগারের ব্রেস্টফিডিং কর্ণারে গিয়ে বাচ্চার ক্ষুধা নিবারণ করেছি। ব্রেস্টফিডিং কর্ণার একটি অসাধারণ উদ্যোগ।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, কারাগারে এসে দর্শণার্থীদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। তাই তাদের বাসার জন্য বিশ্রামাগার করে দিয়েছি। এতে তাদের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। রাখা হয়েছে ব্রেস্টফিডিং কর্ণার । বিশ্রামাগারে মা, শিশুসহ সকল বয়সের মানুষের জন্য সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।