• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৯ অপরাহ্ন

সাভারের আশুলিয়ায় কুকুরের কাচ্চি বিরিয়ানি : গ্রেফতার হোটেল মালিক


প্রকাশের সময় : মে ১৬, ২০২২, ৮:৩৯ অপরাহ্ন / ৩২৯
সাভারের আশুলিয়ায় কুকুরের কাচ্চি বিরিয়ানি : গ্রেফতার হোটেল মালিক

বিশেষ প্রতিনিধিঃ সাভারের আশুলিয়ার একটি বিরিয়ানি হোটেলে কুকুরের মাংস দিয়ে কাচ্চি বিরিয়ানি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগে বিরিয়ানি হাউসের মালিক রাজীবকে গ্ৰেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই বিরিয়ানি হাউজের মাংস এবং হাড্ডি জব্দ করে পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। তবে এই ঘটনাকে ষড়ষন্ত্র বলছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেল মালিক রাজীবের অন্যতম সহযোগী বিল্লাল হোসেন পলাতক রয়েছে। রাজীব বরিশাল জেলার মুলাদি থানার নুনচর গ্রামের চুন্নু হাওলাদারের ছেলে। আশুলিয়ার বিভিন্নস্থানে ‘আল্লাহর দান’ নামে তার ৭টি বিরিয়ানি দোকানের শাখা রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তুলনামূলক কম দামে খাসির কাচ্চি ও বিরিয়ানি বিক্রি করে আসছিলেন রাজীব। এ কারণে তার ব্যবসাও ছিল জমজমাট।

আলমগীর হোসেন নামের এক ক্রেতা জানান, তিনি নিয়মিত কাচ্চি খান। রোববার দুপুরে ওই দোকানে কাচ্চির মাংস মুখে দিতেই তার সন্দেহ হয়। কিসের মাংস তা জিজ্ঞেস করতেই খাসি বলে জানানো হয়। সন্দেহ দানা বাঁধতেই খাবার শেষ না করেই ১৮০ টাকা দিয়ে চলে যান।

রাজীব ও তার সহকারী বিল্লাল কুকুরের মাংস সংগ্রহ করে তা খাসি বলে চালিয়ে বিক্রি করছেন এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে রোববার রাতে। বিষয়টির সত্যতা নিরপনে তথ্য সংগ্রহে রাত ১২টার দিকে আশুলিয়ার নারসিংহপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আল্লাহর দান ৫ নামের দোকানে যান গণমাধ্যমকর্মীরা। এ সময় বিরিয়ানির দোকানের মালিকের রাজীবের অন্যতম সহকারী ও চাচাতো ভাই বিল্লাল বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সাংবাদিকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়েছে বলেও জানা গেছে।

এক পর্যায়ে গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলাও চালানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিরিয়ানি হাউজের মালিক রাজীবকে গ্ৰেফতার করে। ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে একজন ভোক্তা রুপালী বেগম জানান, রবিবার দুপুরে ছেলের জন্য এই দোকান থেকে কাচ্চি বিরিয়ানি কিনে বাসায় নেন তিনি। বিরিয়ানি ভালো না বলে ছেলে খেতে পারছিল না। এরপর তিনি দেখেন মাংসের হাড় খুব চিকন। তার সন্দেহ হলে পরে তাদের দোকানে যান। তিনি জানতে চেয়েছেন এটা কি গরু নাকি খাসির মাংস। তারা বলেন, গরুর মাংস দিয়ে কাচ্চি রান্না করেন। এরপর তিনি চলে আাসেন।

আল্লাহর দান বিরিয়ানি হাউজ দোকানের একটি শাখার মালিক সায়েদ হোসেন বিল্লাল বলেন, অন্য কিছুর মাংস বলে কিছু মানুষ চক্রান্ত করে আমাদের ফাঁসিয়েছে। শাখা-৫ দোকানটি এক বছর হলো। এখানে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। আশুলিয়ায় আমাদের সাতটি শাখা। এমনকি আমরা ভারতের কোনো মাংসও আনি না। কাঠগড়া বাজারে আলিম কসাইয়ের কাছ থেকে গরুর মাংস কিনি। কোনোদিন কোনো ধরনের অভিযোগ পাইনি। আমরা বলেছি, ল্যাবে পরীক্ষা করে যদি অন্য কিছু পাওয়া যায়, যে শাস্তি দিবেন আমরা তাই মাথা পেতে নেব। কিন্তু কিছু উৎসুক মানুষ ও স্থানীয় কিছু সাংবাদিক এই কাজ করেছে। অনেক অনুরোধ করেছি। মিটমাটের জন্য টাকা দাবি করে তারা। না দিলে তারা পুলিশ এনে দোকানের মালিক রাজীবকে আটক করতে বাধ্য করে।

এদিকে কাঠগড়া বাজারের আলিম কসাই জানিয়েছেন, প্রায় ১২ বছর ধরে আল্লাহর দান বিরিয়ানি হাউজে তিনি মাংস বিক্রি করেন। এখন তারা প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ কেজি গরুর মাংস কিনে। একদিন মিস গেলে দুই দিনের মাংস একদিনে নিয়ে যায়। ফ্রিজে রাখে।

তিনি জানান, গরু জবাইয়ের ক্ষেত্রে তাদের বাজার কমিটি প্রতিদিন যাচাই-বাছাই করে এখানে। অন্য কিছু করার কোনো সুযোগ নেই বলে তিনি মনে করেন।

ওষুধ দোকানি শরীফুল বলেন, রুপালী বেগম এসেছিলেন। কুকুরের মাংস কিনা এ নিয়ে সন্দেহ করে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা কিভাবে করা যায় আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন। বলেছি, আমার জানা নেই। তখন দোকানে আরো দুই-তিনজন লোক ছিলেন। তারা শুনেছেন।

আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুব্রত রায় বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্তকে গ্ৰেফতার করা হয়েছে। আলামত হিসেবে বিরিয়ানির দোকানের মাংস ও হাড্ডি জব্দ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। খাসি বলে কুকুরের মাংস বিক্রির ঘটনা জানাজানি হওয়ার ওই বিরিয়ানির দোকানের সকল শাখা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।