• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪১ অপরাহ্ন

শরীয়তপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ভূমি দখল :  বেপরোয়া দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ আলী হোসেন


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৫, ২০২১, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন / ৪৯২
শরীয়তপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ভূমি দখল :  বেপরোয়া দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ আলী হোসেন

বিশেষ প্রতিনিধি: শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার কাজির হাট এলাকায় দক্ষিণ ডুবলদিয়ায় আব্দুর রাজ্জাক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আলী হোসেন এর বিরুদ্ধে ভূমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ বছর যাবত তিনি অন্যের ভূমি দখল করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘর তুলে প্রতিষ্ঠান চালিয়ে আসছেন। এ নিয়ে ভুক্তভোগী আদালতের দারস্ত হয়ে দুটি মামলা করেন এবং দুটি মামলারই রায় পান জমির মালিক মুনছের আলী মৃধা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, স্কুল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জাজিরা উপজেলার দক্ষিণ ডুবলদিয়া গ্রামের মৃত ধলাই মৃধার ছেলে মুনছের আলী মৃধার পৈতৃক ভূমি দখল করে সেখানে স্কুলের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে অধ্যক্ষ আলী হোসেন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী মুনছের আলী মৃধা বলেন- স্কুল প্রতিষ্ঠা করার সময় আমাকে অধ্যক্ষ আলী হোসেন সাহেবসহ স্থানীয় কয়েকজন আমার নিকট কিছু জমি চাইলো এবং আমাকে স্কুলের দাতা সদস্য হিসেবে রাখবেন বললে আমি স্কুলের নামে ১২ শতাংশ জমি লিখে দেই। জমি নেওয়ার পর আমার সাথে প্রতারণা করেছে অধ্যক্ষ আলী হোসেন। তিনি আমাকে দাতা সদস্য করেনি। ক্রমান্বয়ে আলী হোসেন মাস্টার আমার আরও প্রায় ৩০ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে সেখানে ঘর তুলে ক্লাশ পরিচালনা করেন। আমি বার বার ঘর সরাতে বললেও তিনি না সরিয়ে আমাকে জীবনে মেরে ফেলবে বলেন এবং আমার বাড়ীঘর সব স্কুলের নামে দখল করবে বলে হুমকি দেয়। আমি নিরুপায় হয়ে আদালতে এর বিরুদ্ধে দেওয়ানী মামলা করলে আমি দুই মামলায়ই রায় পাই। এখন আবার নতুন করে বিল্ডিং করার জন্য আমার বসতভিটা দখল করতে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছেন আলী হোসেন মাস্টার। আমি প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন জানাই, আমার পৈত্রিক ভূমি আমাকে ফেরত দিয়ে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দাতা সদস্য হিসেবে রাখেন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীর স্ত্রী বলেন- আমাদের বাড়ীর জমির মধ্যে এই স্কুল ঘরটি বানিয়েছে। ওরা প্রথমে কয়েকদিন পর সরিয়ে নিবে বলে এখন পর্যন্ত সরায়নি। আলী হোসেন মাস্টারের জাজিরার বাড়ী দাম ১ কোটি টাকা। ওনি কি কাউরে এরকম দিবে? আমরা বা”চাদের ভবিষ্যত চিন্তা করে এবং এলাকার উন্নয়নের জন্য ১২ শতাংশ জমি স্কুলকে দিয়েছি। কিš‘ ওনারা আরও প্রায় ৩ গুন জমি দখল করে আমাদের বাড়ীর মধ্যে ঢুকেছে। আমরা আমাদের জমি ফেরত চাই। আমরা আইনে গেছি। আইনে আমরা জিতেছি। তার পরও আলী হোসেন মাস্টার আমাদের জমি ছাড়ছে না। আমরা স্কুলে যা জমি দেয়ার তা দিয়েছি এর বাইরে এক শতাংশ জমিও দিব না। আমাদের জমি আমাদের ফেরত দিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে মুনছের আলীর পূত্র রুবেল হোসেন বলেন- আলী হোসেন মাস্টার জোর করে আমাদের নিজস্ব জমিতে স্কুল নির্মান করেছে। আমরা ওই সময় সপরিবারে একটি দাওয়াত খাইতে গিয়েছিলাম। এসে দেখি আমাদের জমিতে আলী হোসেন মাস্টার লোকজন নিয়ে ভিটি তৈরি করতেছে। আমরা বাধা দিলে আমাদের বাধা অতিক্রম করে তিনি ঘরদুয়ার তুলেন। ওই সময় আমার বাবাকে মারার জন্য আলী হোসেন মাস্টার নিজে মাটি কাটা কোদাল দিয়ে মাথার উপর বারি দিতে গেলে বাবা দৌড়ে পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন। আমরা বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন প্রতিকার পাই নি। বিষয়টি এলাকার সবাই জানেন। আমরা নিরুপায় আমাদের জমি আমাদের ফেরত চাই। ওনারা যে কোন সময় আমাদের বাড়ীঘর থেকে বিতারিত করে পুরো দখলে নেয়ার জন্য বিভিন্ন হুমকি ধমকি দি”েছ।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী জানান- মুনছের আলীকে নরম মানুষ পেয়ে কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ আলী হোসেন মাস্টার ওই সময় জবরদস্তি করে এবং কৌশলে কিছু জমি লিখে নিয়ে স্কুল নির্মাণ করেছে। এটা সম্পূর্ণই অন্যায়। আমরা জানতাম মুনছের আলীকে দাতা সদস্য হিসেবে রাখা হবে। কিš‘ প্রতারক আলী হোসেন মাস্টার তাকে দাতা সদস্য রাখেননি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি অন্যের জমি দখল করে তৈরী হয় তাহলে সেখানে তো আল্লাহর গজব ছাড়া আর কিছু থাকবে না। ছেলে মেয়েরা মানুষ হতে আল্লাহর রহমত লাগে।
তারা আরও বলেন-আলী হোসেন মাস্টার অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় ওনার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলে না। ভালোভাবে তদন্ত করলে এই স্কুল থেকে কি পরিমান টাকা তিনি লুট করেছেন তা বেড়িয়ে আসবে। স্কুলটি কলেজ হওয়ায় তিনি অবৈধভাবে প্রধান শিক্ষক থেকে এখন অধ্যক্ষ। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।
এ ব্যাপারে আব্দুর রাজ্জাক স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি মোশাররফ হোসেন আকন বলেন- আমি গভর্নিং বডির সভাপতি হওয়ার পর একটি মিটিংও করতে পারেনি। আমি নতুন। করোনা আসার পর থেকেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। আমি মুনছের মৃধার ছেলেকে বলেছি মাপ যোগ দিয়ে দেখবো। যদি ওদের মধ্যে স্কুলের জায়গা পরে তাহলে এর একটা ব্যব¯’া করবো, কিš‘ তার ছেলে আর যোগাযোগ করেনি।
এ ব্যাপারে প্রতষ্ঠিানের অধ্যক্ষ আলী হোসেন বলেন, আমরা ওনার জমি দখল করি নাই বরং উনিই আমাদের প্রতিষ্ঠানের জমি দখল করে আছে।