খোরশেদ আলমঃ দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল চেকপোষ্টে অবৈধভাবে চলছে মদের রমরমা ব্যবসা। প্রশাসনের নাকের ডগায় এ কাজটি করে আসছে স্থানীয় কিছু মাদক পাচারকারী ও চোরাকারবারীরা। গোপণ ভিডিও প্রকাশের পরপরই বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ভ্রমণেচ্ছু পাসপোর্ট যাত্রীদের জন্য দেশী-বিদেশী মদ, সিগারেট, পারফিউম, কসমেটিক এবং দৈনন্দিন ব্যবহৃত নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর চাহিদা পূরণে বেনাপোল চেকপোষ্ট অভ্যন্তরে সরকার অনুমোদিত "ডিউট ফ্রী সপ" নামের কয়েকটি দোকান খোলা হয়েছে। যে কোন বৈধ পাসপোর্ট যাত্রী বিদেশ গমনের সময় বা বিদেশী পাসপোর্ট যাত্রী বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ভ্রমণ কালে তাদের ভ্রমণ সম্পর্কিত যাবতীয় দলিলাদী (বৈধ পাসপোর্ট, ভ্রমণ করের রশিদ সহ অন্যান্য কাগজ পত্রাদী) উপস্থাপন করে "ডিউটি ফ্রী সপ"থেকে যে কোন পণ্য ক্রয় করতে পারেন।
কিন্তু পাসপোর্ট যাত্রীদের কিছুটা অজানা'র কারণে পণ্যগুলি সঠিক প্রকৃতস্তে হস্তান্তর হচ্ছে না বা বৈধ পাসপোর্ট যাত্রীরা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ প্রতিদিন একটি দালাল চক্র যাত্রীর পাসপোর্ট এবং বৈধ কাগজপত্র দেখিয়ে "ডিউটি ফ্রী সপ" থেকে মদ,সিগারেট সহ অন্যান্য সামগ্রী ক্রয় করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্থানীয় বাজারে এবং মাদক পাচারকারীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় পাঠানো হচ্ছে। এতে করে বাজারে দেশীয় পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে ধ্বস নেমেছে তেমনী অবৈধভাবে প্রবেশ করানো এ সকল আকর্ষণীয় চমকপ্রদ মদ এবং সিগারেট দেশের যুব সমাজকে ঠেলে দিচ্ছে নেশায় অভ্যস্থ করতে।
প্রশ্ন উঠেছে, বেনাপোল চেকপোষ্টে অবস্থিত উচু প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত ইমিগ্রেশন এবং কাষ্টমস কার্যালয় নির্মানীত এবং পাসপোর্ট বিহীন সাধারণের প্রবেশ যেখানে নিষিদ্ধ, সেখানে কিভাবে ঐ দালাল চক্র কাস্টমস অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং "ডিউটি ফ্রী সপ"এ কাদের পাসপোর্ট শো করে তারা? ভিডিও ধারণে দেখা গেছে ঐ সকল দালাল চক্রের সদস্যরা সকলের সামনেই মদের বোতল হাতে নিয়ে কাষ্টমস অভ্যন্তরের প্রাচীর টপকিয়ে দ্রুত বাহিরে পালিয়ে যাচ্ছে, অথচ কয়েক হাত দুরেই আনসার ব্যাটেলিয়নের কড়া প্রহরা রয়েছে, এছাড়াও কাস্টমসে সর্বক্ষণ ইমিগ্রেশন পুলিশ, এনএসআই, ডিজিএফআই, কাস্টমস গোয়েন্দা সহ কাস্টমসের পুরো এরিয়াটা সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণাধীন। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে তবে কি প্রশাসনের কিছু অসাধু সদস্যদের ম্যানেজ করে চোরাচালানকারীরা কাষ্টমস অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে?
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে জানা যায়, চেকপোষ্ট সংলগ্ন বড় আঁচড়া গ্রামের ওবায়দুর এই মদ পাচারকারীর একজন মূলহোতা। তার সক্রীয় সদস্য সংখ্যা অগনিত, এরা সকলেই ভয়ংকর প্রকৃতীর। এমনকি গোপন ভিডিও ধারণের সময় বুঝতে পেরে ঘটনাস্থলেই তারা সাংবাদিককে হুমকি দেয়। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী নচেৎ ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশ ধ্বংস হবে যুব সমাজ।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি বলেন, শুধু ওবায়দুর না এ ব্যবসায় আরো আছে কাগজপুকুর গ্রামের আনিছুর, নেত্রীর ছেলে পরিচয় দানকারী লেবার মামুন সহ অনেকেই। মামুন বন্দরের একজন লেবার হওয়া সত্তেও চড়েন নিজস্ব প্রাইভেটে, আছে দামী মটরসাইকেল। তারা আরো বলেন শুধু মদ নয় এখানে ইমিগ্রেশন পুলিশের যোগসাজশে চলে জাল করোনা সার্টিফিকেটের সব থেকে বড় ব্যবসা।
এবিষয়ে ইমিগ্রেশন ওসিকে একাধিক বার কল দিলেও তিনি ফোনটা রিসিভ করেননি।
এবিষয়ে বেনাপোল বন্দরের ডেপুটি ডাইরেক্টর (ট্রাফিক) মামুন তরফদার সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে, আজ দুইদিন আমরা এই বিষয়টি কড়া নজর দারিতে রাখবো। এরপর এদের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
মদ ব্যবসায়ী মামুন ও আনিছুরকে কল দিলে ২জনের মধ্যে একজন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়েই ফোনটা কেটে দেয়। অন্যজন ফোন রিসিভ করেননি।